এসিডি পরিচালিত জরিপের ফল রংপুর নগরীর ৯০% তামাকপণ্যের দোকানে অবৈধ বিজ্ঞাপন-প্রণোদনা

প্রেস বিজ্ঞপ্তি: রংপুর মহানগরীর ৯০% তামাকপণ্যের দোকানে তামাকের বহুজাতিক কোম্পানিগুলোর আইন বহির্ভূত অবৈধ বিজ্ঞাপন, পুরস্কার-প্রণোদনা ও পণ্য প্রদর্শিত হচ্ছে। মহানগরীর ৩৩টি ওয়ার্ডে সম্প্রতি পরিচালিত ‘তামাকজাত পণ্যের বিজ্ঞাপন, প্রচার, প্রণোদনা ও পৃষ্ঠপোষকতা’ শীর্ষক এক জরিপের প্রতিবেদনে তামাক নিয়ন্ত্রণ আইন লঙ্ঘনের ভয়াবহ এ চিত্র উঠে আসে। দাতা সংস্থা ‘ক্যাম্পেইন ফর টোব্যাকো ফ্রি কিড্স-সিটিএফকে’ এর সহযোগিতায় উন্নয়ন ও মানবাধিকার সংস্থা ‘এ্যাসোসিয়েশন ফর কম্যুনিটি ডেভেলপমেন্ট-এসিডি’ জরিপটি পরিচালনা করে।

গত বছরের জানুয়ারিতে নগরীর ৩৩টি ওয়ার্ডে সরেজমিন পর্যবেক্ষণ করে ৪৮৪৫ টি তামাকপণ্যের বিক্রয় কেন্দ্রের (point of sale)  একটি লিস্ট (তালিকা) করা হয়। পরবর্তীতে এই দোকানগুলোর মধ্যে দ্বৈবচয়নের ভিত্তিতে ৩৯২ টি দোকানের ওপর একটি বেসলাইন জরিপ পরিচালিত হয়। আজ মঙ্গলবার (১৪ জানুয়ারী ২০২০) বেলা ১১টায় নগরীর ‘লার্নিং এন্ড রিসার্চ সেন্টারে (এলআরসি ভবন)’ অনুষ্ঠিত এক সংবাদ সম্মেলনে আনুষ্ঠানিকভাবে জরিপের এ ফলাফল তুলে করা হয়।

রংপুর অঞ্চলের তামাক নিয়ন্ত্রণ কোয়ালিশনের ফোকাল পার্সন সুশান্ত ভৌমিকের সভাপতিত্বে সংবাদ সম্মেলনে প্রধান অতিথি ছিলেন- রংপুর মহানগর পুলিশের (কোতয়ালি জোন) সহকারি পুলিশ কমিশনার (এসি) মো. জমির উদ্দিন। সংবাদ সম্মেলনে শুভেচ্ছা বক্তব্য দেন- ‘এসিডি’র ডিরেক্টর (প্রোগ্রাম) শারমিন সুবরীনা। সংস্থার মিডিয়া ম্যানেজার আমজাদ হোসেন শিমুলের উপস্থাপনায় এসময় বিশেষ অতিথি ছিলেন- ‘সিটিএফকে’র গ্র্যান্ট্স ম্যানেজার (বাংলাদেশ) আব্দুস সালাম মিয়া। সংবাদ সম্মেলনে অন্যদের মধ্যে এসিডির এডভোকেসি অফিসার মো. তুহিন ইসলাম, প্রোগ্রাম অফিসার মো. তৌফিকুল ইসলাম প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন। এসময় ‘তামাকজাত পণ্যের বিজ্ঞাপন, প্রচার, প্রণোদনা ও পৃষ্ঠপোষকতা’ শীর্ষক জরিপের প্রতিবেদন পাওয়ার পয়েন্টে উপস্থাপন করেন ‘এসিডি’র এডভোকেসি অফিসার মো. শরিফুল ইসলাম শামীম।

এসময় জানানো হয়, ধূমপান ও তামাকজাত দ্রব্য ব্যবহার (নিয়ন্ত্রণ) আইন-২০০৫ (সংশোধিত আইন-২০১৩) এর ৫ ধারা অনুযায়ী, কোনোভাবেই তামাকজাত দ্রব্যের বিজ্ঞাপন প্রচার করা যাবে না। এছাড়া তামাক কোম্পানি কর্তৃক কাউকে কোনো ধরনের পুরস্কার-প্রণোদনা (তামাক কোম্পানির লোগো সম্বলিত টি-শার্ট, শো-কেস, ছাতা, মগ, লাইটার ইত্যাদি) প্রদান আইনগতভাবে নিষিদ্ধ। আইনের বিধি লঙ্ঘনকারীর অনূর্ধ্ব তিন মাস কারাদ- বা অনধিক ১ লাখ টাকা অর্থদ- বা উভয় দ-ের বিধান থাকলেও রংপুরে ৯০ শতাংশ তামাকপণ্যের দোকানে বিজ্ঞাপন, পুরস্কার-প্রণোদনা কিংবা পণ্য প্রদর্শিত হচ্ছে।

