কিশোর গ্যাংয়ের নির্যাতনে আহত আরাফাত আইসিইউতে; জ্ঞান ফেরেনি ৫দিনেও

নিজস্ব প্রতিবেদক: রাজশাহী মহানগরীতে কিশোর গ্যাংয়ের লিডার সিহাবের নেতৃত্বে আরাফাত (১৭) নামের এক স্কুলছাত্রকে ধরে নিয়ে গিয়ে প্রায় ২ঘন্টা নির্যাতন চালিয়েছে বলে অভিযোগ উঠেছে। সেই নির্যাতনে পর ওই ছাত্রের জ্ঞান ফেরেনি ৫দিনেও। বর্তমানে তিনি রাজশাহী মেডিকেল কলেজ (রামেক) হাসপাতালের আইসিইউ’তে চিকিৎসাধীন রয়েছেন।
আহত মোঃ আরাফাত, সে রাজশাহী মহানগরীর চন্দ্রিমা থানার আসাম কলোনী (রবের মোড়) এলাকার দেলোয়ার হোসেনের ছেলে। স্থানীয় গোল্ডেং টার্চ স্কুলের ৯ম শ্রেণীর ছাত্র সে।
অপরদিকে, কিশোর গ্যাংয়ের লিডার সিহাব, মহানগরীর শাহমখদুম থানার নওদাপাড়া পোষ্টাল একাডেমির পেছনের বসতির মোঃ মনিরুলের ছেলে।
বুধবার (১ নভেম্বর) সকালে রামেকের আইসিইউ’তে (নিবিড় পরিচর্চাকেন্দ্র) গিয়ে কর্তব্যরত চিকিৎসকের সাথে কথা বলে জানা গেছে, আহত কিশোরের আরও একটি অপারেশন করতে হবে। তবে জ্ঞান না ফেরা পর্যন্ত গ্যারেন্টি দিয়ে কিছু বলা যাচ্ছে না।
আহত আরাফাতের বড় ভাই মোঃ হুমায়ুন কবির রনি জানায়, গত শুক্রবার (২৭ অক্টোবর) বিকাল ৬টা দিকে মহানগরীর শাহমখদুম থানার পবা নতুনপাড়া (গাং পাড়া) দিয়ে যাচ্ছিলো আরাফাত। এ সময় দেশীয় অস্ত্রে সজ্জিত কিশোর গ্যাংয়ের প্রধান সিহাব ও তার ১৫/২০ সঙ্গীরা আরাফাতকে অস্ত্রের মুখে জিম্মি করে আরডিএ বনলতা আবাসিকের পেছনে নিয়ে যায়। এ সময় তারা পুরো শরীরে জিআইপাইপ ও হাতুড়ি দ্বারা আঘাত করে। সেই সাথে চোখে চাকু মারে, পিঠে চাপাতি ও হাসুয়া দ্বারা কোপায় এবং মাথায় হাতুড়ি দ্বারা আঘাত করে। এই নির্যাতন চলে সন্ধা ৬টা থেকে রাত ৮টা পর্যন্ত। এক পর্যায়ে আরাফাত মাটিতে লুটিয়ে পড়লে কিশোর গ্যাংয়ের লিডার সিহাব ও তার সঙ্গীরা ওই স্থানে অস্ত্র হাতে উল্লাস করে এবং ভিডিও ধারন করে ঘটনাস্থল ত্যাগ করে।
পরে স্থানীয়রা আহত অবস্থায় এক কিশোরকে পড়ে থাকতে দেখে তার বাড়িতে খবর দেয়। খবর পেয়ে আরাফাতের বাড়ির লোকজন তাকে উদ্ধার করে রামেক হাসপাতালের জরুরী বিভাগে নিয়ে যান। ওই সময় কর্তব্যরত চিকিৎসক তাকে প্রাথমিক চিকিৎসা দিয়ে ছুটি দেন। পরে আরাফাতকে নিয়ে তারা স্বজনরা নিজ বাড়িতে আসেন। এদিন গভীর রাতে আরাফাত জ্ঞান হারিয়ে ফেলেন। সাথে সাথে তাকে রামেকের জরুরী বিভাগে নিয়ে গেলে কর্তব্যরত চিকিৎসক তাকে ৮নং ওয়ার্ডে ভর্তি করেন। তবে তার শারীরিক অবস্থার বিবেচনা করে ওয়ার্ডে না নিয়ে সরাসরি আইসিইউতে নেয়া হয়। শনিবার (২৮ অক্টোবর) ভোর থেকে আজ বুধবার সকাল পর্যন্ত জ্ঞান ফেরেনি কিশোর আরাফাতের। আইসিইউ’তেই মৃত্যুর সাথে পাজ্ঞা লড়ছেন এই কিশোর।
