আগামীকাল থেকে কার্যকর হচ্ছে নতুন সড়ক পরিবহন আইন

বিশেষ (ঢাকা) প্রতিনিধি: ৭৯ বছরের পুরনো আইনের ভিত্তিতে তৈরী মোটরযান অধ্যাদেশ বাতিল করে আগামীকাল শুক্রবার থেকে সারা দেশে কার্যকর হতে যাচ্ছে আলোচিত সড়ক পরিবহন আইন-২০১৮। এই আইনে সংশ্লিষ্ট অপরাধের ক্ষেত্রে গুরুদণ্ড নিশ্চিত হবে।

নতুন আইনে সব ধারায় আগের চেয়ে সাজা বাড়ানো হয়েছে। ফলে আইনটি কার্যকর হলে সড়কে বিশৃঙ্খলা ও দুর্ঘটনা কমে আসবে বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা।

সংশ্লিষ্ট তথ্যমতে, ২০১৮ সালের ২৯ জুলাই রাজধানীর শহীদ রমিজ উদ্দিন ক্যান্টনমেন্ট কলেজের দুই শিক্ষার্থী বাসচাপায় নিহত হওয়ার জেরে নিরাপদ সড়কের দাবিতে সারাদেশে নজির বিহীন আন্দোলন করে শিক্ষার্থীরা। শিক্ষার্থীদের আন্দোলনের পর ওই বছরের ১৯ সেপ্টেম্বর সংসদে সড়ক পরিবহন আইন পাস করা হয়। ওই বছরের ৮ অক্টোবর আইনের গেজেট জারি করা হলেও নানা কারণে আইনটি এতোদিন ঝুলে ছিল। অবশেষে এক বছর দুই মাস পর আইনটি কার্যকর হতে যাচ্ছে।

# নতুন আইনে বেপরোয়া বা অবহেলায় গাড়ি চালানোর কারণে কেউ গুরুতর আহত বা কারও প্রানহানি হলে অপরাধীর সর্বোচ্চ পাঁচ বছর কারাদণ্ড বা অনধিক ৫ লক্ষ টাকা জরিমানা বা উভয় দণ্ডের বিধান রাখা হয়েছে

# তদন্তে যদি দেখা যায় উদ্দেশ্য প্রণোদিতভাবে চালক বেপরোয়া গাড়ি চালিয়ে হত্যাকাণ্ড ঘটিয়েছে, তাহলে দণ্ডবিধির ৩০২ ধারা অনুযায়ী শাস্তি দেওয়া হবে। অর্থাৎ সর্বোচ্চ সাজা হবে ফাঁসি

# তবে এটা তদন্ত সাপেক্ষে এবং তথ্যের ওপর ভিত্তি করে আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী নির্ধারণ করবে। এটি অজামিনযোগ্য শাস্তি। আগের আইনে ছিল ৩ বছরের কারাদণ্ড ও তা জামিনযোগ্য

নতুন সড়ক আইনে শিক্ষানবিশ লাইসেন্স ছাড়া কর্তৃপক্ষের দেওয়া যে কোনো লাইসেন্সের বিপরীতে ১২ পয়েন্ট দেওয়া থাকবে। দোষ করলে তা কাটা যাবে। লালবাতি অমান্য, ওভারটেক, গতিসীমা অমান্য, বিপরীত দিক থেকে গাড়ি চালানো, ওজনসীমা লংঘন, নেশাগ্রস্ত হয়ে গাড়ি চালালে পয়েন্ট কাটা যাবে চালকের। এ বিধান আগে ছিল না।

