BTC News | বিটিসি নিউজ

আজ- শুক্রবার, ৫ই ডিসেম্বর, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ, ২০শে অগ্রহায়ণ, ১৪৩২ বঙ্গাব্দ, ১৪ই জমাদিউস সানি, ১৪৪৭ হিজরি

আজ- ৫ই ডিসেম্বর, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ

দিল্লির সঙ্গে রাশিয়ার গুরুত্বপূর্ণ চুক্তি: ‘বল এখন ভারতের কোর্টে’

দিল্লির সঙ্গে রাশিয়ার গুরুত্বপূর্ণ চুক্তি: ‘বল এখন ভারতের কোর্টে’

বিটিসি আন্তর্জাতিক ডেস্ক: রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন দুদিনের সফরে ভারতে যাচ্ছেন। তার আগেই রাশিয়ার পার্লামেন্ট ভারতের সঙ্গে গুরুত্বপূর্ণ এক সামরিক চুক্তির অনুমোদন দিয়েছে।

এই চুক্তি অনুযায়ী দুই দেশের সামরিক বাহিনী একে অপরকে লজিস্টিক্যাল সাপোর্ট দেবে, অর্থাৎ এক দেশের বাহিনী অপর দেশে গিয়ে সামরিক পরিকাঠামো ব্যবহার করতে পারবে।

ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির আহ্বানে ২৩তম ভারত-রাশিয়া বার্ষিক শীর্ষ সম্মেলনে যোগ দিতে বৃহস্পতিবার দিল্লি যাচ্ছেন পুতিন। এই সফরে সামরিক, বাণিজ্য ও খনিজ তেলের বিষয়ে আলোচনা হতে পারে বলে মনে করা হচ্ছে।

এছাড়াও পুতিনের সফর শুরুর ঠিক আগেই তার মুখপাত্র দিমিত্রি পেসকভ বলেছেন যে দ্বিপাক্ষিক সহযোগিতার ক্ষেত্রে রাশিয়া কতটা সহযোগিতার হাত বাড়িয়ে দেবে, তা নির্ভর করছে ভারত কতটা এগিয়ে আসতে চায়, তার ওপরে।

কী আছে রেলোস চুক্তিতে?

দুই দেশের মধ্যে এই ‘রেসিপ্রোকাল এক্সচেঞ্জ অফ লজিস্টিক সাপোর্ট বা ‘রেলোস’ চুক্তি অবশ্য সই হয়ে গিয়েছিল গত ১৮ই ফেব্রুয়ারি। তবে সেটি মঙ্গলবার রাশিয়ার পার্লামেন্টের নিম্নকক্ষ ‘স্টেট ড্যুমা’র অনুমোদন পেল।

সংবাদ সংস্থা পিটিআই জানিয়েছে যে গত সপ্তাহে চুক্তিটি ‘ড্যুমা’র কাছে অনুমোদনের জন্য পাঠিয়েছিলেন প্রধানমন্ত্রী মিখাইল মিশুস্তিন।

পিটিআই জানিয়েছে, ‘স্টেট ড্যুমা’র স্পিকার ভ্যাচেস্লাভ ভোলোদিন সভার শুরুতে তার ভাষণে ভারতের সঙ্গে রাশিয়ার সম্পর্ককে ‘সার্বিক এবং কৌশলগত’ বলে বর্ণনা করেন এবং এই সম্পর্ককে যে যথেষ্ট গুরুত্ব দেয় তার দেশ, সেটাও উল্লেখ করেন।

“যে চুক্তির অনুমোদন দেওয়া হচ্ছে, তা পারস্পরিক বোঝাপড়া আরও বাড়াবে এবং নিঃসন্দেহে আমাদের সম্পর্ক আরও উন্নত করবে।”

