ঘূর্ণিঝড় ‘মোখা’র কক্সবাজার-উত্তর মায়ানমার উপকূল অতিক্রম শুরু, সাতক্ষীরার উপকূলীয় এলাকার নদ-নদীর পানি কিছুটা বৃদ্ধি, তিন বিভাগের প্রাথমিক বিদ্যালয় ও খুবি,খুকৃবি বন্ধ

বিশেষ প্রতিনিধি: অতি প্রবল ঘূর্ণিঝড় ‘মোখা’ কক্সবাজার-উত্তর মায়ানমার উপকূল অতিক্রম শুরু করেছে বলে জানিয়েছে আবহাওয়া অধিদপ্তর। ঘূর্ণিঝড় মোখার প্রভাবে সাতক্ষীরার উপকূলীয় এলাকার নদ-নদীর স্বাভাবিকের চেয়ে কিছুটা বৃদ্ধি পেয়েছে। এর ফলে জরাজীর্ণ বেঁড়িবাধ ভাঙন আতংকে রয়েছে উপকূলীয় এলাকার কয়েক লাখ মানুষ।বন্ধ ঘোষণা করা হয়েছে চট্টগ্রাম, বরিশাল ও খুলনা বিভাগের সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়গুলো। বন্ধ রয়েছে খুবি ও খুকৃবির সকল শিক্ষা কার্যক্রম।
রোববার (১৪ মে) সকালে অধিদপ্তরের ১৮ নম্বর বিশেষ বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, পূর্ব-মধ্য বঙ্গোপসাগর ও তৎসংলগ্ন এলাকায় অবস্থানরত অতি প্রবল ঘূর্ণিঝড় ‘মোখা’ উত্তর-উত্তরপূর্ব দিকে অগ্রসর ও ঘণীভূত হয়ে উত্তর-পূর্ব বঙ্গোপসাগর ও তৎসংলগ্ন এলাকায় অবস্থান করছে। এটি রোববার সকাল ৬টায় চট্টগ্রাম সমুদ্রবন্দর থেকে ৩৮৫ কিলোমিটার দক্ষিণ-দক্ষিণপশ্চিমে, কক্সবাজার সমুদ্রবন্দর থেকে ৩০৫ কিলোমিটার দক্ষিণ-দক্ষিণপশ্চিমে, মোংলা সমুদ্রবন্দর থেকে ৪৫০ কিলোমিটার দক্ষিণ-দক্ষিণপূর্বে এবং পায়রা সমুদ্রবন্দর থেকে ৩৭০ কিলোমিটার দক্ষিণ-দক্ষিণপূর্বে অবস্থান করছিল। এটি কক্সবাজার-উত্তর মায়ানমার উপকূল অতিক্রম শুরু করেছে। এটি আরও উত্তর-উত্তরপূর্ব দিকে অগ্রসর হয়ে রোববার বিকেল বা সন্ধ্যার দিকে মায়ানমারের সিটুয়ের নিকট দিয়ে কক্সবাজার-উত্তর মায়ানমার উপকূল অতিক্রম সম্পন্ন করতে পারে।আবহাওয়া অধিদপ্তরের পরিচালক মোহাম্মদ আজিজুর রহমান জানিয়েছেন, ঘূর্ণিঝড়ের পিক আওয়ার হবে দুপুর ১২টা থেকে ৩টার মধ্যে।
এদিকে আমেরিকান নৌবাহিনী পরিচালিত “জয়েন্ট টাইফুন ওয়ার্নিং সেন্টার” এর সর্বশেষ পূর্বাভাস অনুযায়ী সুপার সাইক্লোন “মোখা” এর কেন্দ্র আজ দুপুর নাগাদ টেকনাফের দক্ষিণ দিক দিয়ে মিয়ানমারের “Sitwe” এর নিকট দিয়ে উপকূল অতিক্রম করতে পারে। এতে টেকনাফ, সেন্ট মার্টিন সহ কক্সবাজার উপকূলে যথেষ্ট দমকা ও ঝড়ো বাতাস সহ জলোচ্ছ্বাসের আশঙ্কা রয়েছে। তবে ঘূর্ণিঝড়টি বেশ কিছুটা দক্ষিণ দিক দিয়ে অতিক্রম করায় চট্টগ্রাম জেলা সহ বরিশাল বিভাগের উপকূলীয় এলাকায় অপেক্ষাকৃত কম প্রভাব পরিলক্ষিত হতে পারে। এতে বরিশাল উপকূলে ক্ষয়ক্ষতির আশঙ্কা তুলনামূলকভাবে অনেক কম থাকতে পারে। বরং টেকনাফ এর নিকটবর্তী অঞ্চলে সর্বাধিক ক্ষয়ক্ষতির আশঙ্কা রয়েছে।
অতি প্রবল ঘূর্ণিঝড় কেন্দ্রের ৭৪ কিলোমিটার এর মধ্যে বাতাসের একটানা সর্বোচ্চ গতিবেগ ঘণ্টায় ১৯৫ কিলোমিটার, যা দমকা অথবা ঝড়ো হাওয়ার আকারে ২১৫ কিলোমিটার পর্যন্ত বৃদ্ধি পাচ্ছে। অতি প্রবল ঘূর্ণিঝড় কেন্দ্রের নিকটবর্তী এলাকায় সাগর খুবই বিক্ষুদ্ধ রয়েছে। কক্সবাজার সমুদ্রবন্দরকে ১০ নম্বর মহাবিপদ সংকেত দেখিয়ে যেতে বলা হয়েছে।
