কর্মচারীর হামলায় হাবিপ্রবির পাঁচ শিক্ষক গুরুতর আহত

হাবিপ্রবি (দিনাজপুর) প্রতিনিধি: দিনাজপুরের হাজী মোহাম্মদ দানেশ বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের (হাবিপ্রবি) ইঞ্জিনিয়ারিং অনুষদের সিভিল ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের কর্মচারী তাজুল ইসলামের হামলায় একই বিভাগের ৫ জন শিক্ষক গুরুতর আহত হয়ে হাসপাতালে ভর্তি আছেন।
সিভিল ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের আহত শিক্ষকরা হলেন, সহযোগী অধ্যাপক মো. বেলাল হোসাইন, সহকারী অধ্যাপক ও বিভাগীয় চেয়ারম্যান মো. রোকনুজ্জামান, প্রভাষক নির্মল চন্দ্র রায়, প্রভাষক হারুন আর রশিদ ও নবনিযুক্ত প্রভাষক মো. মাহবুবুর রহমান।
দিনাজপুরের এম আব্দুর রহিম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে সরজমিনে গিয়ে দেখা যায়, আহত শিক্ষকদের হতে, মাথায় ব্যান্ডেজ এবং প্রচুর রক্তক্ষরণ হয়েছে। এছাড়াও তাদের সারা শরীরে আঘাতের চিহ্ন রয়েছে।
আহত সহযোগী অধ্যাপক বেলাল হোসেন বলেন, কর্মচারী তাজুল মাঝে মধ্যেই শিক্ষকদের সাথে এমন রূঢ আচরণ করতো। কিন্তু আমরা আমলে নিতাম না। আজকে আমি সহ ৫ জন শিক্ষক আমার চেম্বারে ছিলাম। তাজুল অফিসে দেরি করে আসায় সাধারণভাবেই আমি তাকে দেরি করার কারণ জানতে চাই। এসময় সে যথেষ্ঠ আক্রমণাত্মক ভঙ্গিতে কথা বলে এবং চিৎকার করতে থাকে।
এরআগেও যেহেতু তাজুল নানা সময়ে এমন আচরণ করেছে, এজন্য তাজুলের এমন আচরণে আমরা ওনার নামে একটি অভিযোগ পত্র প্রশাসন বরাবর লিখতে গেলে সে অফিস থেকে মগ নিয়ে এসে আজকেই জয়েন করা নতুন প্রভাষক মাহবুবুর রহমানের মাথায় প্রথমে আঘাত করে। পরবর্তীতে প্রভাষক নির্মল বাধা দিতে গেলে তাকেও আঘাত করে। এরপর প্রভাষক হারুন এবং আমাকে আঘাত করে।
সবশেষে সহকারী অধ্যাপক রনিকেও আঘাত করে তাজুল। এরপর আমাদের সবাইকে মেরে ফেলবে বলে পিছনে ধাওয়া করতে থাকে। আমরা অফিস থেকে আতঙ্কিত হয়ে বের হয়ে আসি। পরে অনুষদের অন্যান্য স্যারদের সহযোগিতায় আমাদের হাসপাতালে ভর্তি করা হয়।
তিনি আরো বলেন, একজন কর্মচারী হয়ে বিভাগের ৫ জন শিক্ষকের ওপর হামলা ইতিহাসে একটা নেক্কারজনক ঘটনা। মাত্র ২-৩ মিনিটের বিভীষিকাময় ঘটনায় আমরা সবাই আতঙ্কিত হয়ে পড়েছিলাম নিজেদের জীবন নিয়ে। এরকম ঘটনায় তার দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি নিশ্চিত করতে হবে।
বুধবার (১৬ নভেম্বর) সকাল ৯ টায় ইঞ্জিনিয়ারিং অনুষদের সিভিল ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের অফিস কক্ষে ঢুকে ধারালো কাঁচ দিয়ে উপস্থিত বিভাগীয় শিক্ষকদের মারাত্মকভাবে আহত, যখম ও রক্তাক্ত করেন ওই বিভাগেরই অফিস সহায়ক মো. তাজুল ইসলাম। এ কারনে তৎক্ষণাৎ বিশ্ববিদ্যালয়ের ধারা অনুযায়ী তাকে চাকুরী থেকে সাময়িক বহিষ্কার করে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন।
এদিকে খবর জানাজানি হয়ে গেলে ক্ষোভে ফেটে পড়েন ইঞ্জিনিয়ারিং অনুষদের শিক্ষার্থীরা। আক্রমণকারী কর্মচারীকে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টরের গাড়িতে করে নিয়ে যাওয়ার সময় ক্ষুদ্ধ শিক্ষার্থীরা উপাচার্যের বাস ভবনের সামনে গাড়ি ঘেরাও করে এবং উপযুক্ত শাস্তির দাবিতে উপাচার্যের বাড়ির সামনেই অবস্থান কর্মসূচি পালন করেন। ক্ষুদ্ধ শিক্ষার্থীরা ইঞ্জিনিয়ারিং অনুষদের একাডেমিক ভবনেও তালা দেন। পরবর্তীতে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের সাথে শিক্ষার্থীদের সমঝোতার মাধ্যমে অভিযুক্ত কর্মচারীকে পুলিশের হাতে সোপর্দ করা হয়।
শিক্ষকদের আক্রমণকারী কর্মচারীকে স্থায়ী বহিষ্কার করে জুতার মালা পরিয়ে কান ধরে ক্যাম্পাস থেকে বের করা এবং সর্বোচ্চ আইনগত ব্যবস্থা নেওয়ার দাবি জানিয়ে উপাচার্যের বাসভবনের সামনে অবস্থান কর্মসূচি পালন করে শিক্ষার্থীরা।
এ বিষয়ে হাবিপ্রবির উপাচার্য অধ্যাপক ড. এম কামরুজ্জামান বিটিসি নিউজকে বলেন, প্রক্টর মহোদয়ের সাথে যোগাযোগ করেন আর আমরা বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন অনুযায়ী সম্ভাব্য সকল ব্যবস্থা গ্রহণ করছি।
বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর অধ্যাপক ড. মো. মামুনুর রশিদ বিটিসি নিউজকে বলেন, আমরা তার বিরুদ্ধে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের পক্ষ থেকে সর্বোচ্চ পরিমাণ শাস্তির ব্যবস্থা করবো, ইতোমধ্যেই তাঁকে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন থেকে সাময়িক বহিষ্কার আদেশ দেওয়া হয়েছে। অভিযুক্ত কর্মচারীকে তদন্ত সাপেক্ষে স্থায়ীভাবে বহিষ্কারের সিদ্ধান্ত নিবে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন।
ঘটনাটির তদন্ত করে তিনদিনের মধ্যে অভিযুক্ত কর্মচারীকে স্থায়ী বহিষ্কারের জন্য কার্যকরী পদক্ষেপ নেওয়া হবে বলে জানান ইঞ্জিনিয়ারিং অনুষদের ডিন অধ্যাপক ড. সাজ্জাত হোসাইন সরকার।
সংবাদ প্রেরক বিটিসি নিউজ এর হাবিপ্রবি (দিনাজপুর) প্রতিনিধি মোঃ মিরাজুল আল মিশকাত। #

Comments are closed, but trackbacks and pingbacks are open.