বিটিসি আন্তর্জাতিক ডেস্ক: চীনের তৃতীয় বিমানবাহী রণতরী ‘ফুজিয়ান’ আনুষ্ঠানিকভাবে দেশটির নৌবাহিনীতে যুক্ত হয়েছে। চলতি সপ্তাহের শুরুতে হাইনান প্রদেশের সানইয়ায় সামরিক বন্দরে এই রণতরীর উদ্বোধন করেন চীনের প্রেসিডেন্ট শি জিনপিং। একে চীনের নৌবাহিনীর সক্ষমতার একটি বড় মাইলফলক বলে মনে করা হচ্ছে।
চীনের রাষ্ট্রীয় সংবাদমাধ্যমের প্রতিবেদনে জানানো হয়েছে, ফুজিয়ান প্রদেশের নামানুসারে রণতরীটির নাম রাখা হয়েছে, যা তাইওয়ানের বিপরীতে অবস্থিত। এটি চীনা নৌবাহিনীর প্রভাব নিজস্ব জলসীমার বাইরেও আরও সম্প্রসারণে সহায়তা করবে।
রাষ্ট্রীয় বার্তা সংস্থা সিনহুয়ার খবরে বলা হয়েছে, রণতরীটির উদ্বোধন ও পতাকা প্রদান অনুষ্ঠানে নৌবাহিনী ও নির্মাণ ইউনিটের দুই হাজারের বেশি প্রতিনিধি উপস্থিত ছিলেন।
ফুজিয়ান চীনের তৃতীয় বিমানবাহী রণতরী হলেও এটি প্রথম দেশীয়ভাবে নকশা ও নির্মিত। আগের দুটি রণতরী লিয়াওনিং ও শানডং রুশ নকশায় তৈরি। এই দুই রণতরীর তুলনায় তৃতীয়টি প্রযুক্তিগত দিক থেকে আরও বেশি উন্নত।
এই রণতরীতে রয়েছে সমতল ফ্লাইট ডেক ও ইলেক্ট্রোম্যাগনেটিক ক্যাটাপুল্ট সিস্টেম—যা বর্তমানে যুক্তরাষ্ট্রের সর্বাধুনিক ফোর্ড-শ্রেণির রণতরীতেই ব্যবহৃত হচ্ছে। এর ফলে ফুজিয়ান আরও বেশি এবং ভারী অস্ত্রসজ্জিত যুদ্ধবিমান বহনে সক্ষম হবে।
পরীক্ষামূলক চালনার সময় চীনের নতুন জে–৩৫ স্টেলথ ফাইটারের নৌ সংস্করণ, কে–জে৬০০ আর্লি-ওয়ার্নিং বিমান এবং জে–১৫ জেটের একটি উন্নত সংস্করণ এই রণতরী থেকে উড্ডয়ন করানো হয়।
নিজস্ব নজরদারি বিমান বহনের ক্ষমতা থাকায় ফুজিয়ান এখন আগের দুটি রণতরীর মতো স্থলভিত্তিক সহায়তার বাইরে থেকেও পরিচালনা করতে পারবে, যা সমুদ্রের দূরবর্তী অঞ্চলে অভিযান সক্ষমতা বাড়াবে।
প্রেসিডেন্ট জিনপিং আগেই ঘোষণা দিয়েছেন, ২০৩৫ সালের মধ্যে চীনের সেনাবাহিনীকে আধুনিক ও ২০৫০ সালের মধ্যে ‘বিশ্বমানের’ বাহিনীতে রূপান্তরিত করা হবে। ফুজিয়ান সেবায় যোগ দেয়ার মাধ্যমে সেই লক্ষ্য অর্জনের পথে বেইজিং আরও এক ধাপ এগিয়ে গেল।
সেন্টার ফর স্ট্র্যাটেজিক অ্যান্ড ইন্টারন্যাশনাল স্টাডিজ-এর এশিয়া মেরিটাইম ট্রান্সপারেন্সি ইনিশিয়েটিভের পরিচালক গ্রেগ পোলিং বলেন, ‘বিমানবাহী রণতরীগুলো চীনা নেতৃত্বের সেই স্বপ্নের প্রতীক, যেখানে চীন নিজেকে একটি সমুদ্রশক্তিধর বিশ্বশক্তি হিসেবে দেখতে চায়।’
তার মতে, চীন দক্ষিণ চীন সাগর, পূর্ব চীন সাগর এবং হলুদ সাগরের জলসীমায়—যা জাপান, তাইওয়ান ও ফিলিপাইনকে ঘিরে তথাকথিত ‘ফার্স্ট আইল্যান্ড চেইন’—প্রাধান্য প্রতিষ্ঠা করতে চায়। পাশাপাশি, তারা যুক্তরাষ্ট্রের প্রভাবকেও প্রশান্ত মহাসাগরের গভীরে চ্যালেঞ্জ জানাতে আগ্রহী।
পোলিং বলেন, ‘প্রথম দ্বীপমালার ভেতরে রণতরী তেমন কার্যকর নয়, কিন্তু যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে যদি বৃহত্তর ইন্দো–প্রশান্ত মহাসাগরে প্রতিযোগিতা করতে চাও, তবে এই রণতরীগুলোই প্রধান অস্ত্র।’ #

















