ডুববে না বলেও কেন ডুবে গিয়েছে টাইটানিক?

বিটিসি আন্তর্জাতিক ডেস্ক: বিখ্যাত জাহাজ প্রস্তুতকারী কোম্পানি হোয়াইট স্টার লাইনের ভাইস প্রেসিডেন্ট বলেছিলেন, টাইটানিক কখনো ডুববে না। কিন্তু যাত্রা শুরুর দুদিনের মাথায় অর্থাৎ ১৯১২ সালের ১২ এপ্রিল প্রথম আইস ওয়ার্নিং পেয়েছিল টাইটানিক। ওয়ার্নিং এমন ছিল যে, যাত্রাপথে আটলান্টিক মহাসাগরের বিভিন্ন জায়গায় অসংখ্য বড় বড় আইসবার্গ আছে।
সমুদ্রপথে এমন আইস ওয়ার্নিং আনইউজুয়াল কিছু নয়। একটি জাহাজ যখন সমুদ্র যাত্রা শুরু করে তখন সাধারণত আশপাশের নৌযানের সাথে রেডিওর মাধ্যমে যোগাযোগ করে যে, সমুদ্রের এই জায়গায় বরফ আছে কিংবা ওই অঞ্চল বিপজ্জনক। তাই সাবধানে যেন এগোতে পারে নৌযান। এই ওয়ার্নিং পাওয়ার পর বিপদ এড়াতে টাইটানিক পরপর দুবার নিজের গতিপথ পরিবর্তন করে, কিন্তু নিজের স্পিড কমায়নি। সে সময় টাইটানিক ঘণ্টায় ৪০ কিমি গতিতে চলছিল। দুদিন পর ১৪ এপ্রিলের মধ্যে আরও ৭টি আইস ওয়ার্নিং পায়, তবে সেগুলো জাহাজের ক্যাপ্টেন ইগনোর করেন। এরপর রাত নেমে আসে, তাপমাত্রা কমতে থাকে। ১৪ এপ্রিল রাতের বিশেষ একটি দিক হলো, ওই রাতে আকাশে চাঁদ দেখা যায়নি, চারপাশ ছিল একদম ঘুটঘুটে অন্ধকার। তাই ভিজিবিলিটি একেবারেই কম ছিল।
জাহাজের ওপর একটি ক্রো’জ নেস্ট থাকে, যেটিকে লুকআউট পয়েন্ট বলা যায়। সেখানে যে স্টাফ নিযুক্ত করা হয়, তার কাজ জাহাজের সামনে কোনো ট্রাফিক, অবস্টাকল কিংবা কোনো আনইউজুয়াল কিছু দেখলে সে বিষয়ে ক্যাপ্টেনকে জানানো।
রাত ১১টা ৩৯ মিনিট, ফ্রেডরিক ফ্লিট নামের এক স্টাফ টাইটানিকের ক্রো’স নেস্টে বসে হঠাৎ টাইটানিকের সামনে বিশাল এক আইবার্গ দেখে তৎক্ষণাৎ বেল বাজিয়ে নিচের সবাইকে জানান। ফোন করে চিৎকার করে বলেন, সামনে বড় একটি আইসবার্গ আছে, এখনই জাহাজের গতিপথ পরিবর্তন করতে হবে। ফার্স্ট অফিসার উইলিয়াম এই ইনস্ট্রাকশন শুনে সঙ্গে সঙ্গে ইঞ্জিন রুমে খবর পাঠান যেন জাহাজকে বাঁদিকে ঘুরিয়ে দেয়া হয়।
কিন্তু দুর্ভাগ্যক্রমে ততক্ষণে অনেক দেরি হয়ে যায়। আর ঠিক এক মিনিট পর ১১টা ৪০ মিনিটে টাইটানিক সেই বিশাল আইসবার্গের সঙ্গে ধাক্কা খায়। এতে জাহাজে ৩০০ ফুট আয়তনের এক বিশাল গর্তের সৃষ্টি হয়ে পানিরোধক অনেক রুম পানিতে ভরে যায়। এর মাত্র ২ ঘণ্টা ৪০ মিনিট পর জাহাজটি ডুবে যায়। এ ঘটনায় ১ হাজার ৫১৭ জন যাত্রী ও ক্রু ২ ডিগ্রি সেন্টিগ্রেড উষ্ণতার সমুদ্রজলে অসহায় অবস্থায় প্রাণ হারান। এর পরের ইতিহাস সবার জানা।
প্রশ্ন জাগতে পারে, একটি বরফের টুকরা কীভাবে একটি মেটালকে কাটতে কিংবা ভাঙতে পারে। হ্যাঁ, আপনার ফ্রিজে রাখা বরফ দিয়ে হয়তো মেটাল কাটা সম্ভব নয়, কিন্তু এটা বরফের টুকরা ছিল না, বলা চলে আস্ত এক বরফের পাহাড় ছিল। বিজ্ঞানীদের মতে, সেই আইসবার্গের ওজন ছিল ১.৫ মিলিয়ন টন। আর আয়তনে একটি ফুটবল মাঠের সমান। যেটির বিশাল ধাক্কা টাইটানিক সামাল দিতে না পেরে ডুবে যায়। (সূত্র: বিবিসি)। #

Comments are closed, but trackbacks and pingbacks are open.