কৃষ্ণ নগরে কাজী নজরুল ইসলামের মৃত্যুক্ষুধা ও নদী নাম সই অঞ্জনা 

ব্রাহ্মণবাড়িয়া প্রতিনিধি: রাজা কৃষ্ণচন্দ্রের ও হাসির রাজা গোপালভাঁড়ের রাজ্য কৃষ্ণ নগর। বেড়াতে এসেছি কৃষ্ণ নগরের বন্ধু চিত্র পরিচলক শ্রী উত্তর এর নিমন্ত্রনে। উত্তমের কাছে রাত্র কি কি দেখবো জানতে চাইলে সে আমাকে কাজী নজরুল ইসলামর সেখানে অবস্থানের কথা বলো যা আমার জানা ছিল না। সকালে আমাদের যাত্রা শুরু গ্রেস কটেজ দিয়ে।

কৃষ্ণ নগর ছোট শহর, কয়েক মিনিটের মধ্যেই আমরা পৌছে গেলাম  পাওয়ার হাউজের । সেই বাগিটিতে নাম ” গ্রেস কটেজ”। যেখানে জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলাম ১৯২৬ সালের ৩রা জানুয়ারী স্ত্রী প্রমীলাকে নিয়ে উঠেন। সেই সময় গ্রেস কটেজের পাশ দিয়ে স্রোতস্বনী অঞ্জনা নদী বয়ে যেত, তাই দেখে তিনি লিখলেন–নদীর নাম সই অঞ্জনা / ডাকে তীরে খঞ্জনা।

গ্রেস কটেজ এখন বর্তমান  কবি নামে লাইব্রেরি আছে    কাজী নজরুল ইসলামের একটি  মূর্তি আছে আছে কবির কিছু ছবি ।  বাংলো প্যাটানের বাড়ি। এই গ্রেস কটেজের পাশে ছিল মেহেদি গাছের বেড়া আর ঝুমকো জবার অনেকগুলো গাছ। প্রায়দিন সেই গাছে বেশ কয়েকটি বুলবুলি পাখি এসে বসেত, দোল খেত। তাই দেখে একদিন কবি গেয়ে উঠলেন,–”বাগিচায়-বুলবুলি তুই, ফুল শাখাতে দিসনে আজি দোল’’।

নজরুলের ”মৃত্যু ক্ষুধা” উপন্যাসে এই বাড়ি ও তাঁর আশে পাশের দরিদ্র খ্রিষ্টান ও মুসলিম সম্প্রদায়েকথা হুবহু উঠে এসেছে।

কৃষ্ণনগরে থাকাকালীন কবি খুব অর্থ কষ্টের মধ্যে পড়েন। ”দারিদ্র্য” কবিতাটি এই সময় রচিত। ১৯২৬ সালের ৯ই সেপ্টেম্বর তারিখে নজরুলের একটি পুত্র সন্তানের জন্ম হয় এই গ্রেস কটেজে। কবি নাম দেন–”বুলবুল”। বুলবুল শিশুবয়সেই বসন্ত রোগে মারা যায়। কবি খুব মুষড়ে পড়েন। তখনি তাঁর লেখনিতে প্রকাশ পায়–” শূন্য এ বুকে পাখি মোর / ফিরে আয় ফিরে আয়”। কৃষ্ণ নগরে কবির অবস্থান কাল ১৯২৪ থেকে ১৯২৮ সাল। এক সময় নজরুলকে বহরমপুর জেল থেকে কৃষ্ণ নগর জেলে আনা হয়। এই জেলে থাকা কালীন সময়ে নজরুল ইটের টুকরো দিয়ে জেলখানার মেঝেতে লিখেন সেই বিখ্যাত গানটি–এই শিকল পড়া ছল মোদের এই শিকল পড়া ছল।

বিদ্রোহী কবি কাজী নজরুল ইসলাম তাঁর জীবনের এক গুরুত্বপুর্ন সময় কৃষ্ণ নগরে বাস করেন। সেই সময় স্বাধীনতা আন্দোলনের এক নির্ভিক কর্মী রুপে নিজেকে উৎসর্গ করেন। তিনি একমাত্র কবি যিনি  বৃটিশ বিরোধী আন্দোলনে র প্রতিবাদ করে জেল খেটেছেন। কিন্তু নত হননি। ” শির নেহারী” আমারি নত শির ওই শিখর হিমাদ্রির”—বিদ্রোহীর এই দৃপ্ত ঘোষণা কেবল শাসকদেরই কাপিয়ে দেয়নি, পালাবদল ঘটিয়ে দিয়েছিল বাংলা কবিতারও। নজরুল ছিলেন সাম্যের কবি। তিনি কোন গোড়ামী, রক্ষনশীলতা, ধর্মন্ধতাকে কখনই প্রশ্রয় দেননি, বলেছেন-” হিন্দু না ওরা মুসলিম ওই জিজ্ঞাসে কোন জন? কান্ডারী বল ডুবিছে মানুষ সন্তান মোর মা’র”। এই অকপট স্পষ্ট দুর্বার নজরুল মানুষকে জাগিয়েছিলেন অন্যায়ের বিরুদ্ধ্যে, অবিচারের বিরুদ্ধে, শোষনের শৃংখল ভাঙ্গার আন্দোলনে।

মানুষকে ভালবেসে তিনি অসাম্যের বিরুদ্ধ্যে কলম ধরে বলেছিলেন- ‘মিথ্যা শুনিনি ভাই/ এই হৃদয়েচেয়ে বড় কোন মন্দির কাবা নাই।” পুঁথি সর্বস্ব যেসব মানুষ, সেই সব মানুষকে ঘৃনা করে তিনি তাদের জন্য লিখেছেন- পুজিছে গ্রন্থ ভণ্ডের দল মুর্খরা সবস শোন/ মানুষ এনেছে গ্রন্থ,- গ্রন্থ আনেনি মানুষ কোন।” মানব আত্মার যে কোন অপমানে গর্জে উঠেছেন- ‘শোন মানুষের বানী/ জন্মের পর মানব জাতীর থাকে না কোন গ্লানি।” নারী জাতির অসন্মানে লিখেছেন–” বিশ্বে যা কিছু মহান সৃস্টি চির কল্যাণকর/ অর্ধ্যেক তাঁর করিয়াছে নারী, অর্ধ্যেক তাঁর নর।

এখানে কাজী নজরুল ইসলামের নামে যাদুঘর কিংবা নজরুল ইন্সটিটিউট করা যেতে পারে। মুর্শিদাবাদ, বহরমপুর, কৃষ্ণনগরে নজরুল যে বিপ্লবী জীবন কাটিয়েছেন-তা তাঁর সাহিত্যে, কাব্যে কিংবদন্তি হয়ে আছে।

সংবাদ প্রেরক বিটিসি নিউজ এর ব্রাহ্মণবাড়িয়া প্রতিনিধি মোঃ লোকমান হোসেন পলা।#

Comments are closed, but trackbacks and pingbacks are open.