স্ত্রীর বিনা অনুমতিতে দ্বিতীয় বিয়ে, প্রতিবাদ করায় হত্যার চেষ্টা

লালমনিরহাট প্রতিনিধি: লালমনিরহাটের হাতীবান্ধা উপজেলার ২ লক্ষ টাকা বর্ধিত যৌতক না পেয়ে প্রথম স্ত্রীর বিনা অনুমতিতে দ্বিতীয় বিয়ে করে ছামিদুল ইসলাম (২৫) নামে এক যুবক।
প্রতিবাদ করলে প্রথম স্ত্রীকে বেধড়ক মারধর, গুরুতর জখম ও হত্যার চেষ্টার অভিযোগ উঠেছে ছামিদুলসহ তার পরিবারের বিরুদ্ধে। এছাড়াও ছামিদুল ইসলাম প্রথম গবিয়ের পর একাধিক মেয়ের সাথে অবৈধ সম্পর্কে লিপ্ত ছিলেন বলে স্থানীয়রা জানান।
গতকাল বুধবার (০৭ এপ্রিল) দুপুরে সময় উপজেলার দক্ষিণ সিন্দুর্না এলাকায় এ ঘটনা ঘটে। আহত প্রথম স্ত্রী জাফরিন সুলতানা (২৩) উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি হয়ে চিকিৎসাধীন আছে।
এ ঘটনায় জাফরিন সুলতানা বাদী হয়ে ছামিদুল ইসলাম ও তার নতুন স্ত্রী জান্নাতুল ফেরদৌসীসহ ৭ জনের নামে হাতীবান্ধা থানায় একটি লিখিত অভিযোগ দিয়েছে।
আহত জাফরিন সুলতানা উপজেলার দক্ষিণ সিন্দুর্না এলাকার আহাম্মদ আলীর মেয়ে। আহাম্মদ আলী বুড়িমারীতে পাথর ভাঙ্গা শ্রমিকের কাজ করে সংসার চালায়। ছামিদুল ইসলাম একই এলাকার নুরুজ্জামান (জামাল) এর ছেলে।
থানায় করা অভিযোগ ও এলাকাবাসীর সাথে কথা বলে জানা যায়, গত ছয় বছর পুর্বে প্রেমের সম্পর্কে জড়িয়ে ধরা পড়ে প্রতিবেশী জাফরিন সুলতানাকে বিয়ে করে ছামিদুল ইসলাম। বিয়ের সময় যৌতুক বাবদ ছামিদুল ইসলামকে নগদ এক লক্ষ ২০ হাজার টাকা পরিশোধ ও তার লেখাপড়ার সব খরচের দায়িত্ব নেয় জাফরিন সুলতানার পরিবার। বিয়ের পর থেকে তারা স্বামী স্ত্রী ঘর সংসার করে আসছিলো।
এদিকে বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হবার পর থেকে ছামিদুল ইসলাম একাধিক মেয়ের সাথে অবৈধভাবে প্রেমের সম্পর্কে জড়িয়ে পড়ে। ফলে ২০১৭ সালে রংপুরে পায়রা চত্বর এলাকা থেকে তানজিনা আক্তার নামে একটি মেয়ে বিয়ের দাবিতে ছামিদুলের বাড়িতে উঠে।
সে সময় স্থানীয় সিন্দুর্না ইউপি চেয়ারম্যান পরিষদে বসে বিষয়টি ফয়সালা করে মেয়েটি তার বাবা মায়ের কাছে পাঠায়। এরপর শুরু হয় জাফরিন সুলতানার উপর কথায় কথায় যৌতুকের জন্য নির্মম নির্যাতন।
বিসিএস এর কোচিং এ ভর্তি হবার জন্য জাফরিন সুলতানাকে তার বাবার বাড়ি থেকে দুই লক্ষ টাকা বর্ধিত যৌতুক আনতে চাপ দিতে থাকে ছামিদুল। গরীব ও অসহায় বাবা মায়ের কাছ থেকে সে টাকা আনতে পারবেনা বললে জাফরিনের উপর শুরু হয় মারধর ও নির্মম নির্যাতন।
এতে জাফরিন সুলতানা গুরুতর আহত হলে ছামিদুল রংপুরে পালিয়ে যায়। জাফরিনের বাবা মা তাকে গুরতর আহত অবস্থায় উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি করে স্থানীয় সিন্দুর্না ইউনিয়ন পরিষদে লিখিত বিচার দেয়। ইউপি চেয়ারম্যান নুরুল আমিন বিষয়টি বসে আপোষ মিমাংসা করে দেয়ার জন্য কয়েকবার ছামিদুল ইসলাম ও তার পরিবারকে ডাকলেও কেউ চেয়ারম্যানকে পাত্তা দেয়নি। ফলে পরবর্তীতে জাফরিন সুলতানা বাদী হয়ে ছামিদুল ইসলাম ও তার পরিবাররের সদস্যদের নামে ২০২০ সালে নারী ও শিশু নির্যাতন আইনে মামলা করে। সে মামলায় ছামিদুলসহ তার পরিবারে ৫ সদস্য ১৪-১৫ দিন হাজত খেটে জামিনে বের হয়ে আসে। যা এখনো আদালতে বিচারাধীন রয়েছে।
