ইরানে বিক্ষোভকারীদের ওপর তাণ্ডব, তদন্তে নামছে জাতিসংঘ মিশন

বিটিসি আন্তর্জাতিক ডেস্ক: জাতিসংঘের মানবাধিকার কাউন্সিল ইরানে সরকার বিরোধী বিক্ষোভের উপর মারাত্মক দমন-পীড়নের তদন্তের জন্য একটি সত্য অনুসন্ধান মিশন প্রতিষ্ঠার পক্ষে ভোট দিয়েছে। বিবিসির এক প্রতিবেদনে এ তথ্য জানানো হয়।
পশ্চিমা কূটনীতিকরা জানিয়েছেন, স্বাধীন এই তদন্তের মাধ্যমে মানবাধিকার লঙ্ঘনের জন্য দায়ী ব্যক্তিদের চিহ্নিত করা হবে এবং দেশটির নারীদের সমর্থন করে শক্ত বার্তা দেয়া হবে। ইরান এ ধরণের মিশনকে আগ্রাসী রাজনৈতিক তৎপরতা হিসেবে বর্ণনা করেছে।
জেনেভায় মানবাধিকার কাউন্সিলের উদ্বোধনী অধিবেশনে জাতিসংঘের মানবাধিকার সংস্থা প্রধান ভলকার তুর্কি সংকট সম্পর্কে সতর্ক করেছেন। তিনি জানান, গত নয় সপ্তাহে প্রায় ১৪ হাজার মানুষকে আটক করা হয়েছে এবং ৩০০ মানুষের মৃত্যু হয়েছে। এটি সম্পূর্ণ অগ্রহণযোগ্য।
দেশটিতে মাহশা আমিনি নামে এক তরুণী নিরাপত্তা হেফাজতে মারা যাওয়ার প্রতিবাদে নারীদের নেতৃত্বে গড়ে ওঠা আন্দোলন ব্যাপকভাবে ছড়িয়ে পড়েছে। ২২ বছর বয়সী ওই তরুণীকে হিজাব সম্পর্কিত আইন লঙ্ঘনের দায়ে আটক করেছিলো দেশটির নৈতিকতা পুলিশ।
এরপর এই আন্দোলন দেশটির অন্তত ১৫০টি শহর ও ১৪০টির মতো বিশ্ববিদ্যালয়ে ছড়িয়ে পড়ে। আন্দোলনটি এখন ১৯৭৯ সালের বিপ্লবের পর ইসলামী প্রজাতন্ত্রের জন্য সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ হিসাবে বিবেচিত হয়।
তবে ইরানের এসব ঘটনা অনুসন্ধানের জন্য যে তথ্যানুসন্ধান মিশন গঠনের জন্য ভোট হয়েছে তার পক্ষে পঁচিশটি দেশ ভোট দিলেও ১৬টি দেশ ভোটদান থেকে বিরত ছিলো। আর ছয়টি দেশ প্রস্তাবের বিপক্ষে ভোট দিয়েছে। শেষ মূহুর্তে চীনের পক্ষ থেকে একটি সংশোধনী প্রস্তাব এলেও সেটি গৃহীত হয়নি।
যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্রমন্ত্রী অ্যান্টনি ব্লিংকেন জানান, ইরানের বিক্ষোভ সহিংস পন্থায় দমনের জন্য যারা দায়ী, তাদের চিহ্নিত করতে এটি সহায়তা করবে।
তবে বিবিসির জেনেভা সংবাদদাতা জানান, এ ধরণের কমিটিকে ইরান সম্ভবত সেখানে কাজ করতে দেবেনা। যদিও দূর থেকেই সিরিয়া ও মিয়ানমারে তদন্ত কার্যক্রম শেষ করেছিলো জাতিসংঘ।
প্রস্তাবটির ওপর ভোটের আগে টার্ক জানান, ইরানের অভ্যন্তরীণ তদন্ত আন্তর্জাতিক মানদণ্ড পূরণে ব্যর্থ হওয়ার কারণেই মানবাধিকার কাউন্সিল স্বাধীন তদন্তকে সমর্থন দিচ্ছে। দেশটিতে শিশুদের মৃত্যু, রাস্তায় নারীদের মারধর ও মানুষকে মৃত্যুদণ্ড দেয়ার ছবি তাকে ব্যথিত করেছে। শক্তির অপ্রয়োজনীয় ও নির্বিচার প্রয়োগের সমাপ্তি হওয়া উচিত।
জাতিসংঘ মানবাধিকার বিষয়ক সংস্থার প্রধান ইরানের নিরাপত্তা বাহিনীর তীব্র সমালোচনা করেছেন। বিক্ষোভ দমনে আন্তর্জাতিক রীতিনীতির অবজ্ঞার পাশাপাশি প্রাণঘাতী অস্ত্র ব্যবহার করায় তিনি এ সমালোচনা করেন।
জার্মানির পররাষ্ট্রমন্ত্রী কাউন্সিলের সভায় জানান, এখনই সব প্রমাণ সংগ্রহ করতে না পারলে ক্ষতিগ্রস্তরা কখনো ন্যায় বিচার পাবে না।
কিন্তু ইরানের প্রতিনিধি খাদিজাহ কারিমি জানান, পশ্চিমা দেশগুলোর নৈতিক গ্রহণযোগ্যতার ঘাটতি আছে। রাজনৈতিক উদ্দেশ্যে মানবাধিকারকে ব্যবহারের বিষয়টি লজ্জার।
চীনের রাষ্ট্রদূতও মানবাধিকারকে অন্য দেশের অভ্যন্তরীণ বিষয়ে হস্তক্ষেপের অস্ত্র হিসেবে ব্যবহার করার বিষয়ে সতর্ক করেছেন। #

Comments are closed, but trackbacks and pingbacks are open.