ভারত আর রাশিয়ার মধ্যে যে রেসিপ্রোকাল এক্সচেঞ্জ অফ লজিস্টিক সাপোর্ট বা ‘রেলোস’ চুক্তি হয়েছে, তা মূলত এক দেশ অপর দেশটিতে সামরিক বাহিনীর সদস্য, সরঞ্জাম, যুদ্ধ জাহাজ, সামরিক বিমান পাঠানোর কার্যপদ্ধতি।

শুধু যে বাহিনীর সদস্যদের অথবা সরঞ্জাম একটি দেশ অপর দেশে পাঠাতে পারবে ‘রেলোস’ চুক্তি অনুযায়ী, তা নয়। অপর দেশটিতে গিয়ে সেখানকার সামরিক পরিকাঠামোও ব্যবহার করা যাবে।

যৌথ মহড়া, প্রশিক্ষণ, মানবিক সহায়তা এবং ত্রাণ ও উদ্ধার কাজের ক্ষেত্রে এই চুক্তি অনুযায়ী সামরিক সহায়তা করবে একে অপরকে। ‘স্টেট ড্যুমা’র ওয়েবসাইটে রাশিয়ার মন্ত্রিসভাকে উদ্ধৃত করে লেখা হয়েছে যে একটি দেশ অপর দেশের আকাশসীমা এবং বন্দর সামরিক প্রয়োজনে ব্যবহার করতে পারবে।

হতে পারে আরও সামরিক চুক্তি?

রাশিয়ার ফার্স্ট ডেপুটি প্রাইম মিনিস্টার ডেনিস মান্তুরোভ সংবাদ সংস্থা এএনআইকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে বলেছেন যে ভারতের সঙ্গে তার দেশের সামরিক সহযোগিতা একটি কৌশল। এর পরের ধাপে কারিগরি এবং শিল্পোদ্যোগ পর্যায়ে গভীর সহযোগিতার দিকে এগোবে দুটি দেশ।

ওই সাক্ষাৎকারে মন্তুরোভ বলেছেন যে দুটি দেশের মধ্যে সামরিক সম্পর্কের ক্ষেত্রে মূল স্তম্ভগুলো হলো যৌথভাবে উদ্ভাবন ও উৎপাদন এবং স্থানীয় পরিবেশের সঙ্গে সরঞ্জামগুলোকে খাপ খাইয়ে নেওয়ার পদ্ধতি।

তিনি এও বলেছেন যে ভারতের মোট সামরিক সরঞ্জামের মধ্যে ৩০ শতাংশেরও বেশি মস্কো দিয়ে থাকে এবং গত এক দশকেরও বেশি সময় ধরে এটাই চলে আসছে।

আমাদের দুটি দেশের মধ্যে সামরিক-কারিগরি সহযোগিতার কৌশলগত কারণে গুরুত্বপূর্ণ। এই সহযোগিতা প্রতিবছরই আরও উন্নত এবং শক্তিশালী হচ্ছে- এএনআইকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে বলেছেন মন্তুরোভ।

সংবাদ সংস্থা রয়টার্স বলছে, দিল্লি সফরকালে পুতিনের সঙ্গে আলোচনায় সুখোই-ফিফটি সেভেন যুদ্ধবিমান ভারতকে দেওয়া নিয়েও আলোচনা হতে পারে। এগুলো সব থেকে আধুনিক যুদ্ধবিমান।

ভারতের যে ২৯টি যুদ্ধবিমানের স্কোয়াড্রন আছে, তার বেশিরভাগই রাশিয়ার তৈরি সুখোই-থার্টি। এখন তারা আরও আধুনিক সুখোই-ফিফটি সেভেনও দিতে চাইছে ভারতকে, এমনটাই দুজন ভারতীয় কর্মকর্তার সূত্র উদ্ধৃত করে লিখেছে রয়টার্স।

সংবাদ সংস্থাটি আরও জানিয়েছে যে রাশিয়ার সঙ্গে এই সপ্তাহের আলোচনায় উঠে আসতে আরও কয়েকটি এস-ফোর হান্ড্রেড আকাশ প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা কেনার কথাও। গত সপ্তাহে ভারতের প্রতিরক্ষা সচিব রাজেশ কুমার সিং এই ইঙ্গিত দিয়েছেন।

