গেজেট অনুযায়ী ভূমি অধিগ্রহণের দাবী

নিজস্ব প্রতিবেদক: ভূমি অধিগ্রহণ আইন বাস্তবায়নের দাবীতে রাজশাহী প্রেসক্লাবে এক সংবাদ সম্মেলন করা হয়েছে।  আজ শনিবার (২ নভেম্বর) বেলা ১১টায় রাজশাহী নগরীর ২৪ নম্বর ওয়ার্ডের রাস্তা ও ড্রেনেজ ব্যবস্থাপনার নামে ভূমি অধিগ্রহনে ক্ষতিগ্রস্থ পরিবারের সদস্যরা এটির আয়োজন করেন।

সংবাদ সম্মেলনে এলাকাবাসীর পক্ষে লিখিত বক্তব্য পাঠ করেন হানিফ দেওয়ান। এসময় তিনি বলেন, উন্নয়ন প্রকল্প ও ড্রেনেজ প্রকল্পের জন্য রাজশাহী  সিটি কর্পোরেশনের পক্ষ থেকে রাজশাহীর বিভিন্ন জায়গায় ভূমি অধিগ্রহণ  কার্যক্রমে বিভিন্ন জায়গায় ভূমি ও ভূমির উপর নির্মিত যেকোনো স্থাপনা অধিগ্রহণের কাজ ইতোমধ্যে শুরু হয়ে গেছে। একটি দেশের  উন্নয়নকল্পে সরকার চাইলে যেকোনো ভূমি যেকোনো স্থাপনা করায়াত্ত করতে  পারে এবং দেশের অগ্রগতির জন্য আমরা জনগণ তা দিতে বাধ্য থাকবো। এতে  আমাদের কোনো আপত্তি নেই। বরং সরকারের এই অগ্রগতিকে এবং উন্নয়নকে  আমরা সাধুবাদ জানাই, কিন্তু জনগণের নুন্যতম সুখ, দু:খ এবং আর্থিক বিষয়  বিবেচনা করাও সরকারের একান্ত কর্তব্য।

এসময় দাবি করা হয়, ড্রেনেজ প্রকল্পের আওতায় আমাদের প্রায়  ৫০টি পরিবার ক্ষতিগ্রস্থ হয়েছে। এদের মধ্যে অনেক পরিবারই মাটি এবং বাড়ী  হারিয়ে সর্বস্বান্ত হয়ে গেছে। ইতোমধ্যেই বাংলাদেশ সরকার কর্তৃক ২০১৭ সালের ২১ সেপ্টেম্বর বৃহস্পতিবার ভূমি অধিগ্রহণ আইন সম্পর্কিত একটি  নতুন গেজেট প্রকাশ হয়েছে। এই আইন স্থাবর সম্পত্তি অধিগ্রহণ ও হুকুমদখল  আইন ২০১৭ নামে অভিহিত। এই গেজেটের প্রথম অধ্যায়ের (২) নম্বরে উল্লেখ আছে এই আইন অবিলম্বে কার্যকর হবে। এবং গেজেটের ১০০৩ পৃষ্ঠায় (৩) নং এ  আইনের প্রাধান্য সম্পর্কে বলা আছে যে, আপাতত বলবৎ অন্য কোনো আইনে  যাহা কিছুই থাকুক না কেন এই আইনের বিধানাবলি প্রাধান্য পাবে,এই গেজেটের ১০০৭ পৃষ্ঠায় উল্লিখিত (২) নং এ উল্লেখ আছে যে, সরকারী কোনো প্রয়োজনে ভূমি অধিগ্রহণের ক্ষেত্রে স্বার্থসংশ্লিষ্ট  ব্যক্তিকে উপধারা (১) এর দফা (ক) তে বর্ণিত বাজার দরের উপর অতিরিক্ত শতকরা ২০০  (দুইশত) ভাগ ক্ষতিপূরণ প্রদান করিতে হইবে। এবং বেসরকারী প্রতিষ্ঠানের জন্য  ভূমি অধিগ্রহণের ক্ষেত্রে ক্ষতিপূরণের পরিমাণ হইবে বাজার দরের উপর অতিরিক্ত  শতকরা ৩০০ (তিনশত) ভাগ (৩) নং এ উপধারা (১) এর দফা (খ), (গ), (ঘ) এবং (ঙ) তে  বর্ণিত ক্ষতির ক্ষেত্রে বাজার মূল্যের উপর অতিক্তি শতকরা ১০০ ভাগ ক্ষতিপূরণ প্রদান  করতে হবে। এবং (৪) এ বর্ণিত এই ধারাই উল্লেখিত ক্ষতিপূরণ প্রদান ব্যতিত  নির্ধারিত পদ্ধতিতে অধিগ্রহণের কারণে বাস্তচ্যুত পরিবারকে পূর্ণবাসনের  জন্য প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা যাবে। গেজেটের ১০০৬ পৃষ্ঠায় (৯) এর (ক) তে  স্পষ্ট উল্লেখ রয়েছে যে, বাজার মূল্য নির্ধারণের সময় উক্ত স্থাবর সম্পত্তির  পারিপার্শিক এলাকায় সমশ্রেণীর এবং সমান সুবিধাযুক্ত স্থাবর সম্পত্তির ধারা  (৪) এর অধীন নোটিশ জারির পূর্বে ১২ মাসের গড় মূল্য নির্ধারিত নিয়মে  হিসাব করতে হবে।

