খুলনায় ১০সহ  বিভাগে অবৈধ ক্লিনিক ও ডায়াগনষ্টিক সেন্টার ১২৩ 

খুলনা ব্যুরো: বেসরকারি ফাউন্ডেশন, সমিতি, বিদেশী সংস্থা এবং এনজিও পরিচালিত খুলনা মহানগরীর ১০টি প্রতিষ্ঠানকে অবৈধ বলে তালিকাভুক্ত করেছে খুলনা বিভাগীয় স্বাস্থ্য দপ্তর।
তালিকায় রয়েছে বিভাগের আরও ১২৩ টি প্রতিষ্ঠান। এর মধ্যে সাতক্ষীরা জেলায় বৈধ তালিকার চেয়ে অবৈধ রয়েছে প্রায় দ্বিগুন। তবে খুলনা জেলার নয়টি উপজেলায় এবং চুয়াডাঙ্গার চারটি উপজেলায় কোন অবৈধ ক্লিনিক-ডায়াগনষ্টিক সেন্টার নেই বলে স্বাস্থ্য বিভাগের প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে।
নুতন স্বাস্থ্যমন্ত্রীর সাম্প্রতিক ঘোষণার পর সারাদেশের ন্যায় খুলনায়ও বৈধ-অবৈধ বেসরকারি স্বাস্থ্য প্রতিষ্ঠানের তালিকা তৈরি করে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরে পাঠানো হয়েছে। গত ২১ জানুয়ারি খুলনার বিভাগীয় স্বাস্থ্য পরিচালক ডাঃ মোঃ মনজুরুল মুরশিদ স্বাক্ষরিত এ সংক্রান্ত পত্র দেওয়া হয়েছে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের মহাপরিচালক বরাবরে।
স্বাস্থ্যমন্ত্রী ডাঃ সামন্ত লাল সেন গত ১৭ জানুয়ারি জানান, দেশের আনাচে-কানাচে গড়ে উঠা সব ধরনের অবৈধ ক্লিনিক, ডায়াগস্টিক সেন্টারসহ অবৈধ স্বাস্থ্যকেন্দ্র বন্ধ করে দিতে সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের নির্দেশনা দেয়া হয়েছে।
স্বাস্থ্যমন্ত্রী বলেন, দেশে কতগুলো অবৈধ ক্লিনিক, ডায়াগনস্টিক সেন্টার ও স্বাস্থ্যকেন্দ্র আছে তার তালিকা দিতে বলা হয়েছে মাঠ পর্যায়ের কর্মকর্তাদের। যতগুলোই থাকুক, সব বন্ধ করে দিতে শিগগিরই অভিযান শুরু করা হবে বলেও তিনি জানান। প্রসঙ্গক্রমে তিনি বলেন, ‘এর মধ্যে অবৈধ ক্লিনিক-ডায়াগনস্টিক সেন্টারের মালিকরা নিজেরাই যদি বন্ধ করে দেন ভালো, নাহলে আমরা প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেব।’
মূলত: স্বাস্থ্যমন্ত্রীর এমন বক্তব্যের পরই সারাদেশের ন্যায় খুলনায়ও তালিকা করা হয় বৈধ-অবৈধ বেসরকারি স্বাস্থ্য প্রতিষ্ঠানের। ওই তালিকায় দেখা যায়, খুলনা মহানগরীতে ১০টি প্রতিষ্ঠানকে লাইসেন্সবিহীন বলে অবৈধ হিসেবে উল্লেখ করা হয়েছে। এর বাইরে অনলাইনে আবেদনকৃত তালিকা দেখানো হয়েছে ১৪টি। খুলনা মহানগরীতে লাইসেন্সকৃত ২৭০টি ক্লিনিক ও ডায়াগনষ্টিক সেন্টার রয়েছে বলেও তালিকায় দেখা যায়।
অবৈধ হিসেবে যে ১০টি প্রতিষ্ঠানের নাম উল্লেখ করা হয় তার মধ্যে নগরীর রতন সেন সরণীর একটি ফাউন্ডেশন পরিচালিত দু’টি প্রতিষ্ঠানের নাম রয়েছে। যার একটি হাসপাতাল ও অপরটি হাসপাতাল এন্ড ডায়াগনষ্টিক সেন্টার।
যদিও ওই প্রতিষ্ঠানের প্রশাসনিক কর্মকর্তা বলেন, তাদের প্রতিষ্ঠান দু’টি একটি চ্যারিটাবল সংস্থা পরিচালিত। সুতরাং সমাজসেবা থেকে নিবন্ধিত একটি সংস্থা পরিচালিত হাসপাতাল ও ডায়াগনষ্টিক সেন্টারের আবার স্বাস্থ্য অধিদপ্তর থেকে লাইসেন্স নিতে হবে এমনটি জানা ছিলনা। কিন্তু সম্প্রতি স্বাস্থ্য অধিদপ্তর থেকে এমন আদেশ জারি করার পর তারা ইতোমধ্যেই অনলাইনে আবেদন করেছেন বলেও তিনি জানান। এজন্য দু’লাখ ২৭ হাজার টাকা সরকারি ফিও জমা দেওয়া হয়েছে। রয়েছে ভ্যাট, আয়কর, পরিবেশের ছাড়পত্রসহ অনেক কাগজপত্রও।