চট্টগ্রাম ও পায়রা সমুদ্রবন্দরকে ৮ নম্বর মহাবিপদ সংকেত দেখিয়ে যেতে বলা হয়েছে। মোংলা সমুদ্রবন্দরকে ৪ নম্বর স্থানীয় হুঁশিয়ারি সংকেত দেখিয়ে যেতে বলা হয়েছে। উপকূলীয় জেলা কক্সবাজার এবং তার অদূরবর্তী দ্বীপ ও চরসমূহ ১০ নম্বর মহাবিপদ সংকেতের আওতায় থাকবে। উপকূলীয় জেলা চট্টগ্রাম, ফেনী, নোয়াখালী, লক্ষ্মীপুর, চাঁদপুর, বরিশাল, ভোলা, পটুয়াখালী, ঝালকাঠি, পিরোজপুর, বরগুনা এবং তাদের অদূরবর্তী দ্বীপ ও চরসমূহ ৮ নম্বর মহাবিপদ সংকেতের আওতায় থাকবে।
অতি প্রবল ঘূর্ণিঝড়টির অগ্রবর্তী অংশ ও বায়ুচাপ পার্থক্যের আধিক্যের প্রভাবে উপকূলীয় জেলা কক্সবাজার ও চট্টগ্রাম এবং তাদের অদূরবর্তী দ্বীপ ও চরসমূহের নিম্নাঞ্চল স্বাভাবিক জোয়ারের চেয়ে ৮-১২ ফুট অধিক উচ্চতার বায়ু তাড়িত জলোচ্ছ্বাসে প্লাবিত হতে পারে।
অতি প্রবল ঘূর্ণিঝড়টির অগ্রবর্তী অংশ ও বায়ুচাপ পার্থক্যের আধিক্যের প্রভাবে উপকূলীয় জেলা ফেনী, নোয়াখালী, লক্ষ্মীপুর, চাঁদপুর, বরিশাল, ভোলা, পটুয়াখালী, ঝালকাঠি, পিরোজপুর, বরগুনা এবং তাদের অদূরবর্তী দ্বীপ ও চরসমূহের নিম্নাঞ্চল স্বাভাবিক জোয়ারের চেয়ে ৫-৭ ফুট অধিক উচ্চতার বায়ু তাড়িত জলোচ্ছ্বাসে প্লাবিত হতে পারে। অতি প্রবল ঘূর্ণিঝড়টির প্রভাবে চট্টগ্রাম, সিলেট ও বরিশাল বিভাগে ভারি থেকে অতি ভারি বর্ষণ হতে পারে। অতি ভারি বর্ষণের প্রভাবে কক্সবাজার, বান্দরবান, রাঙ্গামাটি, খাগড়াছড়ি ও চট্টগ্রামের পাহাড়ি অঞ্চলের কোথাও কোথাও ভূমিধস হতে পারে। উত্তর বঙ্গোপসাগরে অবস্থানরত সকল মাছ ধরার নৌকা ও ট্রলারকে পরবর্তী নির্দেশ না দেওয়া পর্যন্ত নিরাপদ আশ্রয়ে থাকতে বলা হয়েছে।
এদিকে ঘূর্ণিঝড় মোখার প্রভাবে সাতক্ষীরার উপকূলীয় এলাকার নদ-নদীর স্বাভাবিকের চেয়ে কিছুটা বৃদ্ধি পেয়েছে। এর ফলে জরাজীর্ণ বেঁড়িবাধ ভাঙন আতংকে রয়েছে উপকূলীয় এলাকার কয়েক লাখ মানুষ। তবে ঘূর্ণিঝড় মোখা আঘাত হানার আগে সাতক্ষীরার উপকূলীয় অঞ্চলে চলছে তীব্র তাপদাহ। সেই সাথে শ্যামনগর, আশাশুনিসহ ভাঙন কবলিত দ্বীপ ইউনিয়ন শ্যামনগরের গাবুরায় তীব্র দাবদাহে জনজীবন অতিষ্ট হয়ে পড়েছে। তবে শনিবার দুপুরের দিকে সাতক্ষীরা শহরে কিছুটা গুড়ি গুড়ি বৃষ্টি হলেও কিছুক্ষণ পরে তা বন্ধ হয়ে যায়। এছাড়া উপকুলীয় উপজেলা শ্যামনগর ও আশাশুনির কপোতাক্ষ নদ ও খোলপেটুয়া এবং চুনা নদীসহ সবগুলো নদ-নদীর পানি স্বাভাবিকের চেয়ে কিছুটা বৃদ্ধি পেয়েছে।
এদিকে ভাঙন আতংকে রয়েছেন উপকূলীয় এলাকার লাখ লাখ মানুষ। বিশেষ করে শ্যামনগর উপজেলার বিচ্ছিন্ন দ্বীপ শ্যামনগরের গাবুরা এলাকার মানুষ রয়েছেন সবচেয়ে বেশি আতংকে। অত্যন্ত নাজুক অবস্থায় রয়েছে সেখানকার বেড়িবাঁধ। এছাড়া নেবুবুনিয়াসহ অনেক জায়গায় বেড়িবাঁধ তৈরিই হয়নি বহুদিন। সুতরাং বড় ধরনের কোন দূর্যোগ এলে তলিয়ে যাবে গ্রামটি। ‘দৃষ্টিনন্দন’ মিঠা পানি প্রকল্পের পাশে খুবই নিচু একটি বেড়িবাঁধ রয়েছে। সেখানে বেশ কিছুদিন যাবত ভাঙন শুরু হয়েছে। সেখানে পানি উন্নয়ন বোর্ডের তত্বাবধানে ৫ হাজার জিওব্যাগ প্রস্তুত করে রাখা হয়েছে ভাঙন রোধ করার জন্য। এলাকাটি তলিয়ে গেলে দৃষ্টিনন্দন পানির প্রকল্পটিতে লবনাক্ত পানি ঢুকে তা নষ্ট হয়ে যাবে। এতে পানি সংকট চরম আকার ধারণ করবে।
