চাঁপাইনবাবগঞ্জের সেই দূর্ণীতিবাজ ও জালিয়াত সুপার হাবিবুরের বিরুদ্ধে পুনঃতদন্ত


চাঁপাইনবাবগঞ্জ প্রতিনিধি: দূর্ণীতি, স্বেচ্ছাচারীতা, জালিয়াতি, অর্থ আত্মসাৎসহ নানা অনিয়মের অভিযোগে অভিযুক্ত চাঁপাইনবাবগঞ্জ জেলার শিবগঞ্জ উপজেলার গোঁসাইবাড়ী দাখিল মাদ্রাসার প্রাক্তন সুপার ও বর্তমানে গোমস্তাপুর সিনিয়র আলিম মাদ্রাসার অধ্যক্ষ মাওলানা মো. হাবিবুর রহমানের বিরুদ্ধে পুনঃতদন্ত শুরু হয়েছে।
মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা আঞ্চলিক অফিস রাজশাহী’র উপ-পরিচালক (ভারপ্রাপ্ত) ড. শরমিন ফেরদৌস চৌধুরী স্বাক্ষরিত ১ ডিসেম্বরের এক চিঠি সুত্রে বিষয়টি নিশ্চিত হওয়া গেছে।
দূর্ণীতি, স্বেচ্ছাচারীতা, জালিয়াতি, অর্থ আত্মসাৎসহ নানা অনিয়মের অভিযোগে চাঁপাইনবাবগঞ্জ জেলার শিবগঞ্জ উপজেলার গোঁসাইবাড়ী দাখিল মাদ্রাসার প্রাক্তন সুপার মাওলানা মো. হাবিবুর রহমানের অপকর্মের প্রতিবেদন প্রকাশিত হয় স্থানীয় দৈনিক ‘দৈনিক চাঁপাই দর্পণ’সহ বিভিন্ন গণমাধ্যমে।
বিষয়টি জেলা প্রশাসন ও শিক্ষা দপ্তরের উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের নজরে আসলে জেলা প্রশাসন ও মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা আঞ্চলিক অফিস রাজশাহী অনিয়ম ও দূর্ণীতি, স্বেচ্ছাচারিতা, অর্থ লুটপাট, জমি বিক্রিসহ সকল বিষয়ে তদন্ত পূর্বক প্রতিবেদন দাখিলের নির্দেশ দেয়া হয় চাঁপাইনবাবগঞ্জ জেলা শিক্ষা অফিসারকে।
পরবর্তীতে জেলা শিক্ষা অফিসার মোহাম্মদ সাইফুল মালেক একটি তদন্ত প্রতিবেদন জমা দেন। অজ্ঞাত কারণে বা সুবিধাভোগ করে মনগড়া এবং দূর্ণীতিবাজ ও জালিয়াত মো. হাবিবুর রহমানের পক্ষে প্রতিবেদনে উল্লেখ করা, মাদ্রাসার সকল অনিয়ম, জালিয়াতি, আর্থিক হিসাব-নিকাস বুঝিয়ে না দিয়ে অন্য প্রতিষ্ঠানে নিয়োগ এবং বিতর্কিত এই সুপারকে বর্তমানে গোমস্তাপুর সিনিয়র আলিম মাদ্রাসার অধ্যক্ষ হিসেবে বেতন-ভাতাদি চালু করার জন্য সকল সহযোগিতা করায় মাদ্রাসার হিতাকাঙ্খি সাবেক অভিভাবক সদস্য অভিযোগকারী মো. গোলাম মোস্তফা পুনঃতদন্তের জন্য আবেদন করেন ২৪/০৬/২০২০ইং তারিখে মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা আঞ্চলিক অফিস রাজশাহীতে।
প্রেক্ষিতে মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা আঞ্চলিক অফিস রাজশাহী’র উপ-পরিচালক (ভারপ্রাপ্ত) ড. শরমিন ফেরদৌস চৌধুরী পুনঃতদন্তের আদেশ দিয়েছেন। এবার পুনঃতদন্তের দায়িত্ব দিয়েছেন হরিমোহন সরকারী উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষককে।
উল্লেখ্য, ২০১৯ সালের ২২ অক্টোবর, একই সালের ৯ নভেম্বর ও ১লা ডিসেম্বর স্থানীয় দৈনিক পত্রিকা ‘দৈনিক চাঁপাই দর্পণ’ পত্রিকাসহ বিভিন্ন সংবাদ মাধ্যমে চাঁপাইনবাবগঞ্জ জেলার শিবগঞ্জ উপজেলার গোঁসাইবাড়ী দাখিল মাদ্রাসার (প্রাক্তন) সুপার মাওলানা মো. হাবিবুর রহমানের দূর্ণীতি, স্বেচ্ছাচারীতা, জালিয়াতি, অর্থ আত্মসাৎসহ নানা অনিয়মের প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়।