স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের তালিকায় নগরীর নুর নগরের একটি সমিতি পরিচালিত আরও একটি হাসপাতাল এবং ডায়াগনষ্টিক সেন্টারের নামও রয়েছে। একই সমিতি পরিচালিত নগরীর স্যার ইকবাল রোডস্থ একটি প্রতিষ্ঠানের নামও স্থান পেয়েছে অবৈধ তালিকায়। এছাড়া নগরীর ইসলামপুর রোড, খালিশপুর এবং দৌলতপুরে বেসরকারি সংস্থা(এনজিও) পরিচালিত মোট তিনটি প্রতিষ্ঠানকে অবৈধ বলা হয়েছে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের পত্রে। তাছাড়া ১ নম্বর টুটপাড়া সেন্ট্রাল রোডে একটি বিদেশী সংস্থা পরিচালিত ডায়াগনষ্টিক সেন্টার এবং বি-১২ নম্বর মজিদ স্মরণিতে অবস্থিত একটি মাদকাসক্তি নিরাময় কেন্দ্রেরও লাইসেন্স নেই বলে জানান বিভাগীয় স্বাস্থ্য পরিচালক।
অপরদিকে, বিভাগের ১০ জেলার মধ্যে বাগেরহাটে ১৬টি, সাতক্ষীরায় ৬০টি, যশোরে পাঁচটি, নড়াইলে দু’টি লাইসেন্সবিহীন ও আটটি অনলাইনে আবেদনকৃত, ঝিনাইদহে ১৮টি, মাগুরায় ১২টি, মেহেরপুরে দু’টি এবং কুষ্টিয়ায় আটটি প্রতিষ্ঠান অবৈধ বলে উল্লেখ করা হয় স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের প্রতিবেদনে।
খুলনার বিভাগীয় স্বাস্থ্য পরিচালক ডাঃ মোঃ মনজুরুল মুরশিদ বিটিসি নিউজকে বলেন, বৈধ-অবৈধ বেসরকারি স্বাস্থ্য প্রতিষ্ঠানের তালিকা তৈরি করে ঢাকাস্থ স্বাস্থ্য অধিদপ্তরে পাঠানো হয়েছে। এখন পরবর্তী নির্দেশনার আলোকেই ব্যবস্থা নেওয়া হবে। তবে স্বাস্থ্যমন্ত্রীর ঘোষণা অনুযায়ী অবৈধ ক্লিনিক-ডায়াগনষ্টিক সেন্টারের মালিকপক্ষ যদি নিজেরাই সেগুলো বন্ধ করে দেন তাহলে আর অভিযানের প্রয়োজন হবে না। তা’ না হলে স্ব স্ব জেলা প্রশাসনের সহযোগিতায় ভ্রাম্যমান আদালতের মাধ্যমে অবৈধ প্রতিষ্ঠান বন্ধ করা হবে।
সাতক্ষীরার সিভিল সার্জন ডাঃ সুফিয়ান রুস্তম বিটিসি নিউজকে বলেন, জেলায় ৬০টি লাইসেন্সবিহীন ক্লিনিক ও ডায়াগনষ্টিক সেন্টার থাকলেও ২৫টির মতো প্রতিষ্ঠান রয়েছে রেজিষ্ট্রেশনের জন্য অনলাইনে আবেদনকৃত। নিয়মতান্ত্রিকভাবে সেগুলো পরিদর্শনের পর লাইসেন্স দেওয়া হবে। তবে এখনও যেসব প্রতিষ্ঠান লাইসেন্সের আওতায় আসেনি তাদের বিরুদ্ধে অভিযান অব্যাহত রয়েছে। এমনকি যে ঘটনাকে কেন্দ্র করে দেশব্যাপী এতো তোলপাড় সেই ঢাকার আয়ানের ন্যায় সাতক্ষীরার একটি ক্লিনিকেও গতকাল এ্যানেসথেসিয়াবিহীন ও.টি হচ্ছিল। সেখানে ভ্রাম্যমান আদালত পরিচালনা করে ডাক্তারকে সতর্ক করা হলেও ক্লিনিক মালিককে ৪০ হাজার টাকা জরিমানা করা হয়েছে। এমন অভিযান সাতক্ষীরায় অব্যাহত থাকবে বলেও তিনি জানান।
সংবাদ প্রেরক বিটিসি নিউজ এর খুলনা ব্যুরো প্রধান এইচ এম আলাউদ্দিন এবং মাশরুর মুর্শেদ। #

Comments are closed, but trackbacks and pingbacks are open.