অবৈধ টমটম আর অটোরিকশার দাপট, ভোগান্তির শহরে হবিগঞ্জ

হবিগঞ্জ জেলা প্রতিনিধি: অবৈধ টমটম আর অটোরিকশার কারণে যানজট কবলে পড়ে ভোগান্তির শহরে পরিণত হচ্ছে হবিগঞ্জ। আর এতে জনগণের নাভিশ্বাস উঠলেও কমানোর কেউ নেই।

পৌরবাসীর সেবার নামে অনুমোদন দেয়া টমটম এখন শহরবাসীর জন্য বিষফোড়া হয়ে দাড়িয়েছে। পৌরসভা চলাচলের অনুমোদন দিলেও নিয়ন্ত্রণ করছে একটি প্রভাবশালী সিন্ডিকেট। নিয়ম অনুযায়ী শহরে রিকশা, ঠেলাগাড়িসহ ছোট যানবাহন চলাচলের অনুমোদন দেয় পৌরসভা এবং ভাড়াও তারা নির্ধারণ করে। কিন্তু টমটমের ক্ষেত্রেই ভিন্ন চিত্র।

সাবেক পদত্যাগকারী মেয়র জি কে গউছের সময়কালীন ওই সিন্ডিকেটটি বেশ কয়েকবার মাথাছড়া দিতে চাইলেও তার বলিষ্ট পদক্ষেপের কারণে তা সম্ভব হয়নি। কাজেই ভাড়াও তখন পৌরসভায়ই নির্ধারণ করতো। টমটমের রেজিস্ট্রেশন ফি তখন ছিল ২ হাজার টাকা।

কিন্তু জি কে গউছ পদত্যাগ করলে আসেন উপ-নির্বাচনে জয়ী হয়ে প্রায় ১৯ মাসের জন্য মেয়র হন মিজানুর রহমান মিজান। ওই মেয়াদে নতুন করে আরও ৩শ টমটম এর লাইন্সেস প্রদান করা হয়। এ সময় শক্তিশালী হয়ে উঠে প্রভাবশালী সিন্ডিকেটটি। ওই সিন্ডিকেট পৌরসভার সিদ্ধান্তকে বৃদ্ধাঙ্গুলী প্রদর্শন করে নিজেরদের মতো করে ভাড়া নির্ধারণ করে।
যদিও পৌর কর্তৃপক্ষ এ বিষয়ে সম্মতি নেই বলে জানালেও ভাড়া কমানো বা নির্ধারণের ব্যাপারে কোন ধরনের পদক্ষেপ গ্রহণ করেননি। জাতীয়ভাবে যখন সারাদেশে গণপরিবহণের ভাড়া বাড়ানো হয় তখন ওই সিন্ডিকেটটি হবিগঞ্জের মতো ছোট শহরেও টমটমের ভাড়া ১০ টাকা করে দেয়। জনগণ করোনার কারণে তা মেনেও নেন।
কিন্তু গত বছরের ১ সেপ্টেম্বর থেকে যখন জাতীয়ভাবে গণপরিবহনের ভাড়া কমিয়ে পূর্বের ভাড়া বহাল করা হয় তখন কিন্তু হবিগঞ্জ শহরের টমটমের ভাড়া না কমিয়ে ১০ টাকা করেই নিতে থাকে ওই সিন্ডিকেটটি। সাথে ব্যবহার করে মেয়র মিজানুর রহমানের ছবি সম্বলিত স্টিকার।

এ নিয়ে স্থানীয় ও জাতীয় পত্রিকায় একাধিকবার সংবাদ হলেও রহস্যজনক কারণে ব্যবস্থা নেয়নি পৌরসভা। ওই সিন্ডিকেট একটি মনগড়া সমিতি গড়ে তুলে এবং নিজেদের মনগড়া মতো ভাড়ার তালিকা করে। ভাড়ার তালিকা অনুযায়ী শায়েস্তানগর বাজার থেকে সরাসরি চৌধুরী বাজার এবং চৌধুরী বাজার থেকে সরাসরি পৌর বাসস্ট্যান্ড ১০ টাকা এবং থানার মোড় ও মোদক পর্যন্ত ৫ টাকা, ছাত্রছাত্রীদের জন্য ৫ টাকা।

কিন্তু বাস্তবে দেখা গেছে ভিন্নচিত্র। টমটম চালকরা শহরের শায়েস্তানগর ট্রাফিক পয়েন্ট, সিএনজি স্ট্যান্ড, চিড়াখানা সড়ক, পৌরভবনের সামনে থেকে অর্থাৎ মাঝ রাস্তা উঠলেও ১০ টাকা নিচ্ছে। না দিলে অকথ্য ভাষায় ব্যবহার করছে যাত্রীদের সাথে। তাদের কথা হলো, তালিকা অনুযায়ী থানার মোড় থেকে বাজার পর্যন্ত গেলে ৫ টাকা রাখা হবে। সরেজমিনে দেখা গেছে তাদের তালিকা অনুযায়ী শিক্ষার্থীদের কাছ থেকে ৫ টাকা রাখার কথা থাকলেও শায়েস্তানগর থেকে উঠা শিক্ষার্থীদের কাছ থেকে নেয়া হচ্ছে ১০ টাকা।

অনুসন্ধানকালে জানা যায়, হবিগঞ্জ পৌর শহরে ২০১০ইং হইতে পরিবেশে বান্ধব নামে পরিচিত ব্যাটারী চালিত অটোরিকশা টমটম, চলাচল শুরু হওয়ার পর থেকে একটি চক্র, গরিব বেকার যুবকদের সহজ মূল্যে কেনা টমটম-কে চাঁদাবাজির সহজ উপায় হিসাবে ব্যবহার করে হাতিয়ে নিচ্ছে কোটি কোটি টাকা।
জানা যায়, ঐ চক্রটি বিগত ১০ বছর যাবত ৫/৬ হাজার টমটম শহরে চলাচলের সুবাদে, স্বার্থলোভী চাঁদাবাজ বাহিনীর দ্বারা মনগড়া অবৈধ সংগঠনের নামে, বিভিন্ন ভাবে হাতিয়ে নিচ্ছে এসব টাকা।

এদের বিরুদ্ধে জেলা প্রশাসক ও পুলিশ সুপার বরাবর স্মারক লিপি দেওয়া হয়েছে অনেক বার। তাতেও কোনো রকম সমাধান হয়নি। কৌশলে একই চক্রের বিভিন্ন ব্যক্তিদের নেতা নির্বাচিত করে চালিয়ে যাচ্ছে চাঁদাবাজি।

সংবাদ প্রেরক বিটিসি নিউজ এর হবিগঞ্জ প্রতিনিধি মোঃ জুনাইদ চৌধুরী। #

Comments are closed, but trackbacks and pingbacks are open.