ইতিহাস গড়ার লক্ষ্যে শ্রীলঙ্কার মুখোমুখি বাংলাদেশ

বিটিসি স্পোর্টস ডেস্ক: টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপের ইতিহাসে দ্বিতীয় রাউন্ডে প্রথম জয়ের স্বাদ পেতে আজ রবিবার (২৪ অক্টোবর) এবারের আসরের সুপার টুয়েলভে নিজেদের প্রথম ম্যাচে শ্রীলঙ্কার মুখোমুখি হচ্ছে বাংলাদেশ। সংযুক্ত আরব আমিরাতের শারজা স্টেডিয়ামে ম্যাচটি শুরু হবে বাংলাদেশ সময় বিকেল ৪টায়।
টাইগারদের জন্য অতি গুরুত্বপূর্ণ এ ম্যাচটি সরাসরি দেখা যাবে বিটিভি, গাজী টিভি ও টি-স্পোটর্স চ্যানেলে।
হার দিয়ে এবারের বিশ্বকাপ শুরু করে বাংলাদেশ। বাছাই পর্বে নিজেদের প্রথম ম্যাচে স্কটল্যান্ডের কাছে ৬ রানে হারে টাইগাররা। তবে পরের ম্যাচেই ঘুরে দাঁড়ায় বাংলাদেশ। স্বাগতিক ওমানের বিপক্ষে ২৬ রানের জয় পায় রিয়াদ বাহিনী। আর গ্রুপ পর্বে তৃতীয় ও শেষ ম্যাচে পাপুয়া নিউ গিনির বিপক্ষে ৮৪ রানের বড় জয়ে সুপার টুয়েলভ নিশ্চিত করে বাংলাদেশ।
তবে সুপার টুয়েলভ পর্ব বাংলাদেশের জন্য বড় চ্যালেঞ্জের। বড় দলের বিপক্ষে বলতে, বিশ্বকাপের প্রথম পর্বে ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে ছয় উইকেটের একটি জয়ই আছে বাংলাদেশের। তবে বাছাই পর্বের বাইরে কোনো দলকেই হারাতে পারেনি বাংলাদেশ।
এই ফরম্যাটে দুর্বলতার কারণে টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপের কোনো আসরেই বাংলাদেশ কখনো খুব ভাল করতে পারেনি। ২০০৭ বিশ্বকাপের প্রথম আসরে সুপার এইটে খেলতে পেরেছিলো- এই যা। এরপর ২০০৯, ২০১০ ও ২০১২ সালের আসরে একটি জয়ও পায়নি টাইগাররা।
২০১৪ আসরটি ১৬ দলের হওয়ায় জয় পায় বাংলাদেশ। সেবারও গ্রুপ পর্বের ৩ খেলায় ২টি জয়ে হয়েছিল গ্রুপ সেরা। এরপর সুপার টেনে ৪ ম্যাচের সবগুলোই হারে টাইগাররা।
একই চিত্র ছিলো ২০১৬ সালেও। প্রথম রাউন্ডে ৩ খেলায় ২ জয় পেয়েছিলো বাংলাদেশ। একটি ম্যাচ পরিত্যক্ত হয়েছিলো। গ্রুপ সেরা হয়ে সুপার টেন-এ উঠলেও, সেখানে কোনো জয়ের স্বাদ পায়নি বাংলাদেশ। সবগুলো ম্যাচই হারে টাইগাররা। সুপার টেন পর্বে ভারতের কাছে ১ রানে হার বাংলাদেশের জন্য ছিলো অনেক কষ্টদায়ক। শেষ তিন বলে তিন উইকেট হারায় রিয়াদরা। যখন জয়ের জন্য দরকার ছিল তিন বলে মাত্র ২টি রানের।
রোববারের ম্যাচে প্রতিপক্ষ শ্রীলঙ্কা হওয়ায় আত্মবিশ্বাসী হতেই পারে বাংলাদেশ। যদিও গ্রুপ পর্বের তিন ম্যাচে দুর্দান্ত পারফরমেন্স করেই সুপার টুয়েলভে জায়গা করে নিয়েছে লঙ্কানরা।
এই ফরম্যাটে নিদাহাস ট্রফিতে শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে সর্বোচ্চ দলীয় রান করেছিলো বাংলাদেশ। শ্রীলঙ্কার ছুড়ে দেয়া ৬ উইকেটে ২১৪ রানের জবাবে ৫ উইকেটে ২১৫ রান করে স্পর্শ করেছিলো টাইগাররা। ৩৫ বলে অনবদ্য ৭২ রানের বিস্ফোরক ইনিংস খেলেন মি. ডিপেন্ডেবল খ্যাত মুশফিকুর রহিম।