রাশিয়ার সঙ্গে ২০১৮ সালের এক চুক্তি অনুযায়ী ভারত ইতোমধ্যেই তিনটি এস-ফোর হান্ড্রেড পেয়ে গেছে, আরও দুটি পাওনা আছে তাদের।

সংবাদ সংস্থা এএনআইকে ফার্স্ট ডেপুটি প্রাইম মিনিস্টার মি. মন্তুরোভ জানিয়েছেন যে এস-ফোর হান্ড্রেড আকাশ প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা সময়মতোই সরবরাহ করা হবে।

এই এস-ফোর হান্ড্রেড ‘ট্রায়াম্ফ’ লম্বা রেঞ্জের বিমান-বিধ্বংসী ক্ষেপণাস্ত্র।

আবার সংবাদ সংস্থা এএনআই জানাচ্ছে যে শব্দের চেয়েও দ্রুতগতির ‘ব্রাহ্মোস’ ক্রুজ ক্ষেপণাস্ত্রের উন্নততর ভ্যারিয়্যান্ট কেনা নিয়েও আলোচনা হতে পারে।

‘বল এখন ভারতের কোর্টে’

রাশিয়ার সঙ্গে ভারত তাদের দ্বিপাক্ষিক সম্পর্ক কতটা নিবিড় করতে চায়, সেটা দিল্লির হাতেই ছেড়ে দিয়েছে মস্কো, এমনটাই মনে করছেন বিশ্লেষকরা। তারা বলছেন, বল এখন ভারতের কোর্টে।

প্রেসিডেন্ট পুতিনের সফরের ঠিক আগে, মঙ্গলবার, তার মুখপাত্র দিমিত্রি পেসকভ যোগ দিয়েছিলেন এক অনলাইন সংবাদ সম্মেলনে।

তিনি বলেন যে চীনের সঙ্গে রাশিয়ার সম্পর্কের দিগন্ত যেমন বহুদূর পর্যন্ত বিস্তৃত, ভারতের ক্ষেত্রেও তাই। তবে ওই সম্পর্ক কতটা বিস্তৃত হবে, তা নির্ভর করছে ভারতের ওপরে।

তার কথায়, চীন আমাদের বিশেষ কৌশলগত সহযোগী। চীনের সঙ্গে উচ্চস্তরের সহযোগিতা রয়েছে, যেমনটা আছে ভারতের সঙ্গেও। চীনের সঙ্গে সম্পর্ক আরও বিস্তৃত করার চেষ্টা করছি।

ভারতের প্রতিও আমাদের দৃষ্টিভঙ্গি একই। কিন্তু ভারত যতটা এগিয়ে আসবে, আমরাও ততদূর পর্যন্ত এগিয়ে যেতে প্রস্তুত। ভারত যতদূর পর্যন্ত সহযোগিতা বৃদ্ধি করবে, আমরাও তার জন্য প্রস্তুত আছি।

পেসকভ এও বলেছেন যে রাশিয়ার সঙ্গে সম্পর্ক নিয়ে ভারতের ওপরে চাপ আছে। এই চাপের মধ্যেই দুই দেশের দ্বিপাক্ষিক বাণিজ্য সুরক্ষিত রাখার দরকার আছে।

আমরা বুঝতে পারি যে ভারতের ওপরে চাপ আছে। এজন্যই আমাদের সম্পর্ক এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার ক্ষেত্রে আমাদের খুব সাবধান থাকতে হবে। আমাদের সম্পর্ক কোনো তৃতীয় দেশের প্রভাব-মুক্ত থাকা উচিত, ওই সংবাদ সম্মেলনে বলেছেন পেসকভ।

