আখাউড়ায় মাস্ক ছাড়া ভারত প্রবেশে বিএসএফের বাঁধা

ব্রাহ্মণবাড়িয়া প্রতিনিধি: বাংলাদেশী পাসপোর্টধারী ভ্রমণকারী পর্যটকদের মুখে মাস্ক ছাড়া ভারত প্রবেশে বিএসএফের বাঁধায় একাধিক ব্যক্তিকে ফেরত পাঠানো হয়েছে। গতকাল সোমবার (৯ মার্চ) সকালে আখাউড়া-আগরতলা চেকপোস্ট ইমিগ্রেশন সীমান্তপথে ভারতের ত্রিপুরায় যেতে পাসপোর্টধারী যাত্রীদের মধ্যে যারা মুখঢাকা মাস্ক ব্যবহার করে নাই তাদেরকে ফেরত পাঠিয়ে দেয় ভারতীয় সীমান্তরক্ষী বাহিনী বিএসএফ।
যদিও বিএসএফের দাবি, করোনাভাইরাস প্রতিরোধে বাংলাদেশী নাগরিকদের স্বাস্থ্য সচেতনতায় সতর্কতা অবলম্বনের জন্যই এ ধরণের ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়েছে।
অবশ্য ওইসব ফেরত আসা পাসপোর্টধারী যাত্রীরা মাস্ক সংগ্রহ করে মুখঢেকে ফের ভারতে গেলে বিএসএফ ও আগরতলা ইমিগ্রেশন তাদেরকে গ্রহণ করেন।
এদিকে করোনাভাইরাস আতঙ্কে আখাউড়া-আগরতলা চেকপোস্টে নোম্যান্সল্যান্ডের (শূণ্যরেখা) পতাকা উৎসবে জনসমাগম সাময়িকভাবে বন্ধ করে দেয়া হয়েছে। রোববার বিকেল থেকে উভয় দেশের সীমান্তরক্ষীরা এ নিয়ম মেনে সাধারণ পর্যটকদের সীমান্তের জিরো লাইন এলাকায় বিচরণে সতর্কতা অবলম্বন করছেন।
সোমবার সরেজমিনে আখাউড়া স্থলবন্দর ইমিগ্রেশন এলাকায় ঘুরে দেখা যায়, ভারত-বাংলাদেশ দু’দেশের সীমান্তের পোস্ট ক্যাম্পে ডিউটিরত বিজিবি-বিএসএফ জওয়ানরা মাস্ক দিয়ে মুখঢেকে আছেন। ভ্রমণকারী পাসপোর্টধারী যাত্রী, বাংলাদেশ থেকে ত্রিপুরায় পণ্যবাহি ট্রাক চালক, হেলপারসহ যাতায়াতকারীরা মাস্ক দিয়ে মুখঢেকে রাখেন। তবে সোমবার সকাল থেকে হঠাৎ করেই বন্দর সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তা-কর্মচারী, বিজিবি, পুলিশ ও ব্যবসায়ী সাধারণ মানুষের মাঝে এ চিত্র দেখা যাচ্ছে বলে নাম প্রকাশ না করার শর্তে বন্দরের এক ব্যবসায়ী নেতা জানিয়েছেন।
আখাউড়া ইমিগ্রেশন সূত্র বিটিসি নিউজ এর প্রতিবেদককে জানায়, সকালে একাধিক পাসপোর্টধারী যাত্রী ভারত ভ্রমণে যেতে চাইলে মাস্ক ব্যবহার না করার বিএসএফ তাদের ফেরত পাঠায়। পরে মাস্ক সংগ্রহ করে মুখঢেকে যাওয়ার পর তাদেরকে গ্রহণ করা হয়।