নতুন আইনে বৈধ চালক ছাড়া নিয়োগ না দেওয়ার বিধান আবারও যুক্ত করে বলা হয়েছে, কারো ড্রাইভিং লাইসেন্স না থাকলে তাকে চালক হিসেবে নিয়োগ দেওয়া যাবে না। বাংলাদেশ শ্রম আইন ২০০৬ অনুসারে, লিখিতভাবে চুক্তি সম্পাদন ও নিয়োগপত্র ছাড়া কোনো ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠান কোনো ব্যক্তিকে গণপরিবহনের চালক নিয়োগ করতে পারবে না। নিয়োগপ্রাপ্ত চালক তাঁর কাগজপত্র গাড়িতে প্রদর্শন করবেন। এ ছাড়া কন্ডাক্টর লাইসেন্স ছাড়া কন্ড্রাক্টর নিয়োগ করা যাবে না বলে বিধান করা হয়েছে।

ড্রাইভিং লাইসেন্স ছাড়া গাড়ি চালালে ছয় মাসের কারাদণ্ড বা অনধিক ২৫ হাজার টাকা অর্থদণ্ড বা উভয় দণ্ডের বিধান রাখা হয়েছে। আগে এ অপরাধের সর্বোচ্চ শাস্তি ছিল চার মাসের কারাদণ্ড বা ৫০০ টাকা অর্থদণ্ড

কর্তৃপক্ষ ছাড়া কোনো ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠান বা সমিতি ড্রাইভিং লাইসেন্স তৈরী, প্রদান ও নবায়ন করলে শাস্তি অনধিক দুই বছর। তবে অন্যূন ছয় মাসের জেল বা এক থেকে পাঁচ লক্ষ  টাকা পর্যন্ত জরিমানা বা উভয়দণ্ডের বিধান রয়েছে। নিবন্ধন ছাড়া গাড়ি চালালে অনধিক ছয় মাসের জেল বা অনধিক ৫০ হাজার টাকা জরিমানা বা উভয় দণ্ডের বিধান রয়েছে।

নতুন আইনে ফিটনেস সনদ ছাড়া বা মেয়াদ পেরোনো ফিটনেস সনদ ব্যবহার করে ইকোনমিক লাইফ অতিক্রান্ত বা ফিটনেসের অনুপযোগী, ঝুঁকিপুর্ণ গাড়ি চালালে ছয় মাসের জেল বা অনধিক ২৫ হাজার টাকা অর্থদণ্ড বা উভয় দণ্ড দেওয়া হবে। এ ছাড়া আরো বেশ কয়েকটি ক্ষেত্রে আগের তুলনায় শাস্তি বাড়ানো হয়েছে।

নিরাপদ সড়ক চাই’র (নিসচা) প্রতিষ্ঠাতা চেয়ারম্যান ইলিয়াস কাঞ্চন বিটিসি নিউজকে বলেন, ‘নতুন সড়ক পরিবহন আইনে সাজা বা অনেক বিষয় আমাদের চাওয়া অনুযায়ী হয়নি। তারপরও যা আছে, তা অতীতের চেয়ে অনেক ভালো। এটি যাতে পরবর্তী সময়ে পরিবর্তন না হয়ে যায়, সেটা নিশ্চিত করতে হবে।’

সড়ক পরিবহন ও মহাসড়ক বিভাগের সচিব নজরুল ইসলাম বিটিসি নিউজকে বলেন, ‘এই আইনের দাড়ি কমা সংশোধন করা হয়নি। শাস্তি বেশি বলেই এটি বাস্তবায়নে বাধা তৈরির চেষ্টা করা হয়েছিল।’

বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন শ্রমিক ফেডারেশনের সাধারণ সম্পাদক ওসমান আলী বিটিসি নিউজকে বলেন, ‘অকারণে পরিবহন শ্রমিকরা কেন জরিমানা দেবে? এ আইন করা হয়েছে চালকদের শায়েস্তা করার জন্য। বিধিমালা না করেই এ আইন কার্যকর করা উচিত হবে না।’

সংবাদ প্রেরক বিটিসি নিউজ এর বিশেষ (ঢাকা) প্রতিনিধি মো: ফারুক আহম্মেদ। #

Comments are closed, but trackbacks and pingbacks are open.