আগরতলায় স্রোত আয়োজিত লোকসংস্কৃতি উৎসব

বিশেষ (ব্রাহ্মণবাড়িয়া) প্রতিনিধি: সংকীর্ণতা ছেড়ে সমাজের সদস্য হিসেবে অর্জিত নানা আচরণ, যোগ্যতা এবং জ্ঞান, বিশ্বাস, শিল্পকলা, নীতি, আদর্শ, আইন, প্রথা ইত্যাদির এক যৌগিক সমন্বয় হল সংস্কৃতি। আমরা জানি যে এই সমন্বয় কখনো দেওয়া আবার কখনো নেওয়া। আর লোকসংস্কৃতি মূলত চারটি বিষয়ের উপর নির্ভরশীল।
অক্সফোর্ড গ্রন্থপঞ্জি অনুসারে বিষয় কটি হলো ১) ঐতিহ্য, ২) ঐতিহাসিক ধারাবাহিকতা, ৩) স্থানের অনুভূতি এবং ৪)স্বত্বের সাথে জড়িত। ৩০ বছর পূর্তি উপলক্ষে রাজ্যের প্রতিষ্ঠিত প্রকাশনা সংস্থা ‘স্রোত’ উদ্যোগ নিল লোকসংস্কৃতি উৎসবের।
২৯ শে ডিসেম্বর বিকেল পাঁচটা থেকে আগরতলা প্রেসক্লাবের সভাগৃহে উপস্থিত ছিলেন ভারত ও বাংলাদেশ এই দুই দেশেরই লোকসংস্কৃতি গবেষক ও লোকশিল্পীরা ও লোকসংস্কৃতি প্রেমীরা।
বক্তব্য উপস্থাপন, সংগীত ও বাচিক কলা পরিবেশন, নৃত্য- সমবেত নৃত্য দিয়ে মহাসাড়ম্বরে পালিত হলো স্রোত প্রকাশনার ৩০ বছর পূর্তি উপলক্ষে “লোক সংস্কৃতি উৎসব” এর বর্ষ ব্যাপী অনুষ্ঠানের একটি অঙ্গ। অত্যন্ত সুপরিকল্পিত, বিভিন্ন বিষয়ে ঠাসা অনুষ্ঠানসূচিতে ছিল আলোচনা, সম্মাননা জ্ঞাপন, বই প্রকাশ, বই বিনিময়, পরিবেশিত হয় লোকসংগীত, নির্বাচিত কবিদের আঞ্চলিক কবিতা পাঠ, আবৃতি ধামাইল নৃত্য, ত্রিপুরী নৃত্য এবং শ্রুতি নাটক।
আলোচনায় অংশগ্রহণ করে বক্তব্য রাখলেন ‘লোকসংস্কৃতি আমাদের নাড়ীর স্পন্দন’ বিষয়ক আলোচনায় সৈয়দা আঁখি হক ( বাংলাদেশ), কবিতায় লোকজ ভাষা বিষয়ক আলোচনা: অশোকানন্দ রায় বর্ধন ( ত্রিপুরা), পতুল নাচ নিয়ে নিয়ে কথা বলেন সাংবাদিক লোকমান হোসেন পলা, বাংলাদেশ, মুক্তিযোদ্ধ নিয়ে এম এইচ শাহআলম ও কবিতা পাঠ করবেন বীরমুক্তিযোদ্ধা আবদুল আওযাল বাংলাদেশ।
ত্রিপুরায় লোকসংস্কৃতির ধারাবাহিকতা আলোচনা: মন্টু দাস ( ত্রিপুরা), ও ত্রিপুরায় কথা সাহিত্যে লোকজ বিষয়: বিমল চক্রবর্তী ( ত্রিপুরা),। প্রতিষ্ঠানটির গতিধারা সম্পর্কে এবং আগামী দিনের প্রতিশ্রুতি নিয়ে বক্তব্য রাখেন স্রোতের কর্ণধার গোবিন্দ ধর। অনুষ্ঠানে বেশ কয়েকটি গ্রন্থপ্রকাশ করা হয় । লোকসঙ্গীত পরিবেশন করেন গীতশ্রী ভৌমিক, নন্দিতা বড়ুয়া, উৎপলা গোস্বামী মুখার্জী, চন্দ্রিমা বনিক, শুক্লারানি দাস প্রমুখগণ, মগভাষায় লোকসঙ্গীত পরিবেশন করেন ক্রাইরী মগচৌধুরী, মণিপুরী নৃত্য পরিবেশন করেন পুনম সিনহা, লেবাং বুমানি ও নবান্ন নৃত্যের কোলাজ পরিবেশন করেন কমারঘাটের সুরাঞ্জলির শিল্পীরা।
এছাড়া ধামাইল নৃত্যও পরিবেশিত হয় । লোকসংস্কৃতির একটি জরুরী অংগ হলো লোকসংগীত। নির্বাচিত শব্দ এবং সুর দিয়ে খুব আকর্ষণীয় করে তোলা হয় চর্চা গুলি। বাংলা লোকসংগীতে বাউল, ভাটিয়ালি, দেহতত্ত্ব, মুর্শিদি ও মারফতি প্রথম শ্রেণির গান, এগুলির রচয়িতাও ব্যক্তিবিশেষ। এছাড়া কবিগান, লেটোগান, আলাপ গান, গম্ভীরা গান ইত্যাদি সমবেত কণ্ঠের গান। দুই বা ততোধিক ব্যক্তি মিলে এসব গান পরিবেশন করে। কতগুলি গান আঞ্চলিক, কতক সর্বাঞ্চলীয়।
আরো রয়েছে যেমন জারি গান, সারি গান। সমগ্র অনুষ্ঠানের সঞ্চালনায় ছিলেন সুমনা দাশ পাটারী। আজকের অনুষ্ঠানের বিশেষ আকর্ষণ ছিল বাংলাদেশের বহুবিশ্রুত কণ্ঠশিল্পী পাগলা হাসানের গান। মূলত বিখ্যাত দেহতত্ত্ব শিল্পী হাছন রাজার অনুসারী হলেও মঞ্চে উঠে বক্তব্যে ও উদাত্ত কন্ঠে পরিবেশন করেন হাছন রাজা, রাধারমণ দত্ত, বাউল সম্রাট শাহ আব্দুল করিমসহ, স্বরচিত ও আরো দুচারটি বহুল প্রচলিত গান।
শ্রোতা দর্শকের ব্যাপক ও ঘন করতালির মাঝে উপমহাদেশের স্বনামধন্য লোকগবেষক সৈয়দা আঁখি হকের জন্মদিন উপলক্ষ্যে কেক কাটার মাধ্যমে সমাপ্ত হয় অনুষ্ঠানটি।
সংবাদ প্রেরক বিটিসি নিউজ এর বিশেষ (ব্রাহ্মণবাড়িয়া) প্রতিনিধি মো. লোকমান হোসেন পলা। #

Comments are closed, but trackbacks and pingbacks are open.