৮ প্রতিষ্ঠান নিষিদ্ধ পাঠ্যবই মুদ্রণে অনিয়ম

বিটিসি নিউজ ডেস্ক : বৃহস্পতিবার বিকালে এনসিটিবির বৈঠকে এ সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে। এ নিয়ে কথা হয় সংস্থাটির চেয়ারম্যান অধ্যাপক নারায়ণ চন্দ্র সাহার সঙ্গে। পাঠ্যপুস্তক বোর্ড (এনসিটিবি) জাতীয় পাঠ্যক্রম আটটি মুদ্রণ প্রতিষ্ঠানকে কালো তালিকাভুক্ত করেছে । এই কালো তালিকাভুক্ত প্রতিষ্ঠানগুলো হচ্ছে- মেসার্স আল মদীনা, মেসার্স পিএ প্রিন্টিং, টাঙ্গাইল অফসেট প্রেস, মডেল প্রিন্টিং, আবুল প্রিন্টিং, ক্যাপিটাল প্রেস অ্যান্ড পাবলিকেশন্স, কোয়ালিটি প্রিন্টিং প্রেস ও মেসার্স কাজল প্রিন্টিং ওয়ার্কস। এর মধ্যে প্রথম দুটিকে পাঠ্যবই মুদ্রণে আজীবন সব ধরণের মুদ্রণ নিষিদ্ধ করা হয়েছে। পরের তিনটিকে এক বছরের জন্য নিষিদ্ধ করা হয়, ষষ্ঠ ও সপ্তমটি ২ বছরের এবং শেষেরটি ৩ বছরের জন্য নিষিদ্ধ করা হয়েছে। এ বছর যথাসময়ে পাঠ্যবই সরবরাহ না করা, নিম্নমানের কাগজ-কালিতে পাঠ্যবই ছাপানোসহ ৮ ধরনের দুর্নীতি-অনিয়মের অভিযোগ প্রমাণিত হওয়ার পর এই শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেয়া হল। এ ছাড়া মোটা অঙ্কের অর্থ জরিমানার খড়গও ঝুলছে।

পাঠ্যপুস্তক বোর্ড (এনসিটিবি) জাতীয় পাঠ্যক্রম এর চেয়ারম্যান অধ্যাপক নারায়ণ চন্দ্র সাহা বলেন, পাঠ্যবই মুদ্রণ কাজ তদারকির দায়িত্বপ্রাপ্ত প্রতিষ্ঠান এনসিটিবির অভ্যন্তরীণ মনিটরিং কমিটি এবং মাঠপর্যায়ের প্রতিবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে আট প্রতিষ্ঠানকে তালিকাভুক্ত করা হয়েছে। এসব প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে খুব শিগগির অর্থদণ্ডের প্রক্রিয়াও শুরু করা হবে। জানা গেছে, এসব প্রতিষ্ঠান তাদের মোট কাজের ৮০ শতাংশ বিল নিয়ে গেছে। তবে মোট কাজের ১৫ শতাংশ অর্থ পারফরম্যান্স গ্যারান্টি (পিজি) হিসেবে এনসিটিবিতে জমা আছে।

বাকি ২০ শতাংশ বিলসহ পিজির ১৫ শতাংশ অর্থের বেশিরভাগই এখন জরিমানা করা হবে। তবে এনসিটিবির একজন শীর্ষ কর্মকর্তা এসব প্রতিষ্ঠানকে জরিমানার হাত থেকে রেহাই দেয়ার অপচেষ্টা করছেন বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে। নন-মুসলিম হওয়া সত্ত্বেও ওই কর্মকর্তার বিরুদ্ধে মসজিদ নির্মাণে সহায়তার নামে কোনো কোনো মুদ্রণ প্রতিষ্ঠান থেকে মোটা অঙ্কের অর্থ নেয়ার অভিযোগ আছে। এ ছাড়া পরিদর্শিত প্রতিষ্ঠানের অর্থে বিদেশে বইয়ের মুদ্রণ কাজ পরিদর্শনে যাওয়াসহ আরও বেশকিছু অভিযোগ আছে ওই কর্মকর্তার বিরুদ্ধে।

