আত্রাইয়ে ইউপি চেয়ারম্যানের বিরুদ্ধে ভিজিএফের চাল আত্মসাতের অভিযোগে মানববন্ধন

 

নওগাঁ প্রতিনিধি: নওগাঁর আত্রাই উপজেলার বিশা ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান আব্দুল মান্নানের বিরুদ্ধে মৎস্যজীবি ও ভিক্ষুক পরিবারের ভিজিএফের চাল আত্মসাতের অভিযোগ উঠেছে। অভিযোগের ভিত্তিত্বে আজ বুধবার দুপুর ১২টার দিকে বিশা ইউনিয়ন সচেতন জনগনের ব্যানারে আত্রাই উপজেলা পরিষদের সামনে মানববন্ধন ও বিক্ষোভ মিছিল করেছে। পরে উপজেলা নির্বাহী অফিসার বরাবর একটি স্মারকলিপি প্রদান করা হয়। ভুক্তভোগীরা বিষয়টি সুষ্ঠু তদন্তপূর্বক ব্যবস্থাগ্রহন করে চেয়ারম্যানের শাস্তির দাবী জানিয়েছেন।

জানা গেছে, বিশা ইউনিয়নের অস্বচ্ছল মৎস্যজীবি ও ভিক্ষুকদের জন্য সরকার থেকে ১ হাজার ৪শ’ টি কার্ড নিবন্ধিত হয়। গত ঈদ-উল আযহা সময়ে সরকার থেকে কার্ডধারী প্রতি পরিবারের জন্য ৩০ কেজি করে চাল বরাদ্দ আসে। কিন্তু অস্বচ্ছল মৎস্যজীবি ও ভিক্ষুকদের চাল না দিয়ে চেয়ারম্যান আব্দুল মান্নান সবকার্ডধারীদের নামের স্থানে ভূয়া ব্যক্তিকে দেখিয়ে চাল উত্তোলন করে আত্মসাত করেন বলে অভিযোগ উঠেছে। এতে অস্বচ্ছল মৎস্যজীবি ও ভিক্ষুকরা চাল না পেয়ে অসহায় হয়ে পড়েন এবং মানবেতর জীবন যাপন করেন। এছাড়া ওই চেয়ারম্যানের বিরুদ্ধে ১০ টাকা কেজির চাল স্বচ্ছল এবং মৃত ব্যাক্তির (সুদরানা গ্রামের মৃত আদম আলী) নামেও বরাদ্দ দিয়েছেন বলেও অভিযোগ রয়েছে। চেয়ারম্যান খুব প্রভাবশালী হওয়ায় তার বিরুদ্ধে কেউ ভয়ে কিছু বলতে পারেন না। কিছু বললে মামলা করার ভয় দেখানো হয়।

ইউপি নির্বাচনের সময় চেয়ারম্যান আব্দুল মান্নান জমি ও বাড়ি বন্ধক রেখে নির্বাচন করেছেন। এখন তিনি ৫০ লাখ টাকা খরচ করে রাজশাহীর তালাইমারীতে বাড়ী করেছেন বলেও অভিযোগ করেন ভুক্তভোগীরা।

মানববন্ধনে বিশা ইউনিয়ন আওয়ামীলীগের সভাপতি সাইফুল ইসলামের সভাপতিত্বে বক্তব্য রাখেন, ভুক্তভোগী কামাল, হামিদুল ইসলাম, জলিল, ঢাকা মহানগর উত্তরের জাতীয় শ্রমিক লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক তোফজ্জল হোসেন খান, বিশা ইউনিয়ন আ’লীগের সাধারন সম্পাদক ঈসমাইল হোসেন, যুগ্ম সম্পাদক আজিজুর রহমান, ত্রাণ ও সমাজকল্যান বিষয়ক সম্পাদক ওহিদুর রহমান, যুবলীগের সাংগঠনিক সম্পাদক মেহেদী হাসান মানিক ও আলমগীর হোসেন, স্বেচ্ছাসেবকলীগের সভাপতি বিকাশ চন্দ্র দাস, সাবেক ছাত্রলীগ নেতা মাহবুব ইসলাম মিলন, মানববন্ধনে প্রায় ৫ শতাধিক ভুক্তভোগী মৎস্যজীবি ও সচেতনরা অংশ নেয়। মানববন্ধন শেসে বিক্ষোভ মিছিল উপজেলার বিভিন্ন চত্বর প্রদক্ষিন করে এবং উপজেলা নির্বাহী অফিসার বরাবর একটি স্মারকলিপি প্রদান করা হয়।

