চলনবিলের শুটকি পল্লীর শুটকি মাছ এখন ভারতে যাচ্ছে


নাটোর প্রতিনিধি: নাটোর-বগুড়া মহাসড়কের পাশে সিংড়ার নিংগইন এলাকা। এই পথ অতিক্রমকালে শুটকির ঘ্রাণ উপেক্ষা করা কঠিন। চলনবিল অধ্যুষিত নাটোরের সিংড়া উপজেলার একমাত্র শুটকি পল্লী। এখনও স্বাদে-ঘ্রাণে অতুলনীয় চলনবিলের শুটকি। ৪ টি চাতাল গড়ে উঠেছে এখানে। এখানের শুটকি দেশের বিভিন্ন জেলা পেরিয়ে এখন ভারতেও রপ্তানি হচ্ছে।
নাটোর-বগুড়া মহাসড়ক এর কোল ঘেঁষে গড়ে উঠেছে এ শুটকি পল্লী । কাজ করছেন অনেক শ্রমিক।সকাল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত চার চাতালের মাছ কাটা-বাছাইয়ের শ্রমিকরা ব্যস্ত সময় পার করেন। বাঁশের মাঁচায় ছৈই-এ ঢাকা চালার নীচে স্তুপ করে রাখা আধা-শুকনো চিংড়ি, টেংরা, পুঁটি, খলসে, বাতাসী, চেলা, মলা, টাকি, বাইম, শোল, বোয়াল, গজার, মাগুর, শিং, কৈসহ বাহারী মাছের শুটকি।
শুটকি পল্লীর চার চাতালের মালিক নাসির উদ্দীন, তিনি বিটিসি নিউজ এর প্রতিবেদককে জানান, কয়েক বছর আগেও তুলনায় এবার শুটকির চাহিদা ও বেশি মাছ ও বেশি। এবার চলনবিলে ব্যাপক মাছের উৎপাদন হয়েছে।
অপর চাতাল মালিক আনোয়ার হোসেন বিটিসি নিউজ এর প্রতিবেদককে জানান, এখন চলনবিলে মাছের সংকট এবার কম, তবু শুটকি তৈরীতে খরচ হচ্ছে। মাছ বেশি বা কম হোক শ্রমিকদের নির্ধারিত টাকাই মজুরী দিতে হয়।
সব মিলিয়ে শুটকি তৈরীতে লাভের মুখ দেখছে তারা।
চাতালে সফুরা, আমেনা ও রুপালী, নাজমা, আনোয়ারার মত দক্ষ হাতে টাকির আঁশ ছাড়িয়ে কানকো কেটে পিত্ত বের করে রাখছেন আলাদা ঝুড়িতে। দিনপ্রতি ১৫০ টাকা মজুরীতে তারা আধাবেলা মাছ কাটেন। কেউ বা মাছ কাটার পর কিছু বাড়তি টাকার বিনিময়ে চাতালের মাচাগুলোতে মাছগুলো রোদে শুকাতে দেন, দেন ঘন্টায় ঘন্টায় উল্টে-পাল্টে বা শুটকি বাছাই করেন। শীত মৌসুমে শুটকি পল্লীতে কাজ করেই তাদের বাড়তি জীবিকা।চলনবিলের মাছের পাশাপাশি দক্ষিণাঞ্চল থেকেও অল্পকিছু মাছ আসে এই শুটকি পল্লীতে। সেগুলো হলো রুপচাঁদা, লইট্টা, বড় ছুঁরি, ইলিশ, বড় ও মাঝারি চিংড়ি। চাতাল মালিকদের তত্বাবধানে এভাবেই মাছ কাটা থেকে শুকাতে দেয়ার কাজ চলতে থাকে। মহাসড়কের পাশেই বসে শুটকির দোকান।
