সৈয়দপুরের সাগর ফার্মেসী নেশার ট্যাবলেট বিক্রির হোল সেল পয়েন্ট

নীলফামারী প্রতিনিধি: নীলফামারীর সৈয়দপুর উপজেলার উত্তরা আবাসন উপশহরের সাগর ফার্মেসী মাদক বিক্রির আখড়ায় পরিণত হয়েছে। দিন রাত দেদারছে বিক্রি হচ্ছে নেশা জাতীয় ট্যাবলেটসহ বিভিন্ন ধরণের সিরাপ।

বিশেষ করে বর্তমান সময়ের সবচেয়ে প্রচলিত মাদকদ্রব্য ফেন্সিডিল ও ইয়াবার বিকল্প হিসেবে ব্যবহৃত পেন্টাডল ও টাপেন্টা নামক ব্যথানাশক ও ঘুমের ট্যাবলেট বিক্রির হিড়িক পড়েছে।

এ সুযোগে এই ট্যাবলেট দুটির হোল সেল এজেন্ট হিসেবে পরিচিত হয়ে উঠেছে সাগর ফার্মেসী। মাত্র ১২ টাকা (৫০ মি.গ্রাম) ও ২২ টাকা (১০০ মি.গ্রাম) মূল্যের ট্যাবলেট বিক্রি করা হচ্ছে ১শ’ টাকা থেকে ১শ’ ৫০ টাকা দামে।

অনেক সময় চাহিদা বেশি হলে ২শ’ টাকাও বিক্রি হয় এ ট্যাবলেট। প্রতিদিন প্রায় ২শ’ পাতা (প্রতি পাতায় ১০টি করে) টাপেন্টা ও শতাধিক পাতা পেন্টাডল বিক্রি হয় এই ওষুধের দোকান থেকে। পাইকারীসহ খুচরা বিক্রিও চলে এখানে। যে কারণে সবসময়ই মাদকাসক্তদের ভীড় লেগে থাকে ফার্মেসীটিতে।

সৈয়দপুর শহরের ওষুধের দোকানগুলোতে প্রশাসনিক নজরদারী থাকায় দূর-দূরান্ত থেকেও মাদক বিক্রেতা ও গ্রহনকারীরা এখানে আসে। শহরের বাহিরে ও পল্লীগ্রামের মধ্যস্থলে হওয়ায় এখানে জমজমাট কারবার চলছে। প্রকাশ্যেই এই নেশা জাতীয় ট্যাবলেট বিক্রি করা হয়। যা প্রশাসনসহ মাদকসেবী ও সাধারণ মানুষও জানে।

কিন্তু তারপরও কেউ এর প্রতিবাদ করেনা বা মাদক বিক্রিতে বাধা দেয়না। কারণ এই দোকানটির মালিক মোঃ আলফাতোজ্জামান শাহ (সাগর) স্থানীয় পোড়ারহাট এলাকার প্রভাবশালী শাহ পরিবারের সন্তান। তাছাড়া একজন অবসরপ্রাপ্ত বিডিআর সদস্য ও একজন সাবেক চেয়ারম্যান সাগরের আত্মীয় হওয়ায় বাধাহীনভাবে চলছে তার মাদকের কারবার।

এলাকাবাসী অনেকেই নাম প্রকাশ না করার শর্তে বিটিসি নিউজ এর প্রতিবেদককে জানান, সাগর ফার্মেসীতে অসুখের ওষুধ বিক্রি হয়না বললেই চলে। দিন রাত বিক্রি হয় ওই নেশার ট্যাবলেট। যা বিক্রি করে মাত্র ৬ মাসেই আঙ্গুল ফুলে কলাগাছে পরিণত হয়েছে সাগর। এতে তার প্রভাব যেন আরও বেড়েছে।

প্রশাসনসহ স্থানীয় জন প্রতিনিধি, সংবাদকর্মী, আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী, ওষুধ প্রশাসন, মাদক নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরের লোকজন আর্থিক সুবিধা নেয়। যে কারণে তাদের সাথে সাগরের সখ্যতাও দেখার মত। কেউ নেই সাগরের বিরুদ্ধে অবস্থান নেয় বা মাদক বিক্রি বন্ধে সচেষ্ট হয়। অথচ সাগরের ক্যামিস্ট সার্টিফিকেট নেই। রঘুনাথ রায় নামে নীলফামারীর একজন ক্যামিস্ট’র সার্টিফিকেট দিয়ে নিজের নামে ড্রাগ লাইসেন্স করেছে। রঘুনাথ কোনদিনই এই ফার্মেসীতে বসে না বা তার কোন সম্পৃক্ততাই নেই এখানে।

তারা বিটিসি নিউজ এর প্রতিবেদককে জানান, মাত্র কয়েকদিন আগে রমজান মাসেই এলাকার সচেতন কয়েকজন যুবক টাপেন্টা ট্যাবলেট বিক্রিকালে শহরের ইসলামবাগ এলাকার এক মাদকসেবী যুবককেসহ সাগরকে হাতে নাতে আটক করে। পরে সাগরের আত্মীয় প্রাক্তন বিডিআর সদস্যের হস্তক্ষেপে তা ওই পর্যন্তই থেমে যায়। প্রশাসন বা মিডিয়াকেও জানানো হয়না।

বরং আটক মাদকাসক্ত যুবকসহ আটকারীদের উল্টো ধমক দিয়ে তাড়িয়ে দেয়া হয়। এ ঘটনা যেন কোনভাবেই সংবাদকর্মীরা জানতে না পারে সেজন্যও তাদেরকে হুশিয়ার করা হয়। নয়তো এলাকায় থাকা দূরহ হয়ে পড়বে বলেও হুমকি প্রদর্শন করে সাগর ও তার লোকজন।

এ ব্যাপারে সাগরের সাথে মুঠোফোনে যোগাযোগ করা হলে তিনি অকপটে টাপেন্টা ও পেন্টাডল বিক্রির কথা স্বীকার করে বিটিসি নিউজ এর প্রতিবেদককে বলেন, সবাই তো করছে। সবাইকে ম্যানেজ করেই ব্যবসা করি। তাই কেউ কখনো ডিস্টার্ব করেনা। আর কেউ আসলেও এখানে আমাদের উপরে কথা বলার কেউ নেই।

আপনারাও নিউজ করা ছাড়া কিছুই করতে পারবেন না। নিউজ করলেও কিছু হবেনা। প্রশাসনকে জানালেও আই ওয়াস অভিযান চালানো হবে। কিন্তু তারা এসে কিছুই পাবেনা। কারণ আগেই আমরা খবর পাবো এবং সতর্ক হয়ে যাবো।

আকস্মিকভাবে কেউ অভিযান চালালেও মাত্র ১০ হাজার টাকা জরিমানা হবে। তাতে আমাদের কোন সমস্যা নেই। তাই দেখা করেন ব্যবস্থা করে দেবো।

সংবাদ প্রেরক বিটিসি নিউজ এর নীলফামারী প্রতিনিধি এম কে আনোয়ার। #

Comments are closed, but trackbacks and pingbacks are open.