আর এতেই ৫ উইকেটের অভুতপূর্ব জয় পায় বাংলাদেশ। ডাবল-লিগের ঐ টুর্নামেন্টের দ্বিতীয় লেগেও শ্রীলঙ্কাকে ২ উইকেটে হারিয়েছিলো বাংলাদেশ। আসরের অপর দলটি ছিল ভারত। তবে নিশ্চিতভাবেই আসন্ন ম্যাচটি সেই ম্যাচের স্মৃতি জাগিয়ে তুলবে, যদিও শ্রীলঙ্কা দলের অনেক অভিজ্ঞ খেলোয়াড়ই ম্যাচটি খেলেনি। কিন্তু বাংলাদেশের অভিজ্ঞরা সেই ম্যাচের অংশ ছিলেন।
এই ফরম্যাটে শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে এ পর্যন্ত ১১টি ম্যাচ খেলেছে বাংলাদেশ। এরমধ্যে চারটিতে জিতেছে টাইগাররা। সাতটিতে জয় পেয়েছে লঙ্কানরা। সর্বশেষ দুই ম্যাচে জয় ছিলো বাংলাদেশেরই। যদিও এবারের বিশ্বকাপের প্রস্তুতি ম্যাচেই হেরেছে বাংলাদেশ।
কিন্তু সবকিছুকে পিছনে ফেলে এবারের আসরে প্রথমবারের মতো সেমি-ফাইনালে খেলার লক্ষ্যে জয় দিয়েই শুরু করতে চায় বাংলাদেশ। এজন্য তরুণদের কাছ থেকে ভালো পারফরমেন্স আশা করছেন বাংলাদেশ অধিনায়ক মাহমুদুল্লাহ রিয়াদ।
সাইফুদ্দিন, মাহেদি হাসান ও নাইম শেখের জ্বলে উঠার আশায় অধিনায়ক বলেন, ‘তাদের পারফরম্যান্স আমাদের জন্য ইতিবাচক। সাইফুদ্দিন তিন ম্যাচেই ভালো বোলিং করেছে, ভালো ব্যাটিং করেছে। মাহেদি ভালো বল করেছে। নিজের প্রথম ম্যাচে ৬৪ রান করেন নাঈমও।’
মাহমুদুল্লাহ বলেন, ‘আমি আশা করি তারা এই ধারা অব্যাহত রাখবে। তারা যখন পারফর্ম করে তখন খুবই ভালো লাগে এবং এটা আমাদেরও অনুপ্রাণিত করে। আমি আশা করি, সুপার টুয়েলভেও তারা আরও ভালো করবে।’
টি-টোয়েন্টি ক্রিকেটে অবশ্য বাংলাদেশ দলের পারফরমেন্স আশানুরুপ নয়। এখন পর্যন্ত খেলা ১১৬টি ম্যাচে ৪৩টি জিতেছে তারা। বিপরীতে ৭১ ম্যাচে হার ও দু’টি পরিত্যক্ত হয়েছে।
এখন পর্যন্ত ক্রিকেটের এই সংক্ষিপ্ত সংস্করণের বিশ্বকাপে ২৮টি ম্যাচ খেলে মাত্র সাতটিতে জিতেছে বাংলাদেশ। এর মধ্যে বাছাই পর্ব থেকেই ছয়টি জয় এসেছে, সর্বশেষ জয়টি পাপুয়া নিউ গিনির বিপক্ষে। টুর্নামেন্টে বড় দল বলতে ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে পাওয়া জয়ই টাইগারদের একমাত্র অবলম্বন।
বাংলাদেশ একাদশ (সম্ভাব্য): মাহমুদউল্লাহ রিয়াদ (অধিনায়ক), মোহাম্মদ নাঈম, লিটন দাস, সাকিব আল হাসান, মুশফিকুর রহিম,  আফিফ হোসাইন, নুরুল হাসান সোহান (উইকেটরক্ষক), মাহেদী হাসান, মোহাম্মদ সাইফুদ্দিন, তাসকিন আহমেদ/শরিফুল ইসলাম/নাসুম আহমেদ, মুস্তাফিজুর রহমান।
শ্রীলঙ্কা একাদশ (সম্ভাব্য): দাসুন শানাকা (অধিনায়ক),পথুম নিসাঙ্কা, কুশল পেরেরা (উইকেটরক্ষক), চারিথ আসালাঙ্কা, আভিষ্কা ফার্নান্ডো, ভানুকা রাজাপাকসে, চামিকা করুনারত্নে, ওয়ানিন্দু হাসারাঙ্গা ডি সিলভা, বিনুরা ফার্নান্ডো, আকিলা ধনাঞ্জয়া, লাহিরু কুমারা। #

Comments are closed, but trackbacks and pingbacks are open.