বিদ্যুতের অবৈধ তারে জড়িয়ে কলেজ ছাত্র জিকরুল হত্যাকান্ড বদরগঞ্জে হত্যাকান্ডের ঘটনায় পল্লী বিদ্যুৎ কর্তৃপক্ষের বিরুদ্ধে উল্টো প্রতিবেদন দেয়ার অভিযোগ, ডিজিএম বললেন রিপোর্টটি ছিল প্রাথমিক, আবারও রিপোর্ট দেয়া হবে

রংপুর ব্যুরো:  রংপুরের বদরগঞ্জের দামোদরপুরে অবৈধ বিদ্যুতের সেচ তারে জড়িয়ে যুবক জিকরুল হত্যাকান্ডের ঘটনায় মূল অভিযুক্তকে পাশ কাটিয়ে নিহতের নামেই উল্টো প্রতিবেদন দেয়ার মাধ্যমে পুরো ঘটনাটিকে ভিন্নখাতে প্রবাহিত করার গুরুতর অভিযোগ উঠেছে পল্লী বিদ্যুৎ কর্তৃপক্ষের বিরুদ্ধে।

এ ঘটনায় মোটা অংকের আর্থিক লেনদেন হয়েছে বলে অভিযোগ করেছেন নিহতের পরিবার। যদিও সংশ্লিষ্ট পল্লী বিদ্যুৎ অফিসের ডিজিএম বলেছেন, সেটি ছিল প্রাথমিক প্রতিবেদন। পরবর্তীতে আবারও তদন্ত করা হয়েছে। এদিকে থানায় মামলা না নেয়ায় নিহতের পরিবার আদালতে মামলা করলে আদালত পুলিশকে সংশ্লিষ্ট কাগজপত্র দাখিলের নির্দেশ দিয়েছে।

পুলিশ ও আদালত সূত্র এবং নিহতের পরিবার জানিয়েছে, উপজেলার দামোদরপুর সর্দারপাড়া গ্রামের নুরুল হকের একমাত্র পুত্র ন্যাশনাল সার্ভিসে শিক্ষক হিসেবে কর্মরত জিকরুল মিয়া (২৮) নিজ জমিতে কাজ করতে গিয়ে প্রতিবেশী মজিবর ও তার পুত্রদের বাড়ি থেকে খূটিতে হুক লাগিযে অবৈধভাবে জমির আইল দিয়ে নেয়া বিদ্যুতের সেচ তারে স্পৃষ্ট হয়ে মারা যান।

খবর পেয়ে সেখানে শতশত মানুষের পাশাপাশি পুলিশ ও স্থাণীয় চেয়ারম্যান আজিজুল হকসহ বিভিন্ন গণমাধ্যম কর্মীরা উপস্থিত হন। এসময় মজিবর ও তার পুত্ররা তাৎক্ষণিকভাবে মোটা অংকের টাকা দিয়ে পুলিশ ও চেয়ারম্যানকে ম্যানেজ করে। পরে চেয়ারম্যানের মধ্যস্থতায় জিকরুলের পিতা নুরুল হক, দুই বোন নাজমা ও নিতুন জেরার কাছ থেকে ময়না তদন্তের কথা বলে সেখানে উপস্থিত এস আই ইসমাঈল হোসেন একটি সাদা কাগজে স্বাক্ষর করে নেয়।

পরে পুলিশ ও স্থানীয় চেয়ারম্যান আজিজুল হক চাপ প্রয়োগ করে এলাকাবাসী ও জিকরুলের আত্মীয় স্বজনকে ময়না তদন্ত ছাড়াই লাশ দাফনে বাধ্য করে। সন্ধায় সেখানে উপস্থিত হন রংপুর পল্লী বিদ্যুৎ সমিতি-২ এর বদরগঞ্জ জোনের চেংমারী পল্লী অফিসের ইনচার্জ ইনচার্জ হাবিবুর রহমান।

 

ঘটনার পরপরই পৃন্ট ও ইলেক্ট্রনিক্স মিডিয়ার কর্মীরা জানতে চাইলে মজিবরের পুত্র মর্তুজা বলেন, আমাদের বাড়ির নিকট বিদ্যুতের খুটি থেকে হুক লাগিয়ে আমরা দীর্ঘদিন ধরে সেচ দিচ্ছি। অনেকেই আমাদের কাছ থেকে সেই সেবা নিচ্ছেন। কিছুদুর বাঁশের খুটি থাকলেও আমাদের জমির সিমানাতে গিয়ে তার আইল দিয়ে নিয়ে গেছি। এটা আমাদের অপরাধ। ভবিষ্যতে আমরা আর এ ধরনের কোন কাজ করবো না।

এদিকে নিহত জিকরুলের জ্যাঠাত ভাই আক্তারুল ইসলাম বলেন, জিকরুলকে হত্যার উদ্দেশেই মজিবর ও তার ছেলে মর্তুজারা জমির আইলে মাটির নিচ দিয়ে অবৈধ বিদ্যুৎ তারের সংযোগ টানেন এবং জিকরুলকে সু-পরিকল্পিত ভাবে হত্যা করা হয়েছে। চেয়ারম্যান, পুলিশ ও পল্লী বিদ্যুতের লোকজনের অসহযোগিতার কারনে আমরা কোনবিচার পাচ্ছিলাম না। পরবর্তীতে বিষয়টি জানিয়ে গত ১৮ আগস্ট ডিআইজি ও পুলিশ সুপারের কাছে লিখিত আবেদন করি।

