খুলনায় কিস্তিতে ফার্নিচার ও ঋণ দেয়ার নামে প্রায় কোটি টাকা নিয়ে পালিয়েছে একটি প্রতারক চক্র

খুলনা ব্যুরো : কিস্তিতে ফার্নিচার সামগ্রী এবং স্বল্প সুদে ঋণ দেয়ার নামে নিম্ন ও মধ্যবিত্ত শ্রেণির লোকজদের কাছ থেকে প্রায় কোটি টাকা হাতিয়ে নিয়ে পালিয়েছে একটি প্রতারক চক্র। খুলনা মহানগরীর খালিশপুর থানাধীন গোয়ালখালী এলাকার ভুক্তভোগী মানুষগুলো এখন অনেকটা দিশেহারা। টাকার জন্য তারা ঘুরে বেড়াচ্ছেন দ্বারে দ্বারে।
প্রভাতি ইলেকট্রনিক্স এ্যান্ড ফার্নিচার নামের ওই প্রতিষ্ঠানে কর্মরত দু’নারীকে এলাকাবাসী ধরে সম্প্রতি পুলিশে দিলেও মুচলেকার বিনিময়ে ছেড়ে দেয়া হয়। কিন্তু এখন পর্যন্ত ওই প্রতিষ্ঠানের মালিক পক্ষকে খুঁজে বের করা সম্ভব হয়নি। এতে ওই এলাকার বেশকিছু নারী পুরুষ টাকার জন্য হন্যে হয়ে ঘুরছেন।
প্রভাতি ইলেকট্রনিক্স এ্যান্ড ফার্নিচার নামের একটি বেসরকারি সংস্থার নাম দিয়ে সদস্য সংগ্রহ করে তাদেরকে প্রথমে কিস্তিতে বিভিন্ন পণ্য সামগ্রী দেয়া হয় উল্লেখ করে গোয়ালখালী এলাকার বাসিন্দারা জানান, বিগত ৩/৪ বছর ধরে ওই প্রতিষ্ঠানের মালিকপক্ষ বিশেষ করে সাইদ, শফিকুল ও খায়রুলসহ আরও কয়েকজন ব্যক্তি বাকীতে ফার্নিচার সামগ্রী দিয়ে প্রতি সপ্তাহে কিস্তিতে টাকা পরিশোধের সুযোগ দেন।
এভাবে ধীরে ধীরে তারা এলাকাবাসীর কাছে বিস্বস্ত হয়ে ওঠেন। প্রত্যেক সদস্যকে এজন্য একটি করে পাস বইও দেয়া হয়। কথিত পাস বইতে একটি রেজিষ্ট্রেশন নম্বরও লেখা থাকে। উল্লেখ রয়েছে তিনটি মোবাইল নম্বরও। কিন্তু প্রতিষ্ঠানের কোন ঠিকানা বা যে বাড়িতে ভাড়া থাকতেন সেখানে কোন সাইনবোর্ডও টানানো হয়নি। তার পরেও মানুষ তাদেরকে বিশ্বাস করে কিস্তিতে টাকা পরিশোধ করেছেন।
এক পর্যায়ে সবাইলে ঋণ দেয়ার কথা বলে কারও কাছ থেকে পাঁচ হাজার, কারো কাছ থেকে ২০ হাজার টাকা হাতিয়ে নেন ওই  প্রতিষ্ঠানের  মালিকপক্ষ। ঋণ দেয়ার জন্য একটি নির্দিষ্ট দিনও ধার্য করা হয়। কিন্তু নির্দিষ্ট দিনে তারা ঋণের জন্য ওই বাড়িতে গিয়ে কাউকে খুঁজে না পেয়ে হতাশ হন।
ওই এলাকার শেফালী, তৃষ্ণা, স্বপ্না দাস, মঙ্গল দাস, চপলা দাস, অনন্যা রহমান কনক ও তার মা, বিশ্বজিৎ, আ: হালিম, মো: আ: রহিম, আরতী দাসসহ অনেকের কাছ থেকেই প্রায় কোটি টাকা হাতিয়ে নিয়েছে বলেও এলাকাবাসী জানান। এক পর্যায়ে ভুক্তভোগী গ্রাহকরা ঐক্যবদ্ধ হয়ে ওই প্রতিষ্ঠানে কর্মরত দু’নারীকে ধরে পুলিশে দেয়।
পুলিশ তাদেরকে থানায় নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ শেষে এক লাখ ৪০ টাকা উদ্ধার করে বলে এলাকাবাসী জানান। কিন্তু সোমবার খালিশপুর থানার অফিসার ইনচার্জ মোশাররফ হোসেন এ প্রতিবেদককে বলেন, আটককৃত দু’নারীর কাছ থেকে মাত্র ৭৮ হাজার টাকা উদ্ধার করা হয়। যেটি স্থানীয় স্বাক্ষীদের সামনেই জব্দ করে থানায় রাখা হয়।
পরে মুচলেকা দিয়ে ওই দু’নারীকে ছেড়ে দিয়ে মালিক পক্ষকে খুঁজে বের করার জন্য বলা হয়। এজন্য একজন উপ-পুলিশ পরিদর্শককে দায়িত্ব দেয়া হয়। যার নাম এসআই হাতেম। বাড়ির মালিক নান্নু বলেন, এপ্রিল মাসে জনৈক সাইদ তার বাড়ির নিচতলা ভাড়া নেন। তিনি ফার্নিচার ব্যবসার কথা বলে ভাড়া নিলেও পরে জানতে পারেন যে, সমিতির মাধ্যমে কিস্তিতে ফার্নিচার সামগ্রী দেয়া হয় সদস্যদের মাঝে।
বর্তমানে তার ঘরও আটকা রয়েছে উল্লেখ করে তিনি বলেন, এখন পর্যন্ত তিনি কোন ভাড়াও পাননি।পুলিশের হাতে আটক হয়ে মুচলেকার বিনিময়ে ছাড়া পাওয়া ওই প্রতিষ্ঠানের এক নারী কর্মী জানান, তিনি মাত্র এক মাস হয় সেখানে চাকরীতে ঢুকেছেন। এরপরই এমন ঘটনায় তিনিও বিব্রত।
তিনি নিজেও মালিককে খুঁজছেন উল্লেখ করে জানান, মালিককে খুঁজে দিতে না পারলে তিনিই আসামী হবেন বলে পুলিশের কাছে লিখিত
দিয়ে এসেছেন। সুতরাং সদস্যদের পাশাপাশি তিনি নিজেও মালিককে খুঁজে বেড়াচ্ছেন। তবে মঙ্গলবার বিকেলে তাকে পুনরায় ফোন দেয়া হলে তিনি অসুস্থ, কথা বলতে পারছেন না বলে লাইনটি কেটে দেন। #

Comments are closed, but trackbacks and pingbacks are open.