সাহ্‌রি ও ইফতারের জন্য কোন খাবারটা খাবেন?

 

বিটিসি নিউজ ডেস্ক: সাহ্‌রি ও ইফতারের জন্য কোন খাবারটা খেতে হবে, এটা নিয়ে অনেকে  ভাবেন। অনেকে আবার ইফতারে বেশি ভাজাপোড়া খান আর সাহ্‌রিতে ভারী খাবার খেয়ে ফেলেন।

রমজান মাসে সাহ্‌রি ও ইফতারে সহজপাচ্য খাবার খাওয়া ভালো। আর সাথে পান করতে হবে প্রচুর পানি।

বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের মেডিসিন বিশেষজ্ঞ কামরুল হাসান বলেন, সাহ্‌রিতে বেশি চর্বি ও মসলাযুক্ত খাবার না খাওয়াই ভালো। গরু, খাসির মাংস, পরোটা, নানারকম ভাজি এড়িয়ে চলতে হবে। চামড়া ছাড়া মুরগির মাংস, বড় বা ছোট মাছ, সালাদ ও সবজি খাওয়াই ভালো। লবণ একটু কম খেতে হবে; বিশেষ করে ভাতের সঙ্গে একেবারেই লবণ খাওয়া যাবে না।

বেশি আঁশযুক্ত খাবার খেতে হবে। তাহলে কোষ্ঠকাঠিন্যের সমস্যা হবে না। সাহ্‌রিতে বাঁধাকপি, ফুলকপি, চালকুমড়া, বেগুন, করলা, লাউ, পটোল, ঝিঙে, চিচিঙ্গা, ধুন্দল, কাঁচা পেঁপে, ওল, টমেটো, শজনে ডাটা, উচ্ছে, শসা, মুলা, কাঁচকলা, ব্রকলি, কাঁকরোল ইত্যাদি সবজি খাওয়া যেতে পারে। কারণ, এগুলো পাকস্থলীতে দীর্ঘ সময় থাকে। ধীরে ধীরে হজম হয়।

সাহ্‌রিতে এক গ্লাস দুধ বা টকদই খাওয়া ভালো। বেশি মিষ্টি বা মিষ্টিজাতীয় জিনিস খাওয়া উচিত নয়।

পুষ্টিবিদ সৈয়দা শারমিন আক্তার বলেন, সাহ্‌রিতে ভাতের পরিমাণ হবে তরকারির অর্ধেক। এ সময় মাছ খেলে ভালো। খাওয়ার পরে দুধ আধা কাপ বা দুধের তৈরি কোনো খাবার অল্প করে খাওয়া যায়। খাওয়ার পরে কিছুক্ষণ হেঁটে দুই গ্লাস পানি পান করা উচিত। সাহ্‌রিতে খাবার শেষে একটি ফল ও এক কাপ দুধ পান করা যেতে পারে।

এবার আসা যাক ইফতারের খাবার প্রসঙ্গে। ইফতারি হওয়া উচিত সুষম, হালকা ও পুষ্টিকর। শুরুটা হতে পারে খেজুর, এক গ্লাস ফলের রস বা এক গ্লাস দুধ দিয়ে। এতে ক্লান্তি কমে। ইফতারিতে পর্যাপ্ত পানি পান করুন। চিকিৎসক কামরুল হাসান বলেন, পারলে সাড়ে ৩ লিটার পানি পান করুন।

ইফতারে ডাবের পানি খুব ভালো। খেতে পারেন বেশি করে রসাল ফল। যেমন—তরমুজ, বাঙ্গি, আম, লিচু, জাম্বুরা, ডালিম, জাম, কামরাঙা, কমলালেবু, আঙুর। এগুলো শরীরের পানির ঘাটতি দূর করতে সাহায্য করে। প্রয়োজনীয় ভিটামিন ও মিনারেল পাওয়া যায়। ইফতারিতে রঙিন ফল, সবজির সালাদ খাওয়া ভালো। টকদই, কলা ও চিড়াও উপকারী।

অনেকে ইফতারে ভাজাপোড়া খেতে ভালোবাসেন। ভাজাপোড়া বেশি খেলে হজমে সমস্যা হতে পারে। অম্বলও হতে পারে। তাই ভাজাপোড়া একটু বুঝেশুনে খাওয়া উচিত।

রাস্তার ধারের ভাজাপোড়া এড়িয়ে চলুন। দোকানে অস্বাস্থ্যকর তেল ব্যবহার করা হয়। একই তেলে বারবার ভাজা হয়। এ ধরনের খাবার খেলে অসুস্থ হওয়ার আশঙ্কা থাকে।

এ ছাড়া রাস্তার দোকানগুলোতে ইফতারির খাবারে ক্ষতিকর রং ব্যবহার করা হয়। এটি কিডনি ও লিভারের জন্য মারাত্মক ক্ষতিকর।

পুষ্টিবিদ সৈয়দা শারমিন আক্তার বলেন, ইফতারে দুটি খেজুর বা কিছু কