হুদায়বিয়া সন্ধি শান্তি প্রতিষ্ঠার বিরল দলিল

কসবা (ব্রাহ্মণবাড়িয়া) প্রতিনিধি : ইসলাম এক কালজয়ী ও বিশ্বজনীন জীবনব্যবস্থা। আর এ জীবনব্যবস্থার প্রবর্তক মানবতার মুক্তির দূত হযরত মুহাম্মদ (সা:)। তিনি মুসলিম উম্মাহ ও বিশ্বমানবতার জন্য মহিমান্বিত অবিসংবাদিত নেতা ও প্রাজ্ঞ পথ প্রদর্শক। মানবতার সংকট সমাধানে তাঁর চিন্তা-চেতনা অভাবনীয়। সংঘাত এড়াতে তার দক্ষতা-বিচক্ষণতা অকল্পনীয়। পারিবারিক জীবন, সামাজিক জীবন, রাষ্ট্রিয় জীবনসহ সর্বক্ষেত্রে তিনি সফল। পরিবার ও সমাজে শান্তি প্রতিষ্ঠায় যেমন তার রয়েছে উদারতা, দয়াদ্রতা ও মহানুভবতা। তেমনি ইসলামী কল্যাণ রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠায় রয়েছে তার অসাধারণ পান্ডিত্য, কঠোর সমর নীতি, বুদ্ধিমত্তা ও রাজনৈতিক দূরদর্শিতা।

হুদায়বিয়ার সন্ধি রাসূলুল্লাহ (সা:) এর চরম রাজনৈতিক দূরদর্শিতার স্ব-চিত্র। আপাত দৃষ্টিতে স্ব-বিরোধী মনে হলেও মূলত এর মাধ্যমেই বহুবিদ কল্যাণের পথ উম্মোচিত হয়েছিলো। আল্লাহ তাআলা কুরআনে কারীমে এ সন্ধিকে মুসলমানদের জন্য সুস্পষ্ট বিজয় ঘোষণা করেছেন। “নিশ্চয়ই আমি আপনাকে প্রকাশ্য বিজয় দান করেছি” (সূরা ফাতাহ-১)

হুদায়বিয়ার সন্ধি দীন ইসলাম চুড়ান্ত বিজয়ের ধারপ্রান্তে পৌঁছার মূল ভিত্তিপ্রস্তর। হুদায়বিয়া সন্ধির প্রেক্ষাপট ষষ্ঠ হিজরী মেতাবেক ৬২৮ খ্রিস্টাব্দ। রাসুল (সা:) মনস্থ করলেন উমরা পালন করবেন। এ লক্ষ্যে চৌদ্দশত সাহাবী সাথে নিয়ে রওয়ানা করলেন মক্কা অভিমুখে। মক্কার কাছাকাছি প্রায় ‘উসফান’ নামক স্থানে পৌঁছার পর রাসূল (সা:) অবগত হলেন, কুরাইশরা যুদ্ধ প্রস্তুতি গ্রহণ করেছে। এবং বীর যোদ্ধা খালিদ বিন ওয়ালিদ ও আবু জাহেল তনয় ইকরামা এর নেতৃত্বে দুইশত অশ্বারোহীর একটি দল প্রেরণ করেছে মুসলমানদের মক্কাগমন রোধ করতে। রাসুল (সা:) মহৎ উদ্দেশ্য বক্ষে ধারণ করেই মক্কা অভিমুখে রওয়ানা করেছেন। যুদ্ধে লিপ্ত হওয়া বা সংঘাতে যাওয়া সমিচিন মনে করেন নি।

তাই সংঘাত এড়াতে এবং উদ্দেশ্য সাধন করতে কৌশল মূলক সরল পথ চেড়ে দুর্গম গিরিপথ পাড়ি দিয়ে হুদায়বিয়া উপত্যকার দিকে এগুতে থাকেন। ‘সানিয়াতুল মুরার’ নামক স্থানে এলে উট কুদরতি নির্দেশে লুটে পড়ে। রাসুল (সা:) সেখানে যাত্রা বিরতির নির্দেশ দেন। কুরাইশদের নিকট উসমান (রা:) গ্রহণযোগ্য ও সত্যবাদী ব্যক্তিত্ব ছিলেন। তাই তাকে উদ্দেশ্যের কথা জানাতে কুরাইশদের নিকট পাঠালেন। কুরাইশরা নিশ্চিত হলো যুদ্ধ নয়, উমরা করতেই মুসলমানরা এসেছে।