শ্রীধরগুরনই গ্রামের ভুক্তভোগী হামিদুল ইসলাম বলেন, আমার মৎস্যজীবির কার্ড আছে। মে থেকে জুন মাস পর্যন্ত ২৩ সেন্টিমিটারের নিচে মাছ ধরা সরকারি ভাবে নির্ষেধ আছে। এসময় আমরা নি¤œবৃত্ত জেলে পরিবারগুলো কিভাবে খাব এজন্য সরকার থেকে আমাদের জন্য কার্ডধারী প্রতি পরিবারে ৩০ কেজি করে চাল বরাদ্দ দেয়া হয়। কিন্তু অস্বচ্ছল মৎস্যজীবি ও ভিক্ষুকদের চাল না দিয়ে চেয়ারম্যান আমাদের ফাঁকি দিয়ে সবগুলো চাল আত্মসাত করেছেন। আমরা এর সুষ্ঠু বিচার চাই।

বৈঠাখালী গ্রামের ভুক্তভোগী জলিল বলেন, ইউপি নির্বাচনের সময় চেয়ারম্যান জমি ও বাড়ি বন্ধক রেখে নির্বাচন করেছিল। এখন তিনি ৫০ লাখ টাকা খরচ করে রাজশাহীতে বাড়ী করেছেন। মৃত ব্যক্তির নামে ও স্বচ্ছল পরিবারের নামে ১০ টাকা কেজির বরাদ্দ দিয়েছেন। আমাদের চাল আত্মসাত করে গাড়ী-বাড়ি করছেন তিনি।

ঢাকা মহানগর উত্তরের জাতীয় শ্রমিক লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক তোফজ্জল হোসেন খান, আব্দুল মান্নান চেয়ারম্যান হওয়ার পরে বিভিন্ন ভাবে অনিয়ম শুরু করেন। অসহায় মৎস্যজীবি ও ভিক্ষুকদের নামে বরাদ্দের চাল আত্মসাত করেন। বিষয়টি নিয়ে জেলা প্রশাসকসহ বিভিন্ন দপ্তরে অভিযোগ করা হয়েছে।

উপজেলার বিশা ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান আব্দুল মান্নান বলেন, মৎস্যজীবিদের নামে কোন চাল বরাদ্দ আসেনি এবং আমি কোন চাল উত্তোলন করিনি। আমার বিরুদ্ধে চাল আত্মসাতের অভিযোগ ভুয়া, বানোয়াট ও ভিত্তিহীন। যারা মানববন্ধনে অংশ নিয়েছেন তাদেরকে জনপ্রতি ৫শ’ টাকা ও ২০ কেজি করে চাল দিবে বলে নিয়ে এসে আমার বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র করা হচ্ছে।
তিনি আরো বলেন, গত তিনমাস আগে আমার ছবির সাথে একই ইউপি মহিলা মেম্বার বিউটি বানুর ছবি একত্র করে পোস্টারিং করা হয়েছিল। ঘটনাই ওই মেম্বার ঢাকা মহানগর উত্তরের জাতীয় শ্রমিক লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক তোফজ্জল হোসেনের বিরুদ্ধে মামলা করেন। এই মামলার পর থেকে কিছু নেতা মরিয়া হয়ে উঠেছে এবং আমার সুনাম নষ্ট করছে।

আত্রাই উপজেলা নির্বাহী অফিসার (ইউএনও) মো: ছানাউল ইসলাম বলেন, স্মারকলিপি পেয়েছি। তদন্তপূর্বক ব্যবস্থা গ্রহন করা হবে।#

Comments are closed, but trackbacks and pingbacks are open.