ভোটযুদ্ধের প্রচারনায় মুখরিত খুলনা

নিজস্ব প্রতিবেদক : ভোটযুদ্ধে যাবার প্রাথমিক আনুষ্ঠানিকতা শেষ করে শুরু হলো প্রচারনা। মঙ্গলবার সকাল সাড়ে নয়টায় খুলনা সিটি কর্পোরেশনের আগামী ১৫ মে’র নির্বাচন উপলক্ষে প্রথমে মেয়রপ্রার্থীদের এরপর সংরক্ষিত ওয়ার্ডের কাউন্সিলর ও সবশেষে সাধারণ ওয়ার্ডের কাউন্সিলর প্রার্থীদের প্রতীক বরাদ্দ শেষেই প্রার্থীরা যে যার মত নেমে পড়েন প্রচারনায়। লিফলেট বিতরণ, গণসংযোগসহ নানা কর্মসূচীর মাধ্যমে প্রার্থীরা তাদের প্রচারনা শুরু করেন। মেয়রপ্রার্থীরা আপাতত: ১৫টি, সংরক্ষিত ওয়ার্ডের কাউন্সিলর প্রার্থীরা দু’টি এবং সাধারণ ওয়ার্ডের কাউন্সিলর প্রার্থীরা একটি করে মাইক ব্যবহারের সুযোগ পাচ্ছেন প্রচারনায়। মঙ্গলবার দুপুর ২টা থেকেই অনেকে নগরীতে মাইকিং শুরু করেছেন। চলে রাত ৮টা পর্যন্ত। নির্বাচনী আচরণবিধি অনুযায়ী প্রতিদিন দুপুর ২টা থেকে রাত ৮টা পর্যন্ত মাইকিং করা যাবে। দলীয় প্রতীক হওয়ায় মেয়রপ্রার্থীদের লিফলেট-পোষ্টার আগে থেকে অনেকে ছাপিয়ে রেখেছেন বলেই লিফলেট বিতরণও করেছেন কেউ কেউ। তবে কাউন্সিলর প্রার্থীদের প্রতীক নিয়ে কিছুটা সন্দেহ থাকায় গতকাল প্রার্থীদের অধিকাংশই ছিলেন প্রেসমুখী। কাউন্সিলর প্রার্থীদের অনেকে আগে থেকেই ডিজাইন করে রাখায় শুধুমাত্র প্রতীক নিশ্চিত হওয়ার পরই ছাপতে শুরু করেছেন পোষ্টার-লিফলেট।

প্রতীক বরাদ্দ উপলক্ষে মঙ্গলবার সকাল থেকেই বয়রাস্থ নির্বাচন অফিস চত্বর ছিল কানায় কানায় পূর্ণ। কোন কোন প্রার্থী মটর সাইকেলের বহর নিয়ে নির্বাচন কার্যালয়ে যান প্রতীক আনতে। ফেরার পথে শ্লোগানও দেয়া হয় অনেক প্রার্থীর পক্ষে। এক কথায় অনেকটা উৎসবের আমেজে পরিণত হয় গোটা নগরী।
নির্বাচন অফিসের তৃতীয় তলার রিটার্নিং অফিসার মো: ইউনুচ আলীর নিজস্ব কক্ষে বসেই মেয়রপ্রার্থীদের প্রতীক দেয়া হলেও সংরক্ষিত ও সাধারণ ওয়ার্ডের কাউন্সিলর প্রার্থীদের প্রতীক দেয়া হয় সভাকক্ষে বসে। প্রথমে প্রার্থীদের সাথে যাওয়া কর্মী-সমর্থকদের চাপে হিমশিম খেতে হয় কর্তৃপক্ষকে। পরে শুধুমাত্র প্রার্থী ছাড়া বাকীদের অফিসের বাইরে অপেক্ষা করার অনুরোধ জানানো হয়। প্রতীক বরাদ্দ শেষে প্রার্থীরা নিচে না নামা পর্যন্ত কর্মী-সমর্থকরা সেখানে অপেক্ষা করতে থাকেন। সকাল থেকেই বিভিন্ন প্রতীক সম্বলিত ব্যাজ নিয়ে নির্বাচন অফিস চত্বরে হাজির হন কিছু ব্যবসায়ী। প্রতীক পেয়ে প্রার্থী ও তাদের কর্মী-সমর্থকরাও যে যার মত সেগুলো কিনে নেন। বিভিন্ন সভা-সংবাদ সম্মেলন থেকে এক দল অপর দল সম্পর্কে বিরূপ মন্তব্য করলেও এখনকার চিত্র অনেকটা ভিন্ন। আওয়ামীলীগের মেয়রপ্রার্থী তালুকদার আব্দুল খালেক নৌকা প্রতীক পেয়ে বের হওয়ার সাথে সাথেই রিটার্নিং অফিসারের বারান্দায় সাক্ষাৎ হয় জাতীয় পার্টির মেয়রপ্রার্থী এসএম শফিকুর রহমানের সাথে। তারা উভয়ে কুশল বিনিময় করেন। কথাও বলেন অনেকটা সৌহার্দ্দ্যপূর্ণ পরিবেশে। একইভাবে অফিসের নিচে নেমেই ২০ দলীয় জোটের মেয়রপ্রার্থী বিএনপির নজরুল ইসলাম মঞ্জুর সাথে সাক্ষাৎ হলে সেখানেও দু’জনে কুশল বিনিময় করেন।

