বিটিসি আন্তর্জাতিক ডেস্ক: যুক্তরাষ্ট্রের অব্যাহত চাপের মুখেও ইসরায়েলের বিরুদ্ধে চলা যুদ্ধাপরাধ তদন্ত বাতিল করবে না বলে ঘোষণা দিয়েছে আন্তর্জাতিক অপরাধ আদালত (আইসিসি)। উল্টো সংস্থাটির বলছে তারা এ বিষয়ে উদ্বিগ্ন।
মিডল ইস্ট আইয়ের এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, আইসিসির বার্ষিক সভার পর, আসেম্বলি অব স্টেটস পার্টিস (এএসপি) এক বিবৃতিতে রোম স্ট্যাটিউটের অখণ্ডতা রক্ষা করার প্রতিশ্রুতি দিয়েছে এবং কোর্টের ওপর হুমকি ও প্ররোচনামূলক পদক্ষেপের বিষয়ে গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করেছে। যুক্তরাষ্ট্রের হুমকি ও চাপের পরও প্রতিষ্ঠাতা চুক্তি সংশোধনের মার্কিন দাবিও প্রত্যাখ্যান করেছে সংস্থাটি।
এই সভা অনুষ্ঠিত হয় এমন একটি সময়ে যখন যুক্তরাষ্ট্র ইতিমধ্যেই আইসিসির সিনিয়র কর্মকর্তা, বিচারক ও প্রধান প্রসিকিউটর করিম খানকে অর্থনৈতিক ও ভিসা নিষেধাজ্ঞার মুখে ফেলেছে। তাছাড়া, ট্রাম্প প্রশাসন এএসপি সভার আগে কোর্টকে ইসরায়েল ও আফগানিস্তানের যুদ্ধাপরাধ তদন্ত বন্ধ করার জন্য চাপ প্রয়োগ করার চেষ্টা করেছিল।
সদস্য রাষ্ট্রগুলোকে রোম স্ট্যাটিউট সংশোধন করারও আহ্বান জানায় যুক্তরাষ্ট্র, যাতে কোনো অসদস্য দেশের নাগরিকদের বিচার করা না হয়। এ ধরনের কোনো সংশোধনী আমেরিকান ও ইসরায়েলি নাগরিকদের কার্যত আইনি সুরক্ষা দিত এবং একই সঙ্গে ইউক্রেনের বিরুদ্ধে রাশিয়ার যুদ্ধাপরাধ তদন্তও শেষ হয়ে যেত।
তবে এএসপি’র চূড়ান্ত ঘোষণায় কেবল অসদস্য রাষ্ট্রের সঙ্গে সংলাপের প্রয়োজনীয়তার বিষয়টি উল্লেখ করা রয়েছে। আদালতের স্বাধীনতা ক্ষুণ্ণ হবে এমন কোনো আলোচনা এখানে অন্তর্ভুক্ত নয়। সংস্থাটির এক কূটনীতিক বলেন, যে কোনো সংশোধনী যা নিষেধাজ্ঞা রক্ষা করতে চায়, তা কোর্টকে আরও ক্ষতি করবে।
সংস্থাটির কর্মকর্তারা ইতিমধ্যেই নিশ্চিত করেছেন যে কোর্ট নিষেধাজ্ঞার মোকাবিলা করতে প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা গ্রহণ করছে। তবে এ পদক্ষেপগুলো গোপন রাখা হবে যাতে কার্যকারিতা বজায় থাকে। এএসপির ঘোষণায় নির্বাচিত কর্মকর্তা ও নাগরিক সমাজ সংগঠনগুলোর বিরুদ্ধে প্ররোচনামূলক পদক্ষেপকে কড়া সমালোচনা করা হয়েছে।
আইসিসির ইতিহাসে প্রথমবারের মতো ২০২৩ সালের অক্টোবর থেকে গাজা ও দখলকৃত ফিলিস্তিনে ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু এবং প্রাক্তন প্রতিরক্ষামন্ত্রী ইয়োভ গালান্তের বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করা হয়। এর পরিপ্রেক্ষিতে যুক্তরাষ্ট্র ও মিত্র রাষ্ট্রগুলো কোর্ট এবং প্রসিকিউটরকে হুমকি প্রদান করে।
এই বছরের এপ্রিল মাসে প্রসিকিউটর করিম খান নেতানিয়াহু ও গালান্তের গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারির আগে, ব্রিটিশ পররাষ্ট্রমন্ত্রী ডেভিড ক্যামেরন তাকে হুমকি দেন যে যদি গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি হয়, তবে যুক্তরাজ্য অর্থায়ন বন্ধ করবে এবং আইসিসি থেকে সরে যাবে।
ইসরায়েল এবং যুক্তরাষ্ট্রও একইভাবে এখতিয়ারের বিরুদ্ধে অবস্থান নেন। তারা দাবি করে যে তারা ফিলিস্তিনকে একটি রাষ্ট্র হিসাবে স্বীকৃতি দেয়নি, তাই কোর্ট তাদের নাগরিকদের বিচার করতে পারবে না।
আইসিসি বর্তমানে বিশ্বের একমাত্র স্থায়ী আন্তর্জাতিক আদালত, যা উচ্চ পর্যায়ের কর্মকর্তাদের আন্তর্জাতিক অপরাধের জন্য বিচার করতে পারে। বর্তমানে কোর্ট ১২টি তদন্ত চালাচ্ছে, যার মধ্যে রয়েছে ফিলিস্তিন, ইউক্রেন, আফগানিস্তান, দারফুর (সুদান), লিবিয়া, ডেমোক্রেটিক রিপাবলিক অব কঙ্গো ও ফিলিপাইন।
কোর্টের তদন্তের ওপর যুক্তরাষ্ট্র ও তার মিত্রদের চাপ, হুমকি ও অর্থনৈতিক নিষেধাজ্ঞা সত্ত্বেও সংস্থাটির বিচারক, প্রসিকিউটর ও কর্মকর্তারা তাদের স্বাধীনতা বজায় রাখার এবং তদন্ত চালিয়ে যাওয়ার দৃঢ় প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন। #

