মোঃ হুমায়ুন কবির রনি আরও জানায়, এ ব্যপারে মঙ্গলবার রাতে তিনি বাদী হয়ে মহানগরীর শাহমখদুম থানায় একটি মামলা দায়ের করেছেন।
জানতে চাইলে শাহমখদুম থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) জানান, আহত কিশোরকে আঘাতের ঘটনায় তার বড় ভাই হুমায়ুন কবির রনি বাদী হয়ে শাহমখদুম থানায় এজাহার দায়ের করেছেন। কয়েকজনকে আটক করা হয়েছে। আসামীদের গ্রেফতারে অভিযান চলছে। পর্যায়ক্রমে সকল আসামীকে আইনের আওতায় আনা হবে বলেও জানান ওসি।
উল্লেখ্য, চলতি বছরের (১০ মার্চ) শুক্রবার জুম্মারর নামাজের পর কবর জিয়ারত করে বাড়ী ফিরছিলেন কিশোর আবির (১৬)। এদিন আগে থেকেই ওঁৎ পেতে থাকা কিশোর গ্যাং লিডার সিহাব ও তার সহযোগীরা আবিরের বাড়ির গেটে পেছন থেকে হামলা করে। এ সময় তার মাথা-সহ পুরো মুখমন্ডল ক্ষত বিক্ষত করে গুরুতর আহত করে। পরে তাকে রামেকে ভর্তি করা হয়। জ্ঞান ফেরে ১দিন পরে। এদিন সরেজমিনে সাংবাদিকদের উপস্থিতিতে পুলিশ কিশোর আবিরকে আঘাত করা মোটা কাঠ ও রক্তে ভেজা জামা কাপড় জব্দ করে থানায় নিয়ে যায়। কিন্তু শেষ পর্যন্ত সেই আলামত আদালতে জমা হয়নি। এমনকি শাহমখদুম থানা পুলিশ অজ্ঞাত কারণে আলামতের বিষয়টিও অস্বীকার করেছে বলে দাবি করেছেন, ভুক্তভোগী আবিরের মা আফরোজা বেগম। সেই সকল ছবি ও ভিডিও তাদের সংগ্রহে রয়েছে।
একাধিক স্থানীয়দের দাবি, গাংপাড়া এলাকায় তুচ্ছ ঘটনাকে কেন্দ্র করে পবা নতুনপাড়া (গাংপাড়া) বসতি ঢুকে বাড়ি ঘরে ভাংচুর হামলা চালায় বেপরোয়া গ্যাং লিডার সিহাব ও সহযোগীরা। ইতিপূর্বে এই ধরনের একাধিক ঘটনা তারা ঘটিয়েছে। তাদের আশ্রয়-প্রশ্রয়দাতাদের সহ এই সন্ত্রাসী সিহাব ও তার সহযোগীদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা গ্রহণের মধ্যে দিয়ে শাহমখদুম থানা এলাকা থেকে সকল অপরাধ নিমূলের দাবি স্থানীয়দের।
সংবাদ প্রেরক বিটিসি নিউজ এর নিজস্ব প্রতিনিধি মো.মাসুদ রানা রাব্বানী / রাজশাহী। #

Comments are closed, but trackbacks and pingbacks are open.