পরে ইসলামী আন্দোলনের মেয়রপ্রার্থী মাওলানা মুজ্জাম্মিল হক ও জাপার প্রার্থী এসএম শফিকুর রহমানের প্রতীক বরাদ্দের সময় রিটার্নিং অফিসারের কক্ষের সামনে অপেক্ষা করতে হয় নজরুল ইসলাম মঞ্জুকে। তারা দু’জন যথাক্রমে হাতপাখা ও লাঙল প্রতীক নিয়ে বের হওয়ার সাথে সাথেই নজরুল ইসলাম মঞ্জুর সাথেও উভয়ের কুশল বিনিময় হয়। এরপর নজরুল ইসলাম মঞ্জু ধানের শীষ প্রতীক নিয়ে বের হয়ে নিচে অপেক্ষমান নেতাকর্মীদের নিয়ে তিনি চলে যান দলীয় কার্যালয়ে। শুধুমাত্র সিপিবির মিজানুর রহমান বাবু উপস্থিত না হওয়ায় তার পক্ষে কাস্তে প্রতীক গ্রহণ করেন তার প্রধান নির্বাচনী এজেন্ট এইচ এম শাহাদাৎ।
প্রতীক পেয়েই সাংবাদিকদের মুখোমুখি হন দু’হেভিওয়েট প্রার্থী যথাক্রমে আওয়ামীলীগের তালুকদার আব্দুল খালেক ও বিএনপির নজরুল ইসলাম মঞ্জু। তালুকদার আব্দুল খালেক পিছিয়ে পড়া নগরীর উন্নয়নে নৌকায় এবং নজরুল ইসলাম মঞ্জু সবুজ নগরী গড়তে ধানের শীষে ভোট দেয়ার আহবান জানান।
খুলনা সিটি কর্পোরেশন নির্বাচনের তফশীল ঘোষনা হয় গত ৩১ মার্চ। ভেঅটগ্রহণ হবে ১৫ মে। এরপর মনোনয়নপত্র দাখিল, বাছাই, আপীল, শুনানী ও প্রত্যাহার হয় ২৩ এপ্রিল পর্যন্ত। নির্বাচন কমিশনের নির্দেশনা অনুযায়ী ৮ এপ্রিলের মধ্যে সব পোষ্টার, লিফলেট, বিলবোর্ড, তোরণ অপসারণ হয়ে যায়। এজন্য ২৩ এপ্রিল পর্যন্ত পুরো নগরী ছিল প্যানা পোস্টার শুন্য। কিন্তু গতকাল থেকে আবারো শুরু হয়েছে পোষ্টারের প্রস্তুতি।