মাছভেদে প্রতিকেজি শুটকি দাম সাড়ে চার’শ টাকা থেকে সাড়ে তিন হাজার টাকা পর্যন্ত। রুপচাঁদা মাছের শুটকি প্রতিকেজি ২০০০ টাকা, লইট্টা ৭০০ টাকা, ছুঁরি ১১০০ টাকা, ইলিশ আকারভেদে ৭০০ থেকে ১৬০০ টাকা, মলা ও কাচকি ৭৫০ টাকা, শৈল ১৫০০ টাকা, টাকি ৭০০ টাকা, পুঁটি ২৫০ টাকা, খলসে ও বাতাসি ৩০০ টাকা, বাইম ৮০০ টাকা, কই ৬০০ টাকা ও টেংরা ৮০০ টাকা দরে বিক্রি হয়। প্রক্রিয়াজাতকরণে কোনপ্রকার কেমিক্যাল ব্যবহার না করায় স্বাদ অক্ষুণ্ন থাকে।
তাই খুচরা ক্রেতারও অভাব হয় না। এখন পর্যন্ত প্রতিদিন ১০ থেকে ১৫ মণ শুটকি বিক্রি হয় এখান থেকে। এছাড়া রাজধানী ঢাকা, চট্টগ্রাম, কুমিল্লা, দিনাজপুর, কক্রবাজার, রাজশাহী, কুষ্টিয়াসহ দেশের বিভিন্ন স্থান থেকে পাইকাররা এখান থেকে শুটকি কিনে নিয়ে বিক্রি করেন।চলনবিলে ফি-বছর কমেই চলেছে দেশীয় মাছ। তবে ভরা বর্ষায় কিছু মাছ বংশবিস্তার করে বিলের পানিতে। এক হাঁটু পানিতে নেমেই দ্রুত বর্ধণশীল এই মাছগুলো ধরা যায়। তখন বাজারেও সস্তায় বিক্রি হয় মাছগুলো।
চলনবিলের চাহিদা মিটিয়ে মাছগুলো বাইরে চলে যায়। দেশের বিভিন্ন এলাকা থেকে পাইকাররা এসে কম দামে বিলের মাছগুলো কিনে বাইরের বাজারে চড় দামে বিক্রি করে।এবছর শুটকি চলে যাচ্ছে ভারতে ও।
শুটকির সাথে সংশ্লিষ্টরা মনে করেন, এমন প্রেক্ষাপটে একটি মাছ সংরক্ষণাগার থাকলে বর্ষার সময় মাছগুলো ধরে রেখে শীতের শুরুতে শুটকি তৈরী করা যেত। একটি মাছ সংরক্ষণাগারই উন্মোচন করতে পারে চলনবিলের মাছকেন্দ্রিক অর্থনীতির নতুন দিগ›ত।
চলনবিল পরিবেশ উন্নয়ন ও প্রকৃতি সংরক্ষনের সভাপতি রাজু আহমেদ বিটিসি নিউজ এর প্রতিবেদককে বলেন, চলনবিলের নিংগইনে শুটকি পল্লীতে প্রতিদিন ৩০ জন শ্রমিক কাজ করে। এবার চলনবিলে মাছের উৎপাদন বেশি হওয়ায় শুটকির চাতাল এবার জমজমাট। একদিকে কিছু মানুষের কর্মসংস্থান সৃষ্টি হচ্ছে। অপরদিকে চলনবিলের শুটকির চাহিদা জেলায় ছড়িয়ে পড়ছে।
উপজেলা সিনিয়র মৎস্য কর্মকর্তা মোল্লাহ ওয়ালীউল্লাহ বিটিসি নিউজ এর প্রতিবেদককে বলেন, চলনবিলে মাছের উৎপাদন বিগত দিনের চেয়ে ভালো। গত বছর ২১০ মে: টন শুটকি উৎপাদন হয়েছে। এবার উৎপাদন আরো বাড়বে বলে তিনি জানান। তিনি আরো বলেন, শুটকি শ্রমিক ও মালিকদের আমরা প্রয়োজনীয় প্রশিক্ষনের ব্যবস্থা করেছি। মৎস্য বিভাগ এ বিষয়ে সজাগ আছে।
সংবাদ প্রেরক বিটিসি নিউজ এর নাটোর প্রতিনিধি খান মামুন। #

Comments are closed, but trackbacks and pingbacks are open.