চট্টগ্রাম, বরিশাল ও খুলনা বিভাগের সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় পুনরাদেশ না দেওয়া পর্যন্ত বন্ধ ঘোষণা করা হয়েছে। প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ের সচিব ফরিদ আহাম্মদ এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন।
শনিবার (১৩ মে)প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ের এক বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়, ঘূর্ণিঝড় ‘মোকা’র মোখার কারণে বিশেষ পরিস্থিতি সৃষ্টি হওয়ায় এ সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। একই সঙ্গে এই মন্ত্রণালয়ের অধীনে থাকা অন্যান্য শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলো বন্ধ থাকবে।
বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, পরিস্থিতি বিবেচনায় পুনরাদেশ না দেওয়া পর্যন্ত চট্টগ্রাম, খুলনা ও বরিশাল বিভাগের সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, উপানুষ্ঠানিক শিক্ষা ব্যুরোর শিক্ষা কেন্দ্র ও শিশু কল্যাণ ট্রাস্টের লার্নিং সেন্টারগুলো বন্ধ থাকবে।
বিজ্ঞপ্তিতে আরও বলা হয়েছে, এসব এলাকায় পরিস্থিতি বিবেচনা করে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খোলার বিষয়ে পরবর্তী সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে।
এর আগে এক বিজ্ঞপ্তিতে চট্টগ্রাম শিক্ষা বোর্ড, বরিশাল শিক্ষা বোর্ড, কুমিল্লা শিক্ষা বোর্ড ও যশোর শিক্ষা বোর্ডের আওতাধীন জেলাগুলোর মাধ্যমিক, উচ্চ মাধ্যমিক ও বিশ্ববিদ্যালয় পর্যায়ের সব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের শিক্ষা কার্যক্রম রবিবার (১৪ মে) বন্ধ ঘোষণা করেছে শিক্ষা মন্ত্রণালয়।
শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা বিভাগ থেকে জারিকৃত এক প্রজ্ঞাপনের আলোকে বঙ্গোপসাগরে সৃষ্ট অতি প্রবল ঘূর্ণিঝড় মোখা’র প্রভাবজনিত কারণে দুর্যোগপূর্ণ আবহাওয়ায় খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়ের সব ডিসিপ্লিনের পরীক্ষাসহ সকল শিক্ষা কার্যক্রম আজ
রবিবার (১৪ মে) বন্ধ ঘোষণা করা হয়েছে। তবে অফিস যথারীতি চালু থাকবে।
খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিস্ট্রার (ভারপ্রাপ্ত) প্রফেসর খান গোলাম কুদ্দুস স্বাক্ষরিত এক বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানানো হয়েছে।
এদিকে রবিবার খুলনা কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের সকল একাডেমিক কার্যক্রম বন্ধ ঘোষণা করা হয়েছে। বিশ্ববিদ্যালয়ের ভাইস-চ্যান্সেলরের নির্দেশে রেজিস্ট্রার ডা. খন্দকার মাজহারুল আনোয়ারের স্বাক্ষরিত এক অফিস আদেশে বিশ্ববিদ্যালয় বন্ধের বিষয়টি নিশ্চিত করা হয়েছে। তবে বিশ্ববিদ্যালয়ের অফিসসমূহ যথারীতি চালু থাকবে।
সংবাদ প্রেরক বিটিসি নিউজ এর বিশেষ প্রতিনিধি মাশরুর মুর্শেদ। #

Comments are closed, but trackbacks and pingbacks are open.