 

কিন্তু নেহায়াৎ দাম্ভিকতার কারণে তারা সিদ্ধান্ত নিয়েছে কাবার যিয়ারত হতে মুসলমানদের বঞ্চিত করবে। এদিকে উসমান (রা:) আসতে বিলম্বিত হওয়ায় মুসলমানদের মাঝে উদ্বেগ-উৎকণ্ঠা বিরাজ করতে থাকে। পরক্ষণে জনরব ওঠে উসমানকে শহীদ করা হয়েছে। এ দুঃসংবাদে রাসূল (সা:) খুবই মর্মাহত হলেন। এবং উসমান হত্যার প্রতিশোধ গ্রহণের দৃঢ় সংকলপ করলেন। বাবলা বৃক্ষের নিচে সমাবেত সাহাবীরা নবীজীর হাতে প্রতিশোধের বাইআত গ্রহণ করলেন। সেটিই ঐতিহাসিক ‘বাইআতে রিদওয়ান’। সহায় সম্বলহীন, নিরস্ত্র সাহাবীরা স্রেফ খোদায়ী শক্তির ভরসা করে যুদ্ধের প্রস্তুতি নিতে থাকে।

 

এ সংবাদ মূহুর্তে পৌঁছে যায় কুরাইশদের কাছে। তারা খুবই ভীত সন্ত্রস্ত হয়ে পড়ে। তা ছাড়া তখন ছিলো যুদ্ধ-বিগ্রহ নিষিদ্ধ মাস। তাই যুদ্ধের অবতারণা হোক তারাও চায়না। তাই তারা উসমানকে ফেরত পাঠালো এবং ভাবলো মুহাম্মদকে কুপোকাৎ করার এটাই মহা সুজোগ। সে লক্ষ্যে সন্ধি প্রস্তাব দিয়ে পাঠালেন, সুহাইল ইবনে আমরকে। উভয় পক্ষের তর্ক-বিতর্কের পর অবশেষে সন্ধির উপর মতৈক্য প্রতিষ্ঠা হলো। সেখানেই লিপিবদ্ধ হয় একটি চুক্তিনামা। যা ইতিহাসে ‘হুদায়বিয়া সন্ধি’ নামে খ্যাত।

হুদায়বিয়া সন্ধির ধারা সমূহ

 

সুদীর্ঘ আলোচনান্তে মুসলমান ও মক্কার কুরাইশদের মাঝে সাক্ষরিত সন্ধির ধারা সমূহ-

 

১. এ বছর মুসলমানগণ উমরা না করেই মদিনায় ফিরে যাবেন।

২. পরবর্তি বছর তারা মাত্র তিন দিনের জন্য মক্কায় অবস্থান করে উমরা পালন করতে পারবেন।

৩. সে সময় আত্মরক্ষার জন্য কেবল একটি কোষাবদ্ধ তরবারী সাথে আনতে পারবেন।

৪. কোন মুসলমান সেচ্চায় মদীনা হতে মক্কায় চলে এলে মক্কাবাসী তাকে ফেরত দিতে বাধ্য থাকবে না বা মুসলমানদের পক্ষ থেকে বাধা দেয়া যাবে না।

৫. পক্ষান্তরে মক্কার কোন লোক মদীনায় আশ্রয় প্রার্থনা করলে মদীনার মুসলমানগণ তাকে আশ্রয় দিতে পারবে না। তাকে ফিরিয়ে দিতে বাধ্য থাকবে।

৬. আরবের অন্য গোত্রগুলো সুবিধা মত যেকোন পক্ষের সাথে সন্ধি চুক্তিতে পারবে।#

সংবাদ প্রেরক বিটিসি নিউজ এর ব্রাহ্মণবাড়িয়া প্রতিনিধি মো: লোকমান হোসেন পলা ।

Comments are closed, but trackbacks and pingbacks are open.