এনসিটিবি সূত্র বলছে, কালো তালিকাভুক্ত প্রতিষ্ঠানগুলোর বিরুদ্ধে আট ধরনের অভিযোগ আনা হয়েছে। এর মধ্যে মেসার্স আল মদীনা এনসিটিবির কাজ নেয়ার জন্য সম্মতিপত্র দিয়েও চুক্তিবদ্ধ হয়নি। ফলে তাকে দেয়া কাজ নিয়ে বিপাকে পড়েছে এনসিটিবি। উদ্ভূত পরিস্থিতিতে অন্য প্রতিষ্ঠানকে দিয়ে কাজ শেষ করতে হয়েছে। আরেক প্রতিষ্ঠানের মেশিন দেখিয়ে কাজ নিয়েছিল মেসার্স পিএ প্রিন্টিং। বই যথাসময়ে সরবরাহ করেনি। মুদ্রিত বইয়ের কাগজ, ছাপা মান ও বাঁধাই সবই নিম্নমানের।

প্রতিষ্ঠানটি প্রাথমিক, মাধ্যমিক ও মাদ্রাসা স্তর মিলিয়ে সাতটি লটের কাজ পেয়েছিল। এর মধ্যে ২২০ প্যাকেজের টেন্ডারে ১৩ ও ১২৪ নম্বর লটের কাজ পায় তারা। ওই দুই লটের একটি বইও গত নভেম্বর পর্যন্ত সরবরাহ করেনি। অথচ ওই মাসের তৃতীয় সপ্তাহের মধ্যে মাধ্যমিকের একাংশ এবং বাকি স্তরের বই সরবরাহের কথা ছিল। বই সরবরাহের শেষদিন পার হওয়ার পরবর্তী ২৮ দিনের মধ্যে জরিমানা দিয়ে বই সরবরাহ করতে পারে কোনো প্রতিষ্ঠান। কিন্তু সেই সময়েও বই সরবরাহ করেনি আবুল ও কোয়ালিটি প্রিন্টিং।

একই ধরনের কাণ্ড ঘটায় টাঙ্গাইল প্রিন্টিং। এনসিটিবির একাধিক কর্মকর্তা বলেন, বড় ঘটনা ঘটায় মডেল প্রিন্টিং। দেশের বিভিন্ন স্থান থেকে ২০১৭ সালের বই সংগ্রহ করে এর ওপর ‘২০১৮’ ছাপ দিয়ে সরবরাহ করে। দেশের বিভিন্ন স্থান থেকে আসা পোস্ট ল্যান্ডিং ইন্সপেকশনে (পিএলআই) তা ধরা পড়ে। কাজল প্রিন্টিং বই সরবরাহ না করেই ভুয়া সংখ্যা দেখিয়ে ছাড়পত্র নেয় বলে এনসিটিবিকে মাঠপর্যায়ের শিক্ষা অফিস থেকে অভিযোগ করা হয়।

এসব অভিযোগই বৃহস্পতিবারের এনসিটিবির বৈঠকে তুলে ধরা হয়। অভিযোগের ব্যাপারে কোনো প্রতিষ্ঠানের বক্তব্য পাওয়া যায়নি। এনসিটিবির একজন কর্মকর্তা বলেন, কালো তালিকায় শুধু শেষ সময় পার হওয়ার ২৮ দিন অতিক্রম করা প্রতিষ্ঠানকে বিবেচনা করা হয়েছে। টেন্ডারের শর্ত লঙ্ঘন করে কাজ করা আরও কিছু প্রতিষ্ঠান আছে। অবশিষ্ট ২০ শতাংশ বিল দেয়ার সময়ে সেগুলো চিহ্নিত করা হবে। #

Comments are closed, but trackbacks and pingbacks are open.