এতে আরও বেশি ক্ষিপ্ত হয়ে প্রথম স্ত্রী জাফরিন সুলতানার বিনা অনুমতিতে চলতি মাসের ৪ তারিখে পার্শ্ববর্তী নিলফামারীর জলঢাকা উপজেলার কাঠালী ইউনিয়নের উত্তর দেশীবাই গ্রামের আব্দুল জলিলের মেয়ে ও সহকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষিকা জান্নাতুল ফেরদৌসী (২৪) কে বিয়ে করে নিয়ে আসে ছামিদুল ইসলাম। এ ঘটনায় গতকাল বুধবার সকাল ৯ টার সময় জাফরিন সুলতানা তার স্বামী ছামিদুল ইসলামের বাড়িতে গিয়ে তার বিনা অনুমতিতে বিয়ে করার কারণ জানতে চায়।
এতে ছামিদুল ও তার নতুন স্ত্রী জান্নাতুল ফেরদৌসীসহ পরিবারের অন্যান্য সদস্যরা উত্তেজিত হয়ে জাফরিন সুলতানাকে বেধড়ক মারধর করে তাকে হত্যার চেষ্টা করে। এরপর গুরুতর জখম অবস্থায় জাফরিনের হাত-প বেঁধে বাঁশের খুটির সাথে বেধে রাখে পুর্বের মামলা তুলে নেবার জন্য হুমকি দিতে থাকে। এসময় জাফরিন সুলতানার আত্মঃ চিৎকারে স্থানীয়রা ছুটে এসে তাকে উদ্ধার করে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি করে দেয়। জাফরিন সুলতানা বর্তমানে সেখানে চিকিৎসাধীন অবস্থায় আছে। এ ঘটনা রাতে জাফরিন সুলতানা বাদী হয়ে তার স্বামী ছামিদুল ইসলাম ও তার নতুন স্ত্রী জান্নাতুল ফেরদৌসীসহ ৭ জনের নামে থানায় লিখিত অভিযোগ দিয়েছে।
জাফরিন সুলতানা কান্না জড়িত কন্ঠে বিটিসি নিউজ এর প্রতিবেদককে বলেন, আমার সুখের জন্য বিয়ের পর থেকে বাবা মা অনেক কষ্ট করে ছামিদুল ইসলামের (স্বামী) লেখাপড়ার সব খরচ দিয়ে এসেছে। বুড়িমারীতে আমার বাবা কষ্ট করে পাথর ভেঙ্গে হলেও তাকে প্রতিমাসে ৬ হাজার করে টাকা দিয়ে এসেছে আর সে রংপুরে থেকে একের পর একেকটিকে মেয়ের সাথে অবৈধ সম্পর্ক করে গেছে। এতকিছু নিরবে সহ্য করার পর আমি স্বামীর মন পেলাম না।
যৌতুকের জন্য প্রতিনিয়ত আমাকে মারধর করলেও আমি তাকে ছেড়ে কোথায় যাইনি। অথচ সে আমাকে না জানিয়ে কোথাকার একটা মেয়েকে বিয়ে করে এনে আমার কপাল পুড়লো। এর প্রতিবাদ করায় আজ তারা সবাই মিলে নির্মম নির্যাতনটাই না করলো। ধারালো অস্ত্র দিয়ে আমাকে হত্যা করতে চেয়েছিল। তাদের অস্ত্রের চোটে আমার দু’হাত কেটে গুরুতর জখম হয়। আমি এর বিচার চাই বলে জাফরিন সুলতানা অঝোরে কাদতে থাকে।
এ বিষয়ে কথা বলার জন্য ছামিদুল ইসলামের বাড়িতে গিয়েও তার দেখা পাওয়া যায়নি। পরিবারের কাছে পাওয়া যায়নি ছামিদুলের ফোন নাম্বার।
বিয়ের পরও একাধিক মেয়ের সাথে ছামিদুলের অবৈধ সম্পর্কে বিষয়ে জানতে চাইলে সিন্দুর্না ইউপি চেয়ারম্যান নুরুল আমিন ঘটনার সত্যতা বিটিসি নিউজ এর প্রতিবেদককে নিশ্চিত করে বলেন, রংপুরের ঐ মেয়েটি ইউনিয়ন পরিষদে ডেকে এনে অনেক বুঝিয়ে নিজ খরচে মাইক্রো যোগে তার বাবা মায়ের কাছে পাঠাই। এরপরও ছেলেটি ভালো হলো না। ছামিদুলের চারিত্রিক বিষয়ে এলাকাবাসী নানা অভিযোগ করলে সে কাউকেই তোয়াক্কা করে বলে জানান  ইউপি চেয়ারম্যান নুরুল আমিন।
হাতীবান্ধা থানার অফিসার্স ইনচার্জ (ওসি) এরশাদুল আলম বিটিসি নিউজ এর প্রতিবেদককে বলেন, এ বিষয়ে একটা অভিযোগ পেয়েছি। ঘটনার বিষয়ে তদন্ত করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।
সংবাদ প্রেরক বিটিসি নিউজ এর লালমনিরহাট প্রতিনিধি হাসানুজ্জামান হাসান। #

Comments are closed, but trackbacks and pingbacks are open.