সংবাদ সম্মেলনে আরও জানানো হয়, ৪৮৪৫টি তামাকপণ্যের বিক্রয়কেন্দ্রের মধ্যে ৪৩৬৪ (৯০.০৭%) টি বিক্রয়কেন্দ্রের লাইসেন্স নেই। তামাক কোম্পানিগুলোর অবৈধ পোস্টার/স্টিকার/সাইনবোর্ড/ব্যানার ৯.৬%; ডামি প্যাকেট/খালি প্যাকেট ৪৩.৪%; তামাকপণ্য বিক্রয়ের বক্স/শোকেজ ৪.৩%; কোনো কাঠামোর ওপর ব্র্যান্ডের ছাপ দেয়া ২.০৩%; ডিস্কাউন্ট কুপন (একটি কিনলে একটি ফ্রি) ০.৫% এবং ফ্লাইয়ার/লিফলেট/পেমপ্লেট রয়েছে ০.৫%।

বিক্রয়ের উদ্দেশ্যে তামাকপণ্য প্রদর্শিত হচ্ছে- স্তরে স্তরে সাজানো তামাকপণ্য রয়েছে ৮০.৯০% দোকানে; ৭৩.৫০% দোকানে তামাকপণ্যের ট্রে, টেবিল বা অন্যান্য উন্মুক্ত স্থানে প্রদর্শন; পাওয়ার ওয়াল (লেনদেন কাউন্টারের দেয়ালের পিছনে প্রদর্শিত সারিবদ্ধ তামাকপণ্য) পাওয়া গেছে ৪.৮০% দোকানে এবং ৮.৭০% দোকানে তামাকপণ্যের ঝুলন্ত প্রদর্শন (ছাদ থেকে ঝুলন্ত প্যাকেট) দেখা গেছে বলে জরিপের প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে। এছাড়া সামগ্রিকভাবে তামাকের বিক্রয়কেন্দ্রে আইন লঙ্ঘনের চিত্র দেখা গেছে- ৭০% দোকানে পণ্য প্রদর্শন; বিজ্ঞাপন/প্রণোদনা ৭৭% দোকানে এবং ৯০% দোকানে বিজ্ঞাপন, প্রণোদনা, পণ্য প্রদর্শন।

সংবাদ সম্মেলনে প্রধান অতিথির বক্তব্যে মহানগর পুলিশের এসি মো. জমির উদ্দিন বলেন, ‘সরকার বর্তমানে তামাক নিয়ন্ত্রণ আইন বাস্তবায়নে বিশেষ পদক্ষেপ নিচ্ছে। রংপুর মহানগরীতে পুলিশের বিশেষ ক্ষমতা আইনে মাঝেমধ্যেই তামাক কোম্পানিগুলোর আইন বহির্ভূত এসব বিজ্ঞাপন বন্ধে অভিযান চালানো হয়। আমরা তামাকের এসব বিজ্ঞাপন, পুরস্কার-প্রণোদনা বন্ধে আরো কঠোর হবো। ’

বিশেষ অতিথির বক্তব্যে সিফিএফকে’র গ্র্যান্ট্স ম্যানেজার আব্দুস সালাম মিয়া বলেন,‘ আমরা সকলের সম্মিলিত প্রচেষ্টায় রাজশাহীসহ পুরো দেশকে তামাকমুক্ত করতে চাই। ইতোমধ্যেই বাংলাদেশ সরকার তামাকমুক্ত বাংলাদেশ গড়ার পরিকল্পনায় কার্যক্রম শুরু করেছে। আপনাদের সকলের সম্মিলিত প্রচেষ্টায় অদূর ভবিষ্যতে বাংলাদেশকে একটি তামাকমুক্ত দেশ হিসেবে গড়ে তোলা সম্ভব হবে।’

শুভেচ্ছা বক্তব্যে এসিডির ডিরেক্টর (প্রোগ্রাম) শারমিন সুবরীনা বলেন, ‘প্রধানমন্ত্রী ২০৪০ সালের মধ্যে বাংলাদেশকে ধূমপানমুক্ত দেশ হিসেবে গড়ে তোলার ঘোষণা দিয়েছেন। অথচ তামাক কোম্পানিগুলো তামাক আইন লঙ্ঘন করে মৃত্যুর বিপনন করছে। তাই রংপুরে তামাকের অবৈধ বিজ্ঞাপন ও প্রচার-প্রচারণা বন্ধে আমি জেলা প্রশাসনসহ সংশ্লিষ্ট সবাইকে ব্যবস্থা নেয়ার অনুরোধ জানাচ্ছি।’

সভাপতির বক্তব্যে সুশান্ত ভৌমিক বলেন, ‘আমরা রংপুর সিটিকে তামাকমুক্ত করার উদ্যোগের অংশ হিসেবে বিভিন্ন ধরনের কার্যক্রম পরিচালনা করছি। আপনাদের সকলের সহযোগিতায় মহানগরীর ৩৩টি ওয়ার্ড তামাকমুক্ত করে রংপুর মহানগরীকে ধূমপানমুক্ত ও স্বাস্থ্যসম্মত নগরী গড়ে তুলতে সক্ষম হবো বলে বিশ্বাস করি।’

রংপুর মহানগরীতে তামাক নিয়ন্ত্রণ আইন লঙ্ঘনের চিত্র:

বার্তা প্রেরক: আমজাদ হোসেন শিমুল , মিডিয়া ম্যানেজার , এ্যাসোসিয়েশন ফর কম্যুনিটি ডেভেলপমেন্ট-এসিডি। #

Comments are closed, but trackbacks and pingbacks are open.