সংবাদ সম্মেলনে ভুক্তভোগীরা দুঃখ প্রকাশ করে বলেন,তারাতো আমাদেরকে  নায্যমূল্য দেইনি বরং এ সংক্রান্ত কোনো তথ্য উপাত্ত যখন আমরা তাদের কাছে  জানতে চেয়েছি অথবা কোনো কিছু জানাতে চেয়েছি তাদের কাছ থেকে  আমরা সহযোগিতামূলক ব্যবহার পাইনি।

তারা সাংবাদিকদেরকে বলেন, নতুন গেজেটে ভূমি  অধিগ্রহণের ক্ষেত্রে তিনগুণ মূল্যের কথা স্পষ্ট উল্লেখ থাকার পরেও কেনো আমাদের  ক্ষেত্রে ১৯৮২ সনের ভূমি অধিগ্রহণ ও হুকুমদখল আইনটি প্রয়োগ করে আমাদেরকে  আমাদের নায্য অধিকার থেকে বঞ্চিত করা হলো। শুধু তাই নয় যাদের বাড়িতে গ্যাস  সংযোগ আছে, গভীন নলকূপ স্থাপন করা হয়েছে সেগুলোর দামও (৭) ধারার নোটিশে  প্রদান করা হয় নাই। অপর দিকে, বর্তমান জমির বাজার হিসাব করলে রামচন্দ্রপুর মৌজায় যে টাকা দেওয়া হয়েছে তাতে বাড়ী করার স্বপ্নতো দূরে থাক, এক ছটাক মাটিও কেনা  সম্ভব নয়।

তারা উল্লেখ করেন, আমেরিকা, ইংল্যান্ড, ফ্রান্স, স্পেন, ইটালিসহ পৃথিবীর উন্নত  দেশগুলোতে সরকার যখন কারো ভূমি বা বাড়িঘর অধিগ্রহণ করে তখন তাকে আগে  সে ধরনেরই মানসম্মত একটি বাড়ি করে দেয় তারপর ভূমি অধিগ্রহণ করে। বর্তমানে আমাদের পার্শবর্তী দেশ ভারতেও এই পদ্ধতি চালু হয়েছে। হয় আমাদের বাড়ীর মতো একটি  বাড়ী নির্মান করে দেন, নয়তো আমাদেরকে ন্যায্য টাকা পরিশোধ করুন।

এসময় হুঁশিয়ারী প্রদান করে তারা বলেন, আগামী সাত দিনের মধ্যে আমাদের নায্য দাবি পূরণ করা না হলে আমরা আইনি  ব্যবস্থাসহ আন্দোলনের কর্মসূচি ঘোষনা করতে বাধ্য হব। এতে পরিস্থিতি জটিল  হলে এর দায় দায়িত্ব রাজশাহী সিটি কর্পোরেশনকে বহন করতে হবে।

এদিন সংবাদ সম্মেলনে এলাকাবাসীর পক্ষে আরও উপস্থিত ছিলেন, মুনজুর আহমেদ, রায়হান দেওয়ান, জয়ন্তী রাণী চৌধুরী প্রমুখ।

সংবাদ প্রেরক বিটিসি নিউজ এর স্টাফ রিপোর্টার আমানুল্লাহ আমান। #

Comments are closed, but trackbacks and pingbacks are open.