কানেক্টিভিটি বাড়ানোর ক্ষেত্রে যে চার ক্ষেত্রে গুরুত্ব দিচ্ছে ভারত

 

বিটিসি নিউজ ডেস্ক: দক্ষিণ এশিয়ায় আঞ্চলিক সংযোগ বা কানেক্টিভিটি বাড়ানোর ক্ষেত্রে ভারত ও বাংলাদেশের মধ্যে সাম্প্রতিক কালে যে যুগান্তকারী পটপরিবর্তন হয়েছে তা কোনও নতুন কথা নয়। তবে সেই কানেক্টিভিটিকে এবার ভারত পুরো এশীয়-প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চলে প্রসারিত করতে চায়, নয়াদিল্লি গতকাল ১ নভেম্বর বৃহস্পতিবার সে কথাই পরিষ্কার করলো।

একইসঙ্গে বাংলাদেশের সঙ্গে সংযোগ বাড়ানোর ক্ষেত্রে ভারত যে চারটি বিষয়কে বিশেষ গুরুত্ব দিচ্ছে সেগুলোও সবিস্তারে তুলে ধরলেন ভারতীয় পররাষ্ট্র সচিব বিজয় কেশব গোখলে।

আমেরিকা ও জাপানের উদ্যোগে ভারতের রাজধানী নয়াদিল্লিতে এদিন যে আঞ্চলিক কানেক্টিভিটি কনফারেন্স অনুষ্ঠিত হলো, সেখানেই ভারত সরকারের এই পরিকল্পনার কথা বলেন তিনি।

পশ্চিম সীমান্তে ভারতের কানেক্টিভিটি প্রসারিত করার চেষ্টা যে পাকিস্তানের জন্যই বাধাপ্রাপ্ত হচ্ছে, সেটা জানাতেও কোনও রাখঢাক করেননি পররাষ্ট্র সচিব।

প্রসঙ্গত, এর আগে সার্কভুক্ত দেশগুলোতে অবাধ মোটরযান চলাচলের প্রস্তাব আটকে যায় পাকিস্তানের আপত্তিতেই। যে কারণে বাংলাদেশ, ভুটান, ভারত ও নেপালকে নিয়ে আলাদা একটি ‘বিবিআইএন’ ফ্রেমওয়ার্কের অবতারণা করা হয়।

পররাষ্ট্র সচিব গোখলে আরও বলেছেন, পাকিস্তানে একটি ‘আনউইলিং রেজিম’ (অনিচ্ছুক সরকার) আছে বলেই পশ্চিমে সংযোগের চেষ্টা ব্যাহত হচ্ছে। এই কারণেই ভারত বাধ্য হয়েছে আকাশপথে আফগানিস্তানের সঙ্গে ‘এয়ার ফ্রেট করিডর’ স্থাপন করতে।

আর পশ্চিমে এই ধরনের বাধা আসছে বলেই সম্ভবত পুবে বাংলাদেশের সহযোগিতা ভারতের আঞ্চলিক কানেক্টিভিটিকে একটা আলাদা মাত্রা দিয়েছে।

বিজয় কেশব গোখলে তার বক্তৃতায় বাংলাদেশের সঙ্গে সংযোগ বাড়ানোর ক্ষেত্রে ভারত যে চারটি বিষয়কে বিশেষ গুরুত্ব দিচ্ছে সেগুলো তুলে ধরেন।

১. দুদেশের মধ্যে রেল ও সড়ক সংযোগ স্থাপন ও পুরনো সংযোগগুলোর আপগ্রেডেশন (আধুনিকীকরণ): এই মুহূর্তে মৈত্রী এক্সপ্রেস (ঢাকা-কলকাতা) ও বন্ধন এক্সপ্রেস (খুলনা-কলকাতা) চলছে দুদেশের মধ্যে। আরও অন্তত চারটি রেল সংযোগ চালু আছে (গেদে-দর্শনা, রাধিকাপুর-বিরোল, সিংহাবাদ-রোহনপুর এবং পেট্রাপোল-বেনাপোল)। এছাড়াও কাজ চলছে হলদিবাড়ি-চিলাহাটি, চ্যাংড়াবান্ধা-বুড়িমারি এবং আগরতলা-আখাউড়ার মতো পুরনো সংযোগগুলো পুনরুজ্জীবিত করার।

২. কনটেইনার ডিপো নির্মাণ: ঢাকার কাছে পানগাঁও নদীবন্দরে বা মেঘনা নদীর ওপরে আশুগঞ্জ নদীবন্দরে ডিপো নির্মিত হয়েছে। চট্টগ্রাম ও মোংলাতেও ভারত অ্যাকসেস পাওয়ার পর সেখানেও ভারত কনটেইনার ডিপো নির্মাণে আগ্রহী হবে।

৩. ইনল্যান্ড ওয়াটার ট্রান্সপোর্ট বা অভ্যন্তরীণ নদীপথ পরিবহন: নদীপথ পরিবহনকেই ভারত ও বাংলাদেশ এই মুহূর্তে সবচেয়ে অগ্রাধিকার দিচ্ছে। কলকাতা থেকে নদীপথে ঢাকা পর্যন্ত পণ্য পরিবহন গত বছরই শুরু হয়ে গেছে। দিনকয়েক আগে যাত্রী পরিবহনের এসওপি চূড়ান্ত হওয়ার পর ওই পথে বিলাসবহুল প্রমোদতরী বা ক্রুজ চরাও এখন সময়ের অপেক্ষা।

৪. আন্তঃসীমান্ত ‘এনার্জি কানেক্টিভিটি’র পুনরুজ্জীবন: বিদ্যুৎ থেকে পেট্রোলিয়াম পণ্য— সব ধরনের এনার্জি সংযোগ। পশ্চিমবঙ্গের ভেড়ামারা বা ত্রিপুরার পালাটানা থেকে বাংলাদেশে অনেকদিন ধরেই বিদ্যুৎ যাচ্ছে। আসামের নুমালিগড় থেকে বাংলাদেশের পার্বতীপুর পর্যন্ত তেল পাইপলাইন বসানোর কাজও অনেক দূর এগিয়ে গেছে।

তবে পররাষ্ট্র সচিব বিজয় গোখলের ভাষণে সম্ভবত সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বক্তব্য ছিল, দক্ষিণ এশিয়ার এই আঞ্চলিক কানেক্টিভিটিকে এখন এশিয়া-প্যাসিফিকে প্রসারিত করার সময় এসেছে। অর্থাৎ, জাপান ও আমেরিকার সাহায্য নিয়ে ভারত ও বাংলাদেশের কানেক্টিভিটিকে এখন দেশের সীমানা ছাড়িয়ে নতুন মহাদেশের দিগন্তে নিয়ে যাওয়াটাই হবে আগামী দশকের চ্যালেঞ্জ।#

Comments are closed, but trackbacks and pingbacks are open.