নিজস্ব প্রতিবেদক : অবশেষে রাজশাহীর গোদাগাড়ী উপজেলায় তিন বছরের শিশু তামিম হোসেন খুনের রহস্য উন্মোতি হয়েছে। ফুফুর হাতে ‘অনিচ্ছাকৃতভাবে’ এই শিশু খুন হয়েছে। নিহত তামিম উপজেলার মাটিকাটা বাইপাস-উজানপাড়া গ্রামের মো. রাসেলের ছেলে।
গত শুক্রবার সকালে বাড়ির সামনের একটি মাচার নিচ থেকে তার লাশ উদ্ধার করে পুলিশ। লাশের মাথায় আঘাতের চিহ্ন ছিল। পেটের সঙ্গে পা বাধা এবং পলিথিন, জাল ও ওড়না দিয়ে জড়ানো অবস্থায় পাওয়া যায় লাশটি।
সোমবার দুপুরে রাজশাহী পুলিশ সুপার (এসপি) মো. শহীদুল্লাহ তার কার্যালয়ে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে সাংবাদিকদের এসব তথ্য জানান।
শিশু তামিমের বাবা পেশায় একজন নির্মাণশ্রমিক। গত বৃহস্পতিবার সকাল থেকে নিখোঁজ ছিল তামিম। এরপর বৃহস্পতিবার দিবাগত রাত আড়াইটার দিকে তামিমের লাশ পাওয়া যায়। রাসেলের ছোট ফুফু সোনিয়া খাতুন (১৪) প্রথমে তামিমের লাশ দেখতে পায়। পুলিশ বলছে, এই সোনিয়ার হাতেই ‘অনিচ্ছাকৃতভাবে’ খুন হয় তামিম।
এসপি জানান, বৃহস্পতিবার সকাল ১০টার দিকে হাঁসুয়ায় সবজি কাটছিল সোনিয়া। তখন হাঁসুয়ার নিচের অংশ থেকে কাঠের বাট খসে পড়ে। এতে হাঁসুয়ার বাট লাগানোর সরু লোহার অংশটি বেরিয়ে যায়। মাটিতে বাড়ি দিয়ে সোনিয়া সেই বাট লাগানোর চেষ্টা করছিল। তখন তামিম সেখানে ঢুকে পড়লে তার মাথায় আঘাত করে হাঁসুয়ার সরু লোহার অংশ।
এতে তার মাথায় গভীর ক্ষতের সৃষ্টি হয়। সঙ্গে সঙ্গে একটা ঝাঁকুনি দিয়ে মৃত্যুর কোলে ঢলে পড়ে শিশু তামিম। ওই সময় তামিমের মা ঘুমাচ্ছিলেন। সোনিয়া বিষয়টি প্রথমে তার বড় বোন রাবেয়া খাতুন (২২) ও পরে মা নার্গিস বেগমকে (৪৭) জানায়। এভাবে শিশুটির মৃত্যু হওয়ায় তারা ভয় পেয়ে যান। এরপর তারা সবাই মিলে লাশটি মাচার নিচে নিয়ে গিয়ে রেখে দেন এবং ঘটনাটি ভিন্নখাতে প্রবাহিত করার চেষ্টা করেন।
তিনি আরো জানান, ঘটনার পর পরিবারের সবাইকে জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়। কিন্তু কারও সঙ্গে কারও কথার মিল পাওয়া যাচ্ছিল না। তাই রোববার সোনিয়া, রাবেয়া ও তাদের মা নার্গিসকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য তার কার্যালয়ে নিয়ে আসা হয়। এরপর জিজ্ঞাসাবাদ শুরু হলে রাতে তারা তামিমের মৃত্যু কীভাবে হয়েছে তা পুলিশের কাছে বর্ণনা করেন। এ ঘটনায় তাদের গ্রেফতার করা হয়। সোমবার দুপুরে তাদের আদালতে হাজির করা হয়। তারা আদালতে ১৬৪ ধারায় জবানবন্দী দেন।
এসপি আরো জানান, শিশুটি নিখোঁজ থাকায় রাতে এলাকায় মাইকিং করেন তার বাবা রাসেল। বাড়িতে এমন একটি ঘটনা ঘটলেও তামিমের দাদা, বাবা ও মা সোমবার দুপুর পর্যন্ত জানতেনই না যে, ফুফু সোনিয়ার হাতেই তামিমের মৃত্যু হয়েছে। আরেক ফুফু রাবেয়া এবং দাদী নার্গিস ঘটনাটি জানতেন বলেও তারা বুঝতে পারেননি। আদালতে জবানবন্দী দেওয়ার পর তারা জানতে পেরেছেন।
এসপি বলেন, তামিমের মৃত্যুর ঘটনায় তার বাবা রাসেল অজ্ঞাতনামা আসামি করে থানায় মামলা করেন। ওই মামলায় এই তিনজনকে গ্রেফতার দেখানো হয়। নিহত তামিমের লাশের ময়নাতদন্তও করা হয়েছিল। তবে তার প্রতিবেদন পাওয়া যায়নি। ময়নাতদন্তের প্রতিবেদন হাতে পাওয়ার পর এ মামলার অভিযোগপত্র দাখিল করা হবে। আপাতত ‘অনিচ্ছায়’ তামিম খুন হয়েছে বলে জানা গেলেও অন্য কোনো কারণ আছে কিনা বা ঘটনাটি আর কেউ জানতেন কিনা সে বিষয়ে তদন্ত চলছে বলেও জানান এসপি মো: শহীদুল্লাহ। #
Comments are closed, but trackbacks and pingbacks are open.