৫৭ বনদস্যুর আত্মসমর্পণ শীঘ্রই সুন্দরবনকে বনদস্যুমুক্ত ঘোষণা করা হবে : স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী

 

খুলনা ব্যুরো : স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খানের কাছে বিপুল পরিমাণ অস্ত্র ও গোলাবারুদ দিয়ে আত্মসমর্পন করল সুন্দরবনের ছয়টি বনদস্যু বাহিনীর ৫৭ জন সদস্য। এসময় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী তার বক্তৃতায় বলেন, শীঘ্রই সুন্দরবনকে বনদস্যুমুক্ত ঘোষণা করা হবে। অল্প কিছু জলদস্যু এখনও রয়েছে উল্লেখ করে তিনি প্রসঙ্গ টেনে বলেন, তাদের আত্মসমর্পনের পরই এ ঘোষণা দেয়া হবে। তিনি আরও বলেন, এতোদিন যারা ছিল সুন্দরবনের মূর্তিমান আতংক আজ তারা তাদের ভুল বুঝতে পেরে স্বাভাবিক জীবনে ফিরে আসা শুরু করেছে। বাকীরাও তাদের ভুল বুঝবে বলে তার বিশ্বাস।

বুধবার দুপুরে র‌্যাপিড এ্যাকশন ব্যাটালিয়ন(র‌্যাব)-৬এর সদর দপ্তরে এ আত্মসমর্পন অনুষ্ঠানে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী প্রধান অতিথি হিসেবে বক্তৃতা করেন।

আত্মসমর্পনকারী বনদস্যু বাহিনীর সদস্যরা হলো র‌্যাব-৬ এর আওতাধীন দাদা ভাই বাহিনীর ১৫জন, হান্নান বাহিনীর নয় জন এবং আমির আলী বাহিনীর সাত জন এবং র‌্যাব-৮ এর আওতাধীন সূর্য বাহিনীর ১০জন, ছোট সামসু বাহিনীর নয় জন এবং মুন্না বাহিনীর সাত জন। এনিয়ে গত ২৩ মাসে মোট ২০টি বাহিনী স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর কাছে মোট আত্মসমর্পণ করেছে ২১৭ জন সদস্য। অস্ত্র জমা দিয়েছে ৩৪৬টি ও গুলি ১৭ হাজার ৮৬৯ রাউন্ড। এছাড়া র‌্যাব প্রতিষ্ঠার পর থেকে ৫৭২ জন জলদস্যু গ্রেফতার হয়। ১ হাজার ৫৪২টি অস্ত্র এবং ৩৩ হাজার ১৮৬ রাউন্ড গুলি উদ্ধার করা হয়েছে।

আত্মসমর্পণ অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তৃতায় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খাঁন আরও বলেন, টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা অর্জনে দেশকে জঙ্গি, মাদক ও জলদস্যু-বনদস্যু মুক্ত করতে হবে। আর এ প্রত্যয়ে র‌্যাবসহ আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর প্রতিটি ইউনিট কঠোর অবস্থান নিয়ে কাজ করছে।

তিনি আরও বলেন, ভিশন-২০২১ ও ভিশন-২০৪১ বাস্তবায়ন করতে হলে যুব সমাজকে মাদকের ছোবল থেকে রক্ষা করতে হবে। এজন্য প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নির্দেশে সারা দেশে মাদকবিরোধী অভিযান অব্যাহত রয়েছে। সম্প্রতি তিন হাজারের অধিক মাদক ব্যবসায়ীদের আইনের আওতায় আনা হয়েছে। এসময় পূর্বে র‌্যাবের কাছে আত্মসমর্পণকারী সাবেক ৫৮জন জলদস্যু ও বনদস্যুর প্রত্যেককে পূর্নবাসনের জন্য প্রধানমন্ত্রী প্রদত্ত এক লাখ টাকা করে চেক প্রদান করা হয়।

অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথির বক্তৃতা করেন মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রী নারায়ণ চন্দ্র চন্দ। অন্যান্যের মধ্যে বক্তৃতা করেন স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত স্থায়ী কমিটির সদস্য ডা. মো. মোজাম্মেল হোসেন এমপি, আবু সাঈদ আল মাহমুদ স্বপনএমপি, খুলনা সিটি কর্পোরেশনের নব নির্বাচিত মেয়র তালুকদার আব্দুল খালেক, র‌্যাবের মহাপরিচালক বেনজির আহমেদ, নৌ-পুলিশের ডিআইজি শেখ মো. মারুফ হাসান, র‌্যাব-৮ এর অধিনায়ক আতিকা ইসলাম, খুলনা রেঞ্জের অতিরিক্ত ডিআইজি মো. হাবিবুর রহমান এবং খুলনা জেলা প্রশাসক মো. আমিন উল আহসান।

অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন র‌্যাব-৬ এর অধিনায়ক খোন্দকার রফিকুল ইসলাম। এছাড়া স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত স্থায়ী কমিটির অন্যান্য সদস্যদের মধ্যে ফখরুল ইসলাম এমপি, ফরিদুল হক খান এমপি, শামসুল হক টুকু এমপি, বেগম কামরুন্নাহার চৌধুরী এমপি, কোস্টগার্ডের মহাপরিচালক রিয়াল এডমিরাল আওরঙ্গজেব, বিজিবি’র অধিনাকয়ক কর্ণেল তৌহিদুল ইসলাম, কেএমপি কমিশনার হুমায়ুন কবিরসহ র‌্যাব, পুলিশ, বিজিবি ও কোষ্টগার্ডের উর্ধতন কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।

এসময় আত্মসমর্পনকারী বনদস্যুদের পক্ষ থেকে বক্তৃতা করেন, রাজন বাহিনীর প্রধান জয়নাল আবেদীন রাজন এবং মৎস্যজীবীদের পক্ষ থেকে বক্তৃতা করেন, দাকোপের কালাবগী এলাকার মৎস্যজীবী মো: সাহেব আলী।

খুলনা র‌্যাব-৬ এর অধিনায়ক খোন্দকার রফিকুল ইসলাম জানান, মোট ছয়টি গ্রুপের ৫৭ জন আত্মসমর্পণ করে। তারা অস্ত্র জমা দেয় ৫৮টি এবং গুলি জমা দেয় ১২৮৪ রাউন্ড।#

Comments are closed, but trackbacks and pingbacks are open.