করোনায় বাংলাদেশ ডাকবিভাগের উদ্যোগে বিনা ভাড়ায় ঢাকায় আম পাঠানোর কার্যক্রমের উদ্বোধন

বিশেষ প্রতিনিধি: করোনা ভাইরাস মহামারীর এই দুর্যোগকালে আমের রাজধানী খ্যাত রাজশাহীর আম বিনা ভাড়ায় ঢাকায় নিয়ে যাচ্ছে বাংলাদেশ ডাক বিভাগ। কৃষকবন্ধু ডাক সেবার আওতায় এর মাধ্যমে কেবল ক্ষুদ্র ও মাঝারি চাষিরা আম পাঠাতে পারবেন।

আজ মঙ্গলবার (০২ জুন) দুপুরে রাজশাহীর পুঠিয়ার এক আম চাষির ৫ টন আম ঢাকায় পাঠিয়ে এই কার্যক্রমের উদ্বোধন করা হয়। অনলাইনে এই কার্যক্রমের উদ্বোধন করেন ডাক ও টেলিযোগাযোগ মন্ত্রী মোস্তফা জব্বার। এ সময় সচিব নুর উর রহমানসহ ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।

পুঠিয়া উপজেলা নির্বাহী অফিসারের কার্যালয় থেকে রাজশাহীর জেলা প্রশাসক মো. হামিদুল হক, জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক শামসুল হক, রাজশাহী ডাক বিভাগের পরিচালক রশিদ কুমার শীল, উত্তরাঞ্চলের পোস্টমাস্টার জেনারেল শফিকুল আলম, পুঠিয়া উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান জিএম হিরা বাচ্চু, উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) ওলিউজ্জামানসহ কৃষি ও ডাক বিভাগের সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তা এবং আম চাষিরাও উপস্থিত ছিলেন। সেই সময় অনলাইনে কনফারেন্সের মাধ্যমে মন্ত্রী মোস্তাফা জব্বার তাদের সঙ্গে কথা বলেন।

বাংলাদেশ ডাক বিভাগের ডেপুটি পোস্ট মাস্টার জেনারেল মোহাম্মদ ওয়াহিদ উজ-জামান জানান, ডাক বিভাগের মাধ্যমে বিনা খরচে ঢাকায় আম পাঠাতে হলে প্রান্তিক চাষিরা নিজ নিজ এলাকার কৃষি কর্মকর্তাকে অবহিত করবেন। কৃষি কর্মকর্তা তালিকা করে জেলা প্রশাসককে দেবেন। জেলা প্রশাসক তালিকা চূড়ান্ত করে দেবেন। তারপর বিনাখরচেই পর্যায়ক্রমে সবার আম ঢাকায় নিয়ে যাওয়া হবে।

জেলা প্রশাসক হামিদুল হক বলেন, দুর্যোগকালে প্রান্তিক চাষিদের সুবিধা দিতে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নির্দেশনা রয়েছে। সে অনুযায়ী বিনাখরচে মৌসুমি ফল নিয়ে যাওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে ডাক, টেলিযোগাযোগ ও তথ্য-প্রযুক্তি মন্ত্রণালয়। মাঠ পর্যায়ে তারা এটি বাস্তবায়ন শুরু করেছেন। এর মাধ্যমে প্রকৃত চাষিরা উপকৃত হবেন। তারা ঢাকায় ক্রেতা ঠিক করে বিনাখরচে আম নিয়ে যাবেন।

উল্লেখ্য, রাজশাহী জেলায় আম বাগান রয়েছে ১৭ হাজার ৬৮৬ হেক্টর জমিতে। এবার আম উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে ২ লাখ ১০ হাজার মেট্রিক টন। অপরিপক্ক আম নামানো ঠেকাতে গেল চার বছরের মতো এবারও আম নামানোর সময় নির্ধারণ করে দেয় জেলা প্রশাসন।

সে অনুযায়ী গত ১৫ মে থেকে গুটি আম, গত ২০ মে থেকে গোপালভোগ, গত ২৫ মে থেকে রানীপছন্দ ও লক্ষণভোগ বা লখনা এবং গত ২৮ মে থেকে হিমসাগর বা খিরসাপাত নামানোর সময় শুরু হয়েছে। ল্যাংড়া ৬ জুন, আম্রপালি আগামী ১৫ জুন এবং ফজলি আগামী ১৫ জুন থেকে নামানো যাবে। সবার শেষে ১০ জুলাই থেকে নামবে আশ্বিনা এবং বারী আম-৪ জাতের আম।

গাছে গাছে ঝুলে থাকা আম দেখে চাষিদের স্বপ্ন যখন দুলছিল তখন গত ২২ মে ঘূর্ণিঝড় আপ্নানের প্রভাবে রাজশাহীতে ঝড়-বৃষ্টিতে প্রচুর আম ঝরে যায়। কৃষি বিভাগের হিসাব অনুযায়ী, সেদিন গাছের ১৫ শতাংশ আম ঝরে পড়েছে। এতে চাষিদের প্রায় ১২০ কোটি টাকার ক্ষতি হয়েছে বলে ধারনা করা হয়।  আম্ফার যেতে না যেতেই গত ২৬ মে রাতে কালবৈশাখীতে ঝরে আরও অনেক আম। ইতোমধ্যেই হাটে উঠতে শুরু করেছে আম।

করোনার প্রাদুর্ভাবে বাজারজাত নিয়ে যেন সমস্যা না হয় সে জন্য এবারই প্রথম শুধু আমের জন্য চাঁপাইনবাবগঞ্জ থেকে প্রয়োজনীয় সংখ্যক ট্রেন চলবে। ট্রেনে দেড় টাকায় চাঁপাইনবাবগঞ্জ থেকে এবং এক টাকা ৩০ পয়সা কেজি ভাড়ায় আম ঢাকায় নেয়া যাবে। ঢাকায় গিয়ে ব্যবসায়ীদের সুবিধামতো স্টেশনে আম নামানো হবে। কুরিয়ার সার্ভিসগুলোও আম পাঠাবে দেশের বিভিন্ন স্থানে। সবশেষে যুক্ত হলো বাংলাদেশ ডাক বিভাগ।

সংবাদ প্রেরক বিটিসি নিউজ এর বিশেষ প্রতিনিধি রুহুল আমীন খন্দকার। #

Comments are closed, but trackbacks and pingbacks are open.