অধ্যক্ষকে পুকুরে ফেলার ঘটনায় মামলা, আটক ২৫

 

নিজস্ব প্রতিবেদক: রাজশাহী পলিটেকনিক ইনস্টিটিউটের অধ্যক্ষকে টেনেহিঁচড়ে পুকুরের পানিতে ফেলে দেওয়ার ঘটনায় মামলা হয়েছে। শনিবার রাত ১০টার দিকে অধ্যক্ষ প্রকৌশলী ফরিদ উদ্দিন আহমেদ নিজে বাদী হয়ে নগরীর চন্দ্রিমা থানায় মামলা দায়ের করেন। এ ঘটনায় জিজ্ঞাসাবাদের জন্য পুলিশ ২৫ জনকে আটক করেছে।

শনিবার রাতে রাজশাহী মহানগর আওয়ামী লীগ কার্যালয়ে ছাত্রলীগের এক জরুরি সভায় এসব সিদ্ধান্ত হয়েছে। সভায় মহানগর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ডাবলু সরকার, মহানগর ছাত্রলীগের সভাপতি রকি কুমার ঘোষ ও সাধারণ সম্পাদক রাজিব আহমেদসহ অন্যরা উপস্থিত ছিলেন।

রবিবার সকালে নগরীর চন্দ্রিমা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) শেখ মো. গোলাম মোস্তফা অধ্যক্ষের মামলা ও ২৫ শিক্ষার্থীকে আটকের তথ্য নিশ্চিত করেছেন। তিনি জানান, অধ্যক্ষ রাতে ছাত্রলীগের ৭ নেতাকর্মীর নাম উল্লেখসহ অজ্ঞাত আরও ৫০ শিক্ষার্থীর বিরুদ্ধে থানায় মামলা দায়ের করেন। এরপর রাতেই নগরীর বিভিন্ন ছাত্রাবাস থেকে ২৫ জনকে আটক করে থানায় নেওয়া হয়েছে।

ওসি জানান, আটকদের সাথে ক্লোজড সার্কিট (সিসি) ক্যামেরার ভিডিও ফুটেজ মিলিয়ে দেখা হচ্ছে। যাদের বিরুদ্ধে ঘটনার সাথে জড়িত থাকার সম্পৃক্ততা পাওয়া যাবে না তাদের ছেড়ে দেয়া হবে। বাকিদের এ মামলায় গ্রেফতার দেখানো হবে। এরপর রবিবারই তাদের আদালতের মাধ্যমে কারাগারে পাঠানো হবে।

তবে অধ্যক্ষ প্রকৌশলী ফরিদ উদ্দিন আহমেদকে প্রকাশ্যে লাঞ্ছনা এবং পুকুরের পানিতে ফেলে দেওয়ার ঘটনায় নেতৃত্ব দানকারী পলিটেকনিক শাখা ছাত্রলীগের যুগ্ম-সম্পাদক কামাল হোসেন সৌরভ ও তার সহযোগীরা ঘটনার পর থেকে পলাতক রয়েছে। তাদের আটকের জন্য পুলিশ অভিযান চালাচ্ছে।

অন্যদিকে মহানগর ছাত্রলীগ সভাপতি রকি কুমার ঘোষ জানান, সভায় পলিটেকনিকের অধ্যক্ষকে লাঞ্ছনা ও তাকে পুকুরের পানিতে ফেলে দেওয়ার ঘটনা তদন্তের জন্য মহানগর ছাত্রলীগের সহ-সভাপতি কল্যাণ কুমার রায়কে আহ্বায়ক করে ছয় সদস্যের একটি কমিটি গঠন করা হয়েছে। কমিটিকে আগামী তিন দিনের মধ্যে তদন্ত প্রতিবেদন দাখিল করতে বলা হয়েছে। তদন্তে ছাত্রলীগের আর কারও বিরুদ্ধে ঘটনায় জড়িত থাকার প্রমাণ পাওয়া গেলে তাদের বিরুদ্ধেও সাংগঠনিক ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।

এর আগে শনিবার সন্ধ্যায় রাজশাহী পলিটেকনিক ইনস্টিটিউটে একাডেমিক কাউন্সিলের এক জরুরি সভা অনুষ্ঠিত হয়। ওই সভায় অভিযুক্ত শাখা ছাত্রলীগের যুগ্ম-সাধারণ সম্পাদক কামাল হোসেন সৌরভসহ ছাত্রলীগের ৭ নেতাকর্মীকে ইনস্টিটিউট থেকে স্থায়ীভাবে বহিষ্কারের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। এজন্য কারিগরি বোর্ডের কাছে রবিবার অফিস সময়ে চিঠি পাঠানোর সিদ্ধান্ত হয়েছে।

প্রসঙ্গত, শনিবার দুপুরে অকৃতকার্য শিক্ষার্থী ছাত্রলীগ নেতা সৌরভকে পরীক্ষা দেয়ার সুযোগ না দেয়ায় বেলা ১১টার দিকে অধ্যক্ষ ফরিদ উদ্দিনের সাথে তার কার্যালয়ে ছাত্রলীগের নেতাকর্মীদের বাকবিতণ্ডা হয়। পরে দুপুরে জোহরের নামাজ পড়ে অফিসে ফেরার সময় ছাত্রলীগ নেতা সৌরভ ও তার সহযোগিরা অধ্যক্ষকে প্রকাশ্যে লাঞ্ছিত করে এবং টেনেহিঁচড়ে ক্যাম্পাসের ভেতরের একটি পুকুরের পানিতে ফেলে দেয়। ঘটনাস্থলের অদূরে থাকা ক্লোজ সার্কিট (সিসি) ক্যামেরার ফুটেজে দেখা যায়, অন্তত ১০ জন শিক্ষার্থী অধ্যক্ষকে ধরে চ্যাংদোলা করে পুকুরের দিকে নিয়ে যাচ্ছে। মুহূর্তের মধ্যেই তারা অধ্যক্ষকে পুকুরের পানিতে ফেলে দিয়ে দ্রুত পালিয়ে যায়। এসময় অধ্যক্ষ সাঁতরে তীরে আসলে ইনস্টিটিউটের কর্মকর্তা-কর্মচারী ও শিক্ষার্থীরা তাকে টেনে তোলেন

সংবাদ প্রেরক বিটিসি নিউজ এর স্টাফ রিপোর্টার আমানুল্লাহ আমান।  #  

 

Comments are closed, but trackbacks and pingbacks are open.