অনিয়মের আঁতুড় ঘর সাকোয়া উচ্চ বিদ্যালয়

পঞ্চগড় প্রতিনিধি: অনিয়মের আঁতুড় ঘর পঞ্চগড়ের বোদা উপজেলার সাকোয়া উচ্চ বিদ্যালয়টি। ভুয়া সনদে একাধিক শিক্ষকের শিক্ষকতা, ফরম পূরনের টাকা আত্মসাত, বিদ্যালয়ের জমি ব্যক্তি ক্ষমতায় ৯৯ বছরের লিজ প্রদান, বিভিন্ন শিক্ষক-কর্মচারী নিয়োগে অনিয়ম। এই অনিয়মের বোঝা নিয়েই চলছে বিদ্যালয়টি। তবে বিদ্যালয় পরিচালনা কমিটির সভাপতি যথাযথ অভিযোগ পেলে আইনগত ব্যবস্থা নেয়ায় আশ্বাস দেন।
সূত্র জানায়, ১ ফেব্রুয়ারী ২০১০ সালে বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক হিসেবে সায়েদ মঞ্জুরুল হাসান সুজা দায়িত্ব প্রাপ্ত হন।তবে অভিযোগ রয়েছে, বিদ্যালয়ে এডহক কমিটি থাকাকালীন সময়ে প্রধান শিক্ষকের নিয়োগ পেয়েছেন তিনি।
সরকারি বিধি অনুযায়ী প্রধান শিক্ষকের আবেদনের জন্য ১২ বছরের শিক্ষকতার অভিজ্ঞতা প্রয়োজন অথচ সায়েদ মঞ্জুরুল হাসান সুজা ৮ বছর শিক্ষকতার অভিজ্ঞতা দিয়েই প্রধান শিক্ষকের নিয়োগ পেয়েছেন।
কৌশলে অভিজ্ঞতা সম্পন্ন প্রার্থীদের পরীক্ষায় অনুপস্থিত দেখিয়ে,আর কোন যোগ্য প্রার্থী না পাওয়ায় সায়েদ মঞ্জুরুল হাসান সুজাকে নিয়োগ কমিটি সুপারিশ করেন। যদিও আরো দুইবার পত্রিকায় নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি দেয়ার বিধান রয়েছে।প্রধান শিক্ষকের দায়িত্ব পাওয়ার পর থেকেই শুরু হয় একের পর এক অনিয়ম দূর্নীতি।
গত ১৪ জুলাই ২০১১ সালে কৃষ্ণা রানী কে হিন্দু ধর্মে নিয়োগ দেওয়া হয়।একই দিনে সমাজবিজ্ঞানে একজন, গ্রন্থাগারিক পদে একজন, বিএসসি কম্পিউটার পদে একজনকে নিয়োগ দেওয়া হয়।
পরে এমপিও ভুক্তির আবেদন করলে কৃষ্ণ রানীর নিয়োগের ব্যাখ্যা চেয়ে ৫ সেপ্টেম্বর ২০১১ সালে জেলা শিক্ষা অফিসার বরাবরে মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা অধিদপ্তর,ঢাকা সহকারি পরিচালক (ক-৪) আব্দুল কুদ্দুস চৌধুরী এ নির্দেশনা দেন।
পরে প্রধান শিক্ষক কৌশলে আবার ৯ জানুয়ারি ২০১৪সালে সমাজবিজ্ঞানে একজন, জীববিজ্ঞানে একজন আবেদন চেয়ে নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি দেয়। ১০ মার্চ ২০১৪ সালে নিয়োগ পরীক্ষা হয়ে ১৩ মার্চ ২০১৪ সালে নিয়োগের জন্য সুপারিশ করেন।তবে নিয়োগটিতে ডিজির প্রতিনিধির কোন চিঠি ছিল না,কোন পরীক্ষাও হয়নি এমন কি তৎকালীন সভাপতি শিবেন্দ্র নাথ দে শিবু বলতে পারছেন না পরীক্ষার বিষয়ে। সেই নিয়োগে সমাজবিজ্ঞানে এমপিও ভুক্ত হয়ে বেতন ভাতা উত্তোলন করেছেন কৃষ্ণা রানী রায়। তবে কিভাবে পুনরায় নিয়োগ ও এমপিও ভুক্ত হওয়ার বিষয়ে কৃষ্ণা রানী রায় জানান, এ বিষয়ে প্রধান শিক্ষক ভাল জানেন।
সহকারী শিক্ষক হকিকুল ইসলাম ২০০৪ সালে বাণিজ্য বিভাগে নিয়োগ প্রাপ্ত হয়ে দীর্ঘ আট বছরেও এমপিও ভুক্ত হতে না পেরে। পরে প্রধান শিক্ষক ভুয়া কাগজপত্র সৃষ্টি করে সমাজবিজ্ঞানে ২০১২ সালে এমপিও ভুক্ত করেন। তবে প্রধান শিক্ষকের দাবী মন্ত্রনালয় সেটা ভুল করেছে, আমরা সংশোধনের জন্য আবেদন করেছি।
এদিকে ২০২১ সালে এসএসসি পরীক্ষাথীদের ফরম পুরনের ৩ লাখ ৫২ হাজার ৮০ টাকা উত্তোলন করে লাপাত্তা হয় প্রধান শিক্ষক।ফরম পুরনের টাকা বোর্ডে জমা দেয়ার শেষ তারিখেও প্রধান শিক্ষকের সাথে কোন যোগাযোগ করতে না পেরে,সহকারী প্রধানসহ অন্য শিক্ষকরা ধারদেনা করে পরীক্ষাথীদের ফরমপূরন করেন। এটা তদন্তে প্রমাণিত হলেও কোন ব্যবস্থা হয়নি তার বিরুদ্ধে।
বিদ্যালয়ের সম্পত্তি ৯৯ বছরের লিজ ও প্রায় ১০-৩০ বছরের অগ্রিম ভাড়া নিয়ে অর্থ বিদ্যালয়ের হিসাব শাখায় জমা না করে লক্ষ লক্ষ টাকা আত্মসাত করেন। এমনকি অগ্রনী ব্যাংক মুন্সিরহাট শাখায় বিদ্যালয়ের হিসাব থেকে ৫ জানুয়ারী ২০২১ইং তারিখে নাসির নামে এক ব্যক্তিকে দিয়ে এক লাখ ১০ হাজার টাকা উত্তোলন করে আত্মসাত করেন। সে সময় বিদ্যালয়ে এডহক কমিটি চলমান থাকায়। তার আগের সভাপতির সাক্ষর জাল করে টাকা উত্তোলন করে আত্মসাত করার অভিযোগ রয়েছে।
প্রধান শিক্ষক সায়েদ মঞ্জুরুল হাসান সুজা বিটিসি নিউজকে জানান, এতো বিষয় ফোনে বলা যাবে না আপনি সামনা সামনি বলেন,তবে কোন জাল সনদ বা অনিয়ম নেই বিদ্যালয়ে।
বিদ্যালয় পরিচালনা কমিটির সভাপতি হাফিজুর রহমান বিটিসি নিউজকে জানান,আমি সভাপতি হিসেবে নতুন, অনিয়মের বিষয় গুলো আমার জানা নাই। তবে কেউ অভিযোগ করলে আমরা তদন্ত সাপেক্ষে আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণ করব।
সংবাদ প্রেরক বিটিসি নিউজ এর পঞ্চগড় প্রতিনিধি শেখ সম্রাট হোসাইন। #

Comments are closed, but trackbacks and pingbacks are open.