১৮ বিক্ষোভকারীর রক্তে ভিজল মিয়ানমারের রাজপথ

(১৮ বিক্ষোভকারীর রক্তে ভিজল মিয়ানমারের রাজপথ–ছবি: সংগৃহীত)
বিটিসি আন্তর্জাতিক ডেস্ক: সামরিক অভ্যুত্থানে মিয়ানমারের সেনাবাহিনীর ক্ষমতা গ্রহণের পর ভয়াবহ এক রক্তাক্ত দিন দেখল। অভ্যুত্থান বিরোধী বিক্ষোভকারীদের ওপর গুলি ছুড়েছে দেশটির পুলিশ। এতে এখন পর্যন্ত মৃত্যু হয়েছে ১৮ জনের। আহত হয়েছেন আরও বেশ কয়েকজন।
আজ রবিবার (২৮ ফেব্রুয়ারী) আন্তর্জাতিক গণমাধ্যম আলজারিরা এ তথ্য জানিয়েছে। অবশ্য স্থানীয় সংবাদমাধ্যম, চিকিৎসক ও রাজনীতিবিদদের বরাত দিয়ে বার্তা সংস্থা রয়টার্স জানিয়েছে, সহিংসতায় ১১ জনের মৃত্যু হয়েছে। আর বিবিসি বলছে, এখন পর্যন্ত ১০ জনের মৃত্যুর তথ্য নিশ্চিত হওয়া গেছে।

জাতিসংঘের মানবাধিকার বিষয়ক সংস্থার বরাতে আল জাজিরা জানায়, সারা দিন ধরে মিয়ানমারের বেশ কয়েকটি স্থানে পুলিশ এবং সামরিক বাহিনী  দেশটির জনগণের শান্তিপূর্ণ বিক্ষোভ দমনে মারণাস্ত্রসহ বিভিন্ন অস্ত্রের ব্যবহার করেছে।  জাতিসংঘের মানবাধিকার অফিসের সূত্র অনুসারে – রবিবার কমপক্ষে ১৮ জন মানুষ নিহত ও ৩০ জনেরও বেশী আহত হয়েছে।

দেশটির রাজনীতিবিদ কিয়া মিন হিটেক জানিয়েছেন, দাউই শহরের বিক্ষোভে গুলি চালিয়ে পুলিশ। এতে একজনের মৃত্যু হয়। এরপর আরও দুইজনকে গুলি করে হত্যা করে পুলিশ। এ ঘটনায় বেশ কয়েকজন আহতও হয়েছেন।
স্থানীয় সংবাদমাধ্যমও জানিয়েছে, দাউই শহরে পুলিশের গুলিতে ৩ জন নিহত হয়েছেন। আহত হয়েছেন ১২ জনের বেশী।

দেশটির প্রধান শহর ইয়াঙ্গুনেও গুলি চালিয়েছে পুলিশ। এতে এক আন্দোলনকারীর বুকে গুলি লাগে। দ্রুত তাকে উদ্ধার করে হাসপাতালে নিলে চিকিৎসক মৃত ঘোষণা করেন। তার পরিচয় এখনও জানা যায়নি। স্থানীয় সংবাদমাধ্যম এ খবর জানিয়েছে।

ইয়াঙ্গুনের মূল শহরে স্টান গ্রেনেড দিয়ে শিক্ষকদের একটি বিক্ষোভ ছত্রভঙ্গ করে দিয়েছে পুলিশ। এসময় এক নারী মারা গেছেন। যদিও তার মৃত্যুর কারণ নির্দিষ্ট করে এখনও জানা যায়নি। ওই নারীর মেয়ে এবং এক সহকর্মী এ তথ্য জানিয়েছেন। এছাড়া পরে আরও চারজনের মৃত্যুর তথ্য পাওয়া গেছে।

স্থানীয় সংবাদমাধ্যম বলছে, অভ্যুত্থানবিরোধী আন্দোলন ছত্রভঙ্গ করতে স্টান গ্রেনেড ও টিয়ার গ্যাস ব্যবহার করে ব্যর্থ হওয়ার পর পুলিশ ইয়াঙ্গুনের বিভিন্ন এলাকায় গুলি চালাতে শুরু করে। এসময় ধোঁয়ায় অন্ধকার হয়ে পড়ে পুরো এলাকা।

সেনা অভ্যুত্থানবিরোধী বিক্ষোভে উত্তাল দক্ষিণ এশিয়ার দেশটি। প্রায় শুরু থেকেই জনসাধারণের বিক্ষোভ চলছে। শনিবার দেশটির নিরাপত্তা বাহিনী কঠোর অবস্থান নেয় বিক্ষোভের বিরুদ্ধে। এক নারী গুলিবিদ্ধ হন এবং বেশ কয়েকজনকে গ্রেপ্তার করা হয়। এরপর আজ রবিবারও বিক্ষোভ প্রতিহত করতে অসহিংস পদক্ষেপ শুরু করে তারা।

রয়টার্স বলছে, তবে দেশজুড়ে বিক্ষোভে গুলি চালানো ও হতাহতদের ব্যাপারে পুলিশ বা ক্ষমতাসীন সামরিক কাউন্সিলের মুখপাত্রের কোনো মন্তব্য পাওয়া যায়নি। জানতে চেয়ে ফোন করা হলে কোনো সাড়া দেয়নি।
মিয়ানমারে গত ৮ নভেম্বরের জাতীয় নির্বাচনে নিরঙ্কুশ জয় পায় অং সান সু চির দল ন্যাশনাল লিগ ফর ডেমোক্রেসি (এনএলডি)। তবে এনএলডি নিরঙ্কশ জয় পেলেও সেনাবাহিনী সমর্থিত দল ইউনিয়ন সলিডারিটি অ্যান্ড ডেভেলপমেন্ট পার্টি (ইউএসডিপি) ভোটে প্রতারণার অভিযোগ তুলে ফলাফল মেনে নিতে অস্বীকৃতি জানিয়ে আসছিল। তারা নতুন করে নির্বাচন আয়োজনের দাবি তোলে।

গত ১ ফেব্রুয়ারী থেকে নতুন পার্লামেন্টের অধিবেশন শুরু হওয়ার কথা ছিল। তবে ওইদিন ভোরে স্টেট কাউন্সেলর অং সান সু চি ও প্রেসিডেন্ট উইন মিন্টসহ এনএলডির শীর্ষ বেশ কিছু নেতাকে গ্রেপ্তারের পর এক বছরের জন্য মিয়ানমারে জরুরি অবস্থা জারী করে সেনাবাহিনী। ক্ষমতায় বসেন সেনাপ্রধান জেনারেল মিন অং হ্লাইং।

সেনাবাহিনীর ক্ষমতা গ্রহণের পর গণতান্ত্রিক সরকারের হাতে ক্ষমতা হস্তান্তর ও গ্রেপ্তার নেতাদের মুক্তির দাবীতে আন্দোলনে নামে সাধারণ মানুষ।

মিয়ানমার সেনাবাহিনী বলছে, বিক্ষোভ ঠেকাতে তারা ন্যূনতম শক্তি প্রয়োগ করছে। (সূত্র: রয়টার্স-আল জারিরা)। #

Comments are closed, but trackbacks and pingbacks are open.