ঢাকা থেকে আসা ভারতের ত্রিপুরাগামী পাসপোর্টধার যাত্রী আসাদুজ্জামান খান টিকলু বিটিসি নিউজ এর প্রতিবেদককে বলেন, সকালে ভারত প্রবেশ পথে বিএসএফ মাস্কের জন্য বাংলাদেশে ফিরিয়ে দেয়। মাস্ক কেনার জন্য আখাউড়া পৌরশহরের ওষুধের দোকানে খুঁজলাম কিন্তু পেলাম না। পরে অন্য একটা ওষুধের দোকানে সাধারণ ৫ টাকা দামের মাস্ক পেলাম কিন্তু দাম চাইলো ৫০ টাকা। না কিনে অন্য একটি ওষুধের দোকানে মেডিকেটেড মাস্ক পেলাম যার মূল্য চাইলো ১শ’ টাকা। এর আগে এই মাস্ক ৪০ টাকা দিয়ে কিনেছিলাম। এখন দামের এই বিশাল ফারাক। যেখানে সরকারসহ সবাই মাস্ক ব্যবহার করতে বলছে, আমরাও ব্যবহার না করেই বা কী করবো?
আখাউড়া স্থলবন্দর ক্যাম্প কমান্ডার মো. শাহ আলম বিটিসি নিউজ এর প্রতিবেদককে জানান, চীনের উহান থেকে ছড়িয়ে পড়া করোনাভাইরাসের আতঙ্কে ভুগছে বিশ্ব। এ আতঙ্ক থেকেই সারাবিশ্বের মানুষের মধ্যে বেড়েছে মুখঢাকা মাস্ক ব্যবহার ও সংগ্রহের পরিমান। করোনাভাইরাস রোধে স্বাস্থ্য সচেতনতায় এ মাস্ক সংগ্রহ ও ব্যবহার জরুরি হয়ে পড়েছে। নিজে সুস্থ ও ভালো থাকার জন্য হলেও মাস্ক ব্যবহার করা উচিত। আমরাও ব্যবহার করছি। রোগতত্ত্ব, রোগ নিয়ন্ত্রণ ও গবেষণা ইনস্টিটিউটের (আইইডিসিআর) বরাত দিয়ে ব্রাহ্মণবাড়িয়ার সিভিল সার্জন ডা. মো. শাহ আলম জানান, করোনাভাইরাস হাঁচি-কাশির মাধ্যমে ছড়ায়। তিনি বলেন, এ রোগ ৩০ শতাংশ মানুষ থেকে মানুষে হাঁচি-কাশির মাধ্যমে ছড়ায়। তাই মাস্ক ব্যবহার করা ভালো ও নিরাপদ।
আখাউড়া চেকপোস্ট ইমিগ্রেশনের ইনচার্জ আবদুল হামিদ বিটিসি নিউজ এর প্রতিবেদককে জানান, করোনাভাইরাসে আক্রান্ত কেউ যাতে দেশে প্রবেশ করতে না পারে, সে জন্য ইমিগ্রেশনে অস্থায়ী হেলথ ডেস্ক কর্মীরা সজাগ দৃষ্টি রেখেছেন। ইমিগ্রেশন পুলিশের পক্ষ থেকে স্বাস্থ্যকর্মীদের সর্বাত্মক সহযোগিতা করা হচ্ছে। তবে এখন পর্যন্ত চীনের কোনো নাগরিক এ সীমান্ত দিয়ে যাতায়াত করেননি। এরপরও ইমিগ্রেশন কর্তৃপক্ষ সর্বদা সতর্ক রয়েছে। এ দিকে করোনাভাইরাস নিয়ে বাড়তি সতর্কতা হিসেবে ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলা সদর হাসপাতাল ও আটটি উপজেলা হাসপাতালে আইসোলেশন বেড স্থাপন করা হয়েছে। প্রতিটি হাসপাতালে মোট দুইটি করে ১৬টি ও জেলা সদর হাসপাতালে পাঁচটি বেড স্থাপন করা হয়েছে।

সংবাদ প্রেরক বিটিসি নিউজ এর ব্রাহ্মণবাড়িয়া প্রতিনিধি মোঃ লোকমান হোসেন পলা। #

Comments are closed, but trackbacks and pingbacks are open.