করোনার প্রভাবে বেকার নাটোরের ঔষধি গ্রামের সাড়ে চার হাজার চাষী

নাটোর প্রতিনিধি: নাসিম উদ্দীন নাসিম -ঔষধি গ্রামে উৎপাদিত প্রতি কেজি ঘৃতকুমারী পাইকারি বিক্রি করেন ২০ টাকায়। প্রতিদিন এই গ্রামে ৭৫ হাজার কেজি ঘৃতকুমারী বেচাকেনা হয়। সে হিসাবে তাঁদের প্রতিদিন লোকসান গুনতে হচ্ছে ২০ লাখ টাকা।

করোনার প্রভাবে পাইকাররা না আসায় গত ২৩ দিনে তাঁদের লোকসানের পরিমাণ দাঁড়িয়েছে প্রায় তিন কোটি টাকা। এ ছাড়া অন্যান্য গাছগাছড়া অবিক্রীত অবস্থায় পচে যাওয়ার ফলে আরও ২০ লাখ টাকা ক্ষতির আশঙ্কা আছে। এভাবে চলতে থাকলে পথে বসতে হবে ভেষজ চাষীদের। ইতিমধ্যে বেকার হয়ে গেছে ঔষধি গ্রামের সাড়ে চার হাজার চাষী ।

কথাগুলো বলছিলেন ভেষজ গ্রামের চাষি সমবায় সমিতির সভাপতি জয়নাল হোসেন।

আজ বৃহস্পতিবার সকালে এ প্রতিবেদকের সঙ্গে আলাপকালে তার সঙ্গে সুর মেলান পাশে দাঁড়িয়ে থাকা আরো ১৫ থেকে ২০ জন ভেষজ চাষী। খোঁজ নিয়ে জানা গেছে,এসবই করোনা ভাইরাসের প্রভাব। করোনার প্রভাবে বিপাকে পড়েছেন দেশের একমাত্র ভেষজ ঔষধি গ্রাম নাটোর সদর উপজেলার লক্ষ্মীপুর খোলাবাড়িয়ার সাড়ে চার হাজার চাষি, ব্যবসায়ী, হকার ও শ্রমিক বেকার হয়ে পড়েছেন।

গত ২৩ দিনে তাঁদের লোকসান হয়েছে প্রায় তিন কোটি টাকা। পচনশীল পণ্য হওয়ায় প্রতিদিন ১৫ লাখ টাকা লোকসান গুনতে হচ্ছে তাঁদের।

নাটোর সদর উপজেলা কৃষি কর্মকর্তার কার্যালয় বিটিসি নিউজ এর প্রতিবেদককে জানান, ঔষধি গ্রামে ১ হাজার ৫০ বিঘা জমিতে ঘৃতকুমারী (অ্যালোভেরা), শিমুল মূল, অর্জুন, বাসকপাতা, কালোমেঘ, লজ্জাবতী, অশ্বগন্ধাসহ ২২ প্রজাতির ভেষজ ঔষধি গাছের চাষ হয়।

প্রতিদিন সকালে ভেষজ চাষিরা জমি থেকে এসব গাছগাছড়া সংগ্রহ করে সমিতির মাধ্যমে ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে নিয়ে যান। এ গ্রামেই রয়েছে ভেষজ হাট এবং বাজার। করোনার প্রভাবে হাটবাজার বন্ধ হয়ে গেছে। ফলে আসছে না পাইকার এবং ঔষধ কোমপানীগুলোর প্রতিনিধিরা। জমিতেই ঘৃতকুমারী, শিমুল মূল সহ ভেষজ গাছগাছড়ার পাতা ও মূল পচে নষ্ট হয়ে যাচ্ছে ।
আজ বৃহস্পতিবার দুপুরে ঔষধি গ্রামে গিয়ে দেখা যায়, লক্ষ্মীপুর ও আমীরগঞ্জের ভেষজবাজারের সব দোকানপাট বন্ধ।

পাইকারি আড়তের সামনে স্তূপ করে রাখা ঘৃতকুমারীতে পচন ধরেছে। উৎপাদনের ভরা এ মৌসুমে জমিতে চাষী ও শ্রমিকদের
চিরাচরিত কর্মচাঞ্চল্য এখন নেই । শুয়ে বসে দিন কাটছে কর্মহীন তাদের ।

বাজার বন্ধ। আড়তের সামনে স্তূপ করে রাখা হয়েছে ঘৃতকুমারী। নাটোর সদর উপজেলার আমীরগঞ্জ ভেষজবাজারে সোমবার বেলা ১১টায়। ছবি: প্রথম আলোবাজার বন্ধ। আড়তের সামনে স্তূপ করে রাখা হয়েছে ঘৃতকুমারী। নাটোর সদর উপজেলার
আমীরগঞ্জ ভেষজবাজারে সোমবার বেলা ১১টায়।

একমাত্র ভেষজ ঔষধি গ্রাম নাটোর সদর উপজেলার লক্ষ্মীপুর খোলাবাড়িয়ার সাড়ে চার হাজার চাষি, ব্যবসায়ী, হকার ও শ্রমিক বেকার হয়ে পড়েছেন। গত ২০ দিনে তাঁদের লোকসান হয়েছে প্রায় তিন কোটি টাকা। পচনশীল পণ্য হওয়ায় প্রতিদিন ১৫ লাখ টাকা লোকসান গুনতে হচ্ছে তাঁদের।

নাটোর সদর উপজেলা কৃষি কর্মকর্তার কার্যালয় সূত্রে জানা যায়, গ্রামটিতে সারা বছর ১ হাজার ৫০ বিঘা জমিতে ঘৃতকুমারী (অ্যালোভেরা), শিমুল মূল, অশ্বগন্ধাসহ ২২ প্রজাতির ভেষজ ঔষধি গাছের চাষ হয়। ভোর থেকে চাষিরা জমি থেকে এসব
গাছগাছড়া সংগ্রহ করে পাইকারি আড়তের মাধ্যমে ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে নিয়ে যান।

গ্রামেও গড়ে উঠেছে ভেষজ হাটবাজার। করোনার প্রভাবে এসব হাটবাজার বন্ধ হয়ে গেছে। ঘৃতকুমারীসহ অন্যান্য গাছগাছড়ার পাতা ও মূল পচে নষ্ট হয়ে যাচ্ছে।

গত সোমবার সকালে ঔষধি গ্রামে গিয়ে দেখা যায়, লক্ষ্মীপুর ও আমীরগঞ্জের ভেষজবাজারের সব দোকানপাট বন্ধ। পাইকারি আড়তের সামনে ঘৃতকুমারীর পাতা স্তূপ করে রাখা। কিছু কিছু পাতায় পচন ধরেছে। উৎপাদনের ভরা মৌসুম হওয়ায় এ সময়
জমিতে শ্রমিকদের কর্মব্যস্ততা থাকার কথা থাকলেও তা চোখে পড়েনি।

লক্ষ্মীপুর বাজারের ভেষজ ব্যবসায়ী মতিন ব্যাপারী বিটিসি নিউজ এর প্রতিবেদককে জানান, ঔষধি গ্রামের সাড়ে চার হাজার মানুষ ভেষজ চাষের উপর নির্ভরশীল ।করোনার জন্য হাট বাজার এবং পরিবহণ বন্ধ ।তাই সবাই বেকার হয়ে গেছে । এভাবে আর কয়েকদিন চললে আমাদের পথে বসতে হবে । ঔষধি গ্রামের চাষীদের বাঁচাতে সরকারের পক্ষ থেকে কৃষি প্রনোদনা দেওয়ার জন্য দাবী জানাচ্ছি ।

সদর উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা মেহেদুল ইসলাম বিটিসি নিউজ এর প্রতিবেদককে জানান, ঔষধি গ্রামের কৃষকদের চলমান পরিস্থিতি সামাল দিতে সরকারের প্রণোদনা প্যাকেজের আওতায় আনা নিয়ে উচ্চ পর্যায়ে আলোচনা চলছে। বর্তমানে ক্ষতির পরিমাণ কীভাবে কমানো যায়, সে ব্যাপারে কৃষকদের পরামর্শ দেওয়া হচ্ছে।

সংবাদ প্রেরক বিটিসি নিউজ এর নাটোর প্রতিনিধি খান মামুন। #

Comments are closed, but trackbacks and pingbacks are open.