যদিও নির্বাচনী আচরণবিধি অনুযায়ী ১৮ ইঞ্চি বাই ২৩ ইঞ্চির বড় কোন পোষ্টার বা ব্যানার করা যাবে না এবং দেয়ালে লাগানোও যাবে না সে কারনে পোষ্টার টানিয়ে রাখার প্রতিযোগিতা হয়ত শুরু হয়ে যাবে শীঘ্রই। প্রথম দিনেই কেউ লিফলেট নিয়ে আবার কেউ শুধুমাত্র গণসংযোগে নেমে পড়েন। নানা প্রতিশ্রুতির ডালি নিয়ে প্রার্থীরা যাচ্ছেন ভোটারদের দ্বারে দ্বারে। কোন্ এলাকায় কোন্ পেশার ভোটার বেশি সে বিষয়টি গুরুত্ব দিয়ে গণসংযোগের কৌশল চূড়ান্ত করেছেন বড় দু’দলের নেতারা। শ্রমিকদের ভোট টানার লক্ষ্যে নানা আশ্বাস নিয়ে হাজির হচ্ছেন সব দলের নেতাকর্মীরা। বেতন কাঠামো গঠন, দুই দফায় বেতন বৃদ্ধিসহ শ্রমিকদের কল্যাণে নেয়া নানা পদক্ষেপ তুলে ধরছেন ক্ষমতাসীনরা। পক্ষান্তরে বেতনের তুলনায় দ্রব্যমূল্যের লাগামহীন ঊর্ধ্বগতিতে শ্রমিকদের নাভিশ্বাস- এমন পাল্টা অভিযোগ নিয়ে শ্রমিকদের কাছে যাচ্ছেন সরকারের বাইরে থাকা প্রার্থীরা।

মেয়র প্রার্থী ও সংশি¬ষ্টদের সাথে কথা বলে জানা গেছে, আওয়ামী লীগ মনোনীত মেয়র প্রার্থী তালুকদার আব্দুল খালেক ২০০৮ সালের নির্বাচনে ২৮ দফা এবং ২০১৩ সালের নির্বাচনে ৩১ দফার ইশতেহার দিয়েছিলেন। এবারো থাকছে ৩১ দফা। পূর্বের ইশতেহারের সাথে মিল রেখেই তার এই নতুন ইশতেহার আসছে।
বিএনপি মনোনীত মেয়র পদপ্রার্থী নজরুল ইসলাম মঞ্জু ইশতেহারে ‘গ্রিন অ্যান্ড ক্লিন সিটি’র স্লোগানসহ ১৯ দফা রাখার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন। সরকারের নানা অনিয়ম, দুর্নীতি, ব্যর্থতাসহ দলটির চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়ার কারাবন্দি ইস্যুটিও সামনে আনা হবে ইশতেহারে।
জাতীয় পার্টি (জাপা) প্রার্থী এস এম শফিকুর রহমান (মুশফিক) মাদকের ভয়াবহতাকে প্রধান সমস্যা উল্লেখ করে ৮ দফা ইশতেহার তৈরি করছেন। ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের প্রার্থী অধ্যক্ষ মাওলানা মুজ্জাম্মিল হক ২৫ দফা ইশতেহার ঘোষণার পরিকল্পনা নিয়েছেন। সিপিবি মনোনীত প্রার্থী মিজানুর রহমান বাবু নির্বাচনী ইশতেহারে খুলনার বন্ধ মিল-কলকারখানা চালুকেই প্রাধান্য দেবেন।

অপরদিকে, প্রচারনা শুরুর সাথে সাথেই গতকাল থেকে নজরদারিতে রয়েছেন ১০জন নির্বাহী ম্যাজিষ্ট্রেট। আচরণবিধি লংঘনের অভিযোগ পাওয়া মাত্রই এসব নির্বাহী ম্যাজিষ্ট্রেটরা পরিচালনা করবেন ভ্রাম্যমান আদালত। তবে এখন পর্যন্ত এমন কোন আচরণবিধি লংঘনের অভিযোগ পাওয়া যায়নি বলে জানিয়েছেন ২৯, ৩০ ও ৩১ নম্বর ওয়ার্ডের দায়িত্বে নিয়োজিত নির্বাহী ম্যাজিষ্ট্রেট মো: রাশেদুল ইসলাম। তবে অন্য কয়েকটি ওয়ার্ডে কিছু অভিযোগ পাওয়ার পর সংশ্লিষ্ট প্রার্থীদের সতর্ক করে দেয়া হয়েছে বলেও তিনি জানান।#

Comments are closed, but trackbacks and pingbacks are open.