৩ বছরে ২৫০টির বেশি ইজিবাইক এবং অটোরিকশা ছিনতাই

নারায়ণগঞ্জ প্রতিনিধি: বেশ পরিপাটি হয়ে অটোরিকশার জন্য বাড়ির সামনে দাঁড়িয়ে আছেন এক ভদ্রলোক। একটি অটোরিকশা থামতেই তিনি উঠে পড়লেন আর বাড়ির প্রধান ফটকে থাকা দারোয়ানের জন্য অপেক্ষা করছেন।
একটু পরেই দারোয়ান ফিরে আসলে রাগ করে বললেন, কেন গেট খোলা রেখে সে পাশের দোকানে গিয়েছিল। বকঝকার পর তিনি অটোরিকশার ড্রাইভারকে গন্তব্যে যেতে বললেন। ২-৩ মিনিট যাওয়ার পরই ওই ভদ্রলোকের মোবাইলে ফোন আসে এবং তিনি জরুরি কাগজ ফেলে এসেছেন বলে জানা গেল।
অটোরিকশার ড্রাইভারকে বললেন সেই দারোয়ানের কাছ থেকে কাগজপত্রগুলো নিয়ে আসতে। ড্রাইভার তার বাহনটি রাস্তার পাশে রেখে গিয়ে দেখেন দারোয়ান সেখানে নেই। খানিক পর এসে দেখলেন সেখানে ওই বাড়ির মালিকও নেই, তার অটোরিকশাটিও নেই।
মূলত বাড়ির মালিক আর দারোয়ান সেজে অভিনয় করা ওই দুইজনই ছিল অটোরিকশা ছিনতাইকারী চক্রের সদস্য। শুধু এমন কৌশলই নয়, এই চক্রে রয়েছে ভয়ঙ্কর খুনিও। যারা চালককে খুন করেও ছিনিয়ে নেয় অটোরিকশা, ইজিবাইক বা সিএনজি অটোরিকশাও।
এমন চক্রের ভয়ঙ্কর ৬ সদস্যকে গ্রেফতার করেছে নারায়ণগঞ্জ পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশন। নারায়ণগঞ্জ, ঢাকা ও নীলফামারী জেলার বিভিন্ন এলাকায় অভিযান চালিয়ে তাদের গ্রেফতার করা হয়। এ সময় তাদের কাছ থেকে ধারালো অস্ত্রসহ ৫টি চোরাই অটোরিকশার গ্যারেজের সন্ধান মিলেছে।
পিবিআই নারায়ণগঞ্জ জেলার পুলিশ সুপার মনিরুল ইসলাম জানিয়েছেন, গত ৬ সেপ্টেম্বর ফতুল্লার নরসিংহপুর কাউয়াপাড়ার জাহাঙ্গীরের গ্যারেজ থেকে মিশুক নিয়ে বের হয়ে নিখোঁজ হন চালক আব্দুল কুদ্দুস। এ ব্যাপারে তার স্ত্রী রীনা খাতুন একটি মামলা করেন এবং পিবিআই মামলটির তদন্তভার গ্রহণ করে। তদন্তে বেরিয়ে আসতে থাকে চাঞ্চল্যকর সব তথ্য।
পরবর্তীতে নারায়ণগঞ্জের সোনারগাঁ ও আড়াইহাজার, নীলফামারীর ডিমলা এবং ঢাকার বিভিন্ন জায়গায় অভিযান পরিচালনা করে বন্দরের শাহ আলম (৩৮), সিদ্ধিরগঞ্জের হালিম (৪২), পিরোজপুরের মো. শহিদুল (৩২), বরগুনার বাদশা (৪৭), সোনারগাঁয়ের মো. আসলাম (৩০) এবং মো. মনিরকে (৪০) গ্রেফতার করা হয়।