প্রতিবেদনে উঠে আসে, চাঁপাইনবাবগঞ্জ জেলার শিবগঞ্জ উপজেলার গোঁসাইবাড়ী দাখিল মাদ্রাসায় পরিচালনা পর্ষদের প্রত্যক্ষ সহায়তায় মাদ্রাসার সুপার মাওলানা মো. হাবিবুর রহমান, সহ-সুপার আব্দুল মতিন ও সহকারী শিক্ষক মজিবুর রহমানের বিরুদ্ধে দূর্ণীতি, স্বেচ্ছাচারীতা, অর্থ আত্মসাৎসহ নানা অনিয়মের অভিযোগ হয়েছে।
গত ১৩ অক্টোবর/২০১৯ চাঁপাইনবাবগঞ্জ জেলা প্রশাসক ও গত ১৫ অক্টোবর/২০১৯ দূর্ণীতি দমন কমিশন (দুদক) চেয়ারম্যানের কাছে অভিযোগ দায়ের করেছেন সংশ্লিষ্ট মাদ্রাসার জমি দাতা এলাকার পোলাডাঙ্গা গ্রামের মৃত আব্দুল বারির ছেলে মো. সেরাজুল ইসলাম। গোঁসাইবাড়ী গ্রামের অবসরপ্রাপ্ত শিক্ষক মাদ্রাসার স্থাপিত উদ্যোক্তা ও সাবেক বিদ্যোৎসাহী হাজী এসারুদ্দিনের ছেলে মো. মাহাতাবউদ্দিন এবং একই এলাকার সন্তান ও মাদ্রাসার সাবেক অভিভাবক সদস্য মৃত সোলেমান মন্ডলের ছেলে মো. গোলাম মোস্তফা।
লিখিত অভিযোগে বলা হয়, এলাকার মানুষের জমি, অর্থ, পরামর্শে জেলার শিবগঞ্জ উপজেলার ধাইনগর ইউনিয়নের গোঁসাইবাড়ী মহল্লায় ‘গোঁসাইবাড়ী দাখিল মাদ্রাসা প্রতিষ্ঠিত হয়।
এলাকার মানুষের কষ্টার্জিত প্রতিষ্ঠানে বর্তমানে চলছে নানা অনিয়ম, দূর্ণীতি, স্বেচ্ছাচারিতা, ঘুষ লেনদেন, জমি বিক্রি, প্রতিষ্ঠানের আর্থিক কোন হিসাব-নিকাস না থাকা, এলাকার মানুষের মতামতের কোন মূল্য না দেয়া, বর্তমান পরিচালনা পর্ষদের সভাপতি ঢাকায় অবস্থান করে প্রতিষ্ঠান চালানো, প্রতিষ্ঠানের প্রতি গুরুত্ব বা দায়িত্ব পালন না করে সভাপতির প্রতিষ্ঠানের সুপারের সকল অবৈধ কাজে সহযোগিতা করা, নিয়ম বহির্ভূতভাবে কমিটি গঠন, প্রতিষ্ঠানে কোন মিটিং এ উপস্থিত না থেকে ঢাকায় বসে প্রতিষ্ঠানের রেজুলেশনসহ সকল কাগজপত্রে স্বাক্ষর করা, মাদ্রাসার সুপার মাওলানা মো. হাবিবুর রহমান, সহ-সুপার আব্দুল মতিন ও সহকারী শিক্ষক মজিবুর রহমান এবং পরিচালনা পর্ষদের ক’জন সদস্যকে নিয়ে নিয়োগ বানিজ্য, ৩ জন শিক্ষক নিয়োগ দিয়ে ২০ লক্ষ টাকা ঘুষ নেয়া, এসব কাজের প্রতিবাদে তৎকালিন পরিচালনা পর্ষদের বিদ্যোৎসাহী সদস্য মাহাতাব উদ্দিনের স্বাক্ষর না করা, প্রতিবাদ করায় এক শিক্ষককে হয়রানী ও নির্যাতন করে নাটক সাজিয়ে একই মাদ্রাসার সহকারী শিক্ষক সাইফুল ইসলামকে ১৫ হাজার টাকা জরিমানা করে চেকের মাধ্যমে সুপারের নামে টাকা উত্তোলন, কোন অনুমোদন ছাড়াই মেডিকেলসহ নানা অযুহাতে মাসের পর মাস ছুটি কাটানো, মাদ্রাসায় সময় না দেয়ায় শিক্ষা কার্যক্রম একেবারেই ভেঙ্গে পড়া, প্রতিষ্ঠান প্রধান প্রতিষ্ঠানে না থাকা, অনিয়ম ও দূর্ণীতির সাথে জড়িত থাকায় অনান্য শিক্ষক-কর্মচারীদেরও সঠিকভাবে দায়িত্ব পালন না করা, কোন জবাবদিহিতা না থাকা, এলাকার শিক্ষানুরাগীদের অসম্মান করাসহ পাহাড় পরিমান অভিযোগ উঠে।
সংবাদ প্রেরক বিটিসি নিউজ এর চাঁপাইনবাবগঞ্জ প্রতিনিধি মো: আশরাফুল ইসলাম রঞ্জু। #

Comments are closed, but trackbacks and pingbacks are open.