আবেদনের প্রেক্ষিতে পরের দিন রংপুর রেঞ্জের অতিরিক্ত ডিআইজি ( অপরাধ) এবিএম জাহিদুল ইসলাম সরেজমিনে ঘটনাস্থল পরিদর্শন করে সেখান থেকেই বদরগঞ্জ থানার ওসিকে মামলা নেয়ার নির্দেশ দেন। আমরা তা কথামত থানায় যাই। কিন্তু ওসি মামলা না নেয়ায় আমরা রংপুর জুডিশিয়াল ম্যাজিষ্ট্রেট আদালতে পিটিশন দায়ের করি। আদালত পিটিশনটি গ্রহন করে বদরগঞ্জ থানা পুলিশকে মামলার সমস্ত কাগজপত্র জমা দেয়ার নির্দেশ দিয়েছেন।

জিকরুলের পিতা নুরুল হকের অভিযোগ, পুরো ঘটনাটিকে ভিন্নখানে প্রবাহিত করতে স্থানীয় চেয়ারম্যানের সহযোগিতায় মজিবর ও তার পুত্ররা পল্লী বিদ্যুতের চেংমারি অফিসের ইনচার্জ ও বদরগঞ্জ জোনাল অফিসের ডিজিএম টাকা দিয়ে ম্যানেজ হয়ে মিথ্যা প্রতিবেদন থানাসহ বিভিন্ন জায়গায় দাখিল করেছে।

ওই প্রতিবেদনে তারা মিথ্যা তথ্য দিয়ে বলেছে, নিজেই হুক লাগিয়ে সংযোগ নিতে সে মারা গেছে। পল্লী বিদ্যুতের এই মিথ্যা প্রতিবেদনের কারণে পুলিশও মোটা অংকের টাকা নিয়ে তাদের পক্ষ নিয়েছে। যাদের অবৈধ হুকের তারে  জড়িয়ে আমার একমাত্র পুত্র মারা গেলো, এখন তারাই আবার আমাকে হুমকি দিচ্ছে। আমি এর ন্যায্য বিচার চাই।

এ ব্যপারে পল্লী বিদ্যুতের চেংমারী অফিসের ইনচার্জ হাবিবুর রহমান বিটিসি নিউজকে জানান, ঘটনার দিন সেখানে একটি বিদ্যুতের তার ছিল। যেহেতু জিকরুল পানি সেচের জন্য মটর নিয়ে গিয়েছিল সেইহেতু আমরা ওই তারটি জিকরুলের বলে মনে করে তদন্ত প্রতিবেদন দিয়েছি। আর সে সময় জিকরুলে বাবা মার পক্ষ থেকে মৃত্যুর বিষয়ে মজিবরদের দোষী করে জোরালো কোন দাবীও তোলা হয়নি। তবে টাকার বিনিময়ে এ ধরনের রিপোর্ট দেয়ার বিষয়ে তিনি কোন কথা বলতে রাজি হন নি।

অন্যদিকে বদরগঞ্জ পল্লী বিদ্যুৎ জোনাল অফিসের ডেপুটি জেনারেল ম্যানেজার হামিদুল হক বিটিসি নিউজকে বলেন, ঘটনার দিন চেংমারি অফিসের ইনচার্জ সেখানে গিয়ে যে প্রাথমিক রিপোর্ট দিয়েছে, তাতে জিকরুলে নিজের তারেই মারা যাওয়ার বিষয়টি উঠে এসেছে। ঘটনার ১৫ দিন পর বিষয়টি নিয়ে তোলপাড় উঠায় ঘটনাস্থলে আমি নিজেই আবারও সভাপতিকে নিয়ে পরিদর্শন করেছি। তাতে আমি নিজেই কনফিউজড হয়েছি।

এখন এ বিষয়ে কি ধরনের ব্যবস্থা নেয়া হবে জানতে চাইলে এই কর্মকর্তা জানান,  কোন ব্যবস্থা গ্রহনের বিষয়ে আমাদের জনবল কম থাকায় কে কোথায় অবৈধ বিদ্যুৎ সংযোগ নিয়েছে তা অনেক সময় দেখা সম্ভব হয়না। আর অবৈধ সংযোগকারীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে হলে অনেক প্রক্রিয়া এবং স্বাক্ষীর প্রয়োজন। যা করতে গেলে অনেক ঝামেলা। সে জন্য আমরা এ বিষয়ে মামলা করতে চাইনা।

অন্যদিকে আর্থিক লেনদের মাধ্যমে এমন রিপোর্ট দেয়ার বিষয়ে তিনি বলেন, বাংলাদেশে যদি একজন মানুষ সৎ থাকে, তবে আমি সেই একজন। আর চেংমারির ইনচার্জও সৎ।

বিষয়টি নিয়ে দামোদরপুর ইউপি চেয়ারম্যান আজিজুল হক বিটিসি নিউজকে বলেন, মজিবর নিজের বাড়ি থেকেই অবৈধভাবে লাইন আইল দিয়ে নিয়ে গেছে। সেই তারেই জিকরুল মারা গেছে। সেটা আসি ঘটনার সময়ই মিডিয়াকে বলেছি। কিন্তু বিষয়টি ওই সময় সমঝোতা হয়েছে। কি কারণে বিষয়টি এখন বড় হলো তা আমি জানি না। আমার বিরুদ্ধে মজিবরের সাথে যোগসাজস করে পুলিশ ও পল্লী বিদ্যুৎকে টাকা দিয়ে ম্যানেজ করার যে অভিযোগ উঠেছে তা ঠিক নয়।

সংবাদ প্রেরক বিটিসি নিউজ এর রংপুর ব্যুরো প্রধান সরকার মাজহারুল মান্নান। #

Comments are closed, but trackbacks and pingbacks are open.