চলনবিলে সরিষা ফুলের মধু সংগ্রহে অপার সম্ভাবনা

নাটোর প্রতিনিধি: দেশের বৃহত্তম বিল চলনবিল। দেশের উত্তর জনপদের এক সেরা প্রাকৃতিক সম্পদ এটি। বিলটি নাটোর, পাবনা ও সিরাজগঞ্জের এলাকাজুড়ে বিস্তীর্ণ। চলনবিলের বুকজুড়ে রবি মৌসুমে চাষ হচ্ছে হাজার হাজার বিঘা জমিতে সরিষা। সেই সরিষা ফুল থেকে আহরিত হচ্ছে অনন্য সম্পদ মধু। চলনবিলে সরিষা ফুলের মধু সংগ্রহে অপার সম্ভাবনা সৃষ্টি হয়েছে।

চলনবিল এখন হলুদ রঙে মাতোয়ারা। যত দূর চোখ যায় হলুদ আর হলুদ। দেখলেই মন ভরে যায়। আর হলুদ ফুলে সুশোভিত মাঠে পাখা মেলেছে মৌমাছি-ভ্রমর। তাদের গুঞ্জনে কৃষকের মনও আনন্দিত। চলনবিলের সরিষা ফুলকে কেন্দ্র করে প্রতি বছরের মতো এবারও দেশের বিভিন্ন এলাকা থেকে মধু সংগ্রহের জন্য এসেছেন মধুচাষিরা। তারা মধু সংগ্রহের মহোৎসবে মেতে উঠেছে। মৌমাছির বাক্স স্থাপন করে ব্যস্ত সময় পার করছেন তারা।
কৃষি বিভাগ বলছে, সরিষা ক্ষেতে মধু উৎপাদন যত বেশি হবে মৌমাছির দ্বারা ফুলে ফুলে পরাগায়ন তত বেশি ঘটবে। ফলে সরিষার উৎপাদনও বাড়বে।
সরেজমিনে দেখা যায় চলনবিলের তাড়াশ, চাটমোহর, গুরুদাসপুর, বড়াইগ্রাম, সিংড়া উপজেলার ডাহিয়া, চামারী, হাতিয়ান্দহ, লালোর, শেরকোল, চৌগ্রাম ও পৌরসভার মাঠজুড়ে শুধু হলুদ আর হলুদ। এসব জমিতে বাক্স বসিয়ে কৃষকরা মধু সংগ্রহে ব্যস্ত সময় পার করছে।
সিংড়া উপজেলা কৃষি সম্প্রসারণ অফিস সূত্রে জানা যায়, এ উপজেলায় চলতি মৌসুমে ৪ হাজার ২৫০ হেক্টর জমিতে সরিষার চাষ করা হয়েছে। সরিষা থেকে মধু উৎপাদন করে বাড়তি আয় হওয়ায় কৃষকদের মাঝে মধু চাষে আগ্রহ বাড়ছে।
গুরুদাসপুর উপজেলা কৃষি সম্প্রসারণ অফিস জানায়, এ বছর গুরুদাসপুর উপজেলায় ১ হাজার ১১৫ হেক্টর জমিতে সরিষার চাষ হয়েছে। এদিকে সরিষা মাঠ সংলগ্ন ৩৫০ হেক্টর জমির পাশে প্রাকৃতিকভাবে উৎপাদন হচ্ছে মধু। ৬৮০টি মৌবাক্স বসিয়েছেন মৌয়ালরা। মৌসুম শেষে এসব বাক্স থেকে উৎপাদিত মধুর লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে ৬ হাজার ৩৭৫ মেট্রিক টন।
তাড়াশ উপজেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের মতে, উপজেলায় চলতি মৌসুমে ১১ হাজার ৮০৫ হেক্টর জমিতে বিভিন্ন জাতের সরিষা চাষ হয়েছে। বাক্স পদ্ধতি ব্যবহার করে বাণিজ্যিকভাবে সরিষা ফুল থেকে মধু সংগ্রহ করে থাকেন মৌয়ালরা। সরিষা ক্ষেতের পাশে মৌমাছির চাষ হলে সরিষার ফলন ১০ ভাগ বেড়ে যায়।
চলনবিলের মৌচাষী আব্দুল মজিদ বিটিসি নিউজকে বলেন, আমি সাতক্ষীরা থেকে মধু সংগ্রহ করতে এসেছি। চলনবিলে দশ বছর ধরে মধু সংগ্রহ করি। আমার কাছে ১৩০টি বাক্স রয়েছে যা থেকে ২ সপ্তাহে ৭-৮ মণ মধু হয়। প্রতি কেজি মধু ৪০০-৫০০ টাকা করে বিক্রি করছি।
সিংড়া উপজেলার মৌচাষী নাসির আলী বিটিসি নিউজকে জানান, কৃষি অফিসের সহযোগিতায় মধু চাষে প্রশিক্ষণ নিয়ে মধু উৎপাদন শুরু করেছি। ১৮০টি বাক্স থেকে সপ্তাহে প্রায় ২০০ কেজি মধু পাওয়া যায়। বিক্রি হয় প্রায় ৬০-৭০ হাজার টাকায়।
মৌচাষী দুই সহোদর সাগর ও আলমগীর বিটিসি নিউজকে জানান, গত কয়েক বছর থেকে মধু চাষ শুরু করছি। এটি খুবই লাভজনক। আশা করছি এ বছর ২-৩ লাখ টাকার মধু বিক্রি করতে পারব।
মৌচাষী মোতালেব হোসেন বলেন, আমি এ বছর ৫০টি বাক্স থেকে সপ্তাহে ৮০ কেজি মধু সংগ্রহ করছি। এতে আমি লাভবান হচ্ছি। কৃষি অফিস আমাদেরকে পরামর্শ ও বাক্স দিয়ে সহযোগিতা করছে।
সিংড়া উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা কৃষিবিদ খন্দকার ফরিদ বিটিসি নিউজকে বলেন, সরিষা থেকে মধু উৎপাদন করে বাড়তি আয় হওয়ায় কৃষকদের মাঝে মধু চাষে আগ্রহ বাড়ছে। আমরা সিংড়া উপজেলায় ৫জন মৌচাষীকে মধু চাষের প্রশিক্ষণ দিয়ে ৫টি আধুনিক মৌবাক্স দিয়েছি। এর আগে ১০টি বাক্স দিয়েছি। আশা করছি, আগামীতে সরিষা চাষের পাশাপাশি মধুচাষির সংখ্যাও বাড়বে।
সংবাদ প্রেরক বিটিসি নিউজ এর নাটোর প্রতিনিধি খান মামুন। #

Comments are closed, but trackbacks and pingbacks are open.