ভূ-রাজনৈতিক বিশ্লেষক ভেলিনা চাকারোভা পেসকভের সংবাদ সম্মেলনের পরে এক্স হ্যান্ডেলে লিখেছেন, রাশিয়া ইঙ্গিত দিচ্ছে যে ভারতের সঙ্গে তাদের কৌশলগত সহযোগিতায় কোনও ‘সীমা থাকবে না’।

এটা একটা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ মন্তব্য। চীনের ওপরে যাতে ভারতের নির্ভরতায় ভারসাম্য বজায় থাকে, তাই কৌশলগত দিক থেকে ভারতকেও একই পর্যায়ে রাখা হলো। যদি ভারত এই প্রস্তাব আংশিকভাবেও মেনে নয়, তাহলে এশিয়ার ভূ-রাজনৈতিক সমীকরণটাই বদলে যাবে, যার মধ্যে থাকবে ইউক্রেন যুদ্ধ নিয়ে কূটনীতি, ব্রিকস প্লাস, জ্বালানি সরবরাহ এবং ভারত-প্রশান্ত মহাসাগরীয় ভারসাম্য – অনেক কিছুই আবারও বদলে যাবে, লিখেছেন চাকারোভা।

জিন্দাল স্কুল অব ইন্টারন্যাশনাল অ্যাফেয়ার্সের ডিন এবং ‘ফ্রেন্ডস: ইন্ডিয়াজ ক্লোজেস্ট স্ট্র্যাটেজিক পার্টনারস’ বইয়ের লেখক শ্রীরাম চাউলিয়া বলছেন, রাশিয়া ভারতের কোর্টে বল রাখলেও রাশিয়ার এই আশা পূরণ হবে না।

শ্রীরাম চাউলিয়া বিবিসিকে বলেন, রাশিয়া ও চীনের মধ্যে জোট আসলে আমেরিকা-বিরোধী। ভারত এই জোটের অংশ হতে চায় না। চীন ও রাশিয়া উভয়েই যুক্তরাষ্ট্রকে প্রতিদ্বন্দ্বী হিসেবে বিবেচনা করে, কিন্তু ভারত তা করে না। ভারতের উন্নয়ন পথে আমেরিকার প্রয়োজন। ভারত রাশিয়ার জন্য আমেরিকাকে ত্যাগ করতে পারে না, আবার আমেরিকার জন্য রাশিয়াকে ছেড়ে দিতে পারে না। #

এইরকম আরও খবর

সর্বশেষ খবর

ব্রেকিং নিউজ
কোন ভয়ে সিনেমা করেননি দীপা খন্দকার? বন ও বন্যপ্রাণী সুরক্ষায় দুটি যুগান্তকারী অধ্যাদেশ পাস এভাবে জমি অধিগ্রহণ চললে ভবিষ্যতে কবরের জায়গাও থাকবে না : জ্বালানি উপদেষ্টা রাজশাহী সীমান্তে সরিষা ক্ষেত থেকে ভারতীয় মদ জব্দ বেগম জিয়া দলমত নির্বিশেষে সবার নিকট গ্রহনযোগ্য একজন নেত্রী : মিনু আটোয়ারী আদর্শ মহিলা ডিগ্রি কলেজে জিপিএ-৫ প্রাপ্ত শিক্ষার্থীদের সংবর্ধনা এসএসএফ সুবিধা পাবেন শুধু খালেদা জিয়া, পরিবারের অন্য সদস্য নয় : পরিবেশ উপদেষ্টা ভোজ্যতেলের দাম বাড়ানো ব্যবসায়ীদের ‘কারণ দর্শাও’ নোটিশ দিয়ে বৈঠকে ডেকেছে সরকার গাজায় ইসরায়েলি যুদ্ধাপরাধের জোরালো প্রমাণ রয়েছে : জাতিসংঘ মহাসচিব গাজায় ১০০ মিলিয়ন ডলারের মানবিক সহায়তার ঘোষণা চীনের