এ সময় গ্রেফতারকৃত আসামী শাহ আলমের কাছ থেকে নিখোঁজ মিশুক চালক কুদ্দুসের মোবাইল এবং ছিনতাই কাজে ব্যবহার করা একটি ডাবল ডেগার (সুইচ গিয়ার চাকু) জব্দ করা হয়। এরপর তার দেয়া তথ্যমতে বাকিদেরও গ্রেফতার করা হয়।
জিজ্ঞাসাবাদে গ্রেফতারকৃতরা জানান, তারা মূলত ৮-১০ জনের একটি গ্রুপ নারায়ণগঞ্জসহ আশপাশের বিভিন্ন জেলায় অটোরিকশা-ইজিবাইক, অটোমিশুক ছিনতাই করে।
পুলিশ সুপার আরও জানান, এ চক্রের সদস্যরা ৩টি পদ্ধতিতে তারা তাদের কর্মকাণ্ড পরিচালনা করে। প্রথমত তারা কোনো বাড়ির মালিক ও দারোয়ান সেজে অটোরিকশা বা সিএনজি চুরি করে। এছাড়াও তারা যে অটোরিকশাটি টার্গেট করে সেখানে কোট-টাই পরিহিত সাহেব হিসেবে অটোরিকশার যাত্রী সাজে, অন্য আরও দুইজন সাহেবের বন্ধু হিসেবে অটোরিকশায় উঠে চালকের চাহিদামতো ভাড়ায় রাজি হয়ে চক্রের পূর্বপরিকল্পিত স্থানে যেতে বলে।
পথিমধ্যে তারা সুবিধাজনক স্থানে নেমে ড্রাইভারের সঙ্গে ঘনিষ্ঠতা বাড়ানোর জন্য ড্রাইভারকে চা খাওয়ার প্রস্তাব দেয়। ওই সময় তারা সু-কৌশলে ড্রাইভারের চায়ের মধ্যে চেতনানাশক/ উচ্চক্ষমতা সম্পন্ন ঘুমের ওষুধ মিশিয়ে দেয়। ড্রাইভার আস্তে আস্তে নিস্তেজ হয়ে পড়লে ছিনতাইকারী চক্রের পূর্বনির্ধারিত প্রশিক্ষিত ড্রাইভার গাড়ির নিয়ন্ত্রণ নিয়ে নেয়। তবে এই চক্রের সবচেয়ে ভয়ঙ্কর কৌশলটি হলো চালককে হত্যা করা।
অটোরিকশা ভাড়া করে তাদের পূর্বনির্ধারিত স্থানে যাওয়ার চেষ্টাকালে কখনো যদি ওই ড্রাইভার ছিনতাই চক্রের কৌশল বুঝে ফেলে কিংবা কোনো সন্দেহ তৈরি হয় তখন ওই ড্রাইভার তাদেরকে গাড়ি থেকে নামিয়ে দিয়ে চলে যেতে চাইলে ছিনতাই চক্রের সদস্যরা প্রথমে উক্ত ড্রাইভারকে ভয়ভীতি দেখিয়ে অটো ছিনতাইয়ের চেষ্টা করে। পরবর্তীতে গাড়ির ড্রাইভার ছিনতাই চক্রকে গাড়ীটি ছিনতাইয়ে বাধা দিলে তাৎক্ষণিক তাকে উপর্যুপরি ছুরিকাঘাত করে মৃত অথবা অর্ধমৃত অবস্থায় ফেলে দিয়ে গাড়িটি ছিনতাই করে নিয়ে যায়।
পিবিআই সূত্র জানায়, জিজ্ঞাসাবাদকালে তারা প্রাথমিকভাবে স্বীকার করে যে, তারা প্রায় ৩ বছর যাবত অনুমান ২৫০টির বেশি ইজিবাইক এবং অটোরিকশা ছিনতাই করেছে।
সংবাদ প্রেরক বিটিসি নিউজ এর নারায়ণগঞ্জ প্রতিনিধি মো. আফজাল হোসেন আফজাল  #

Comments are closed, but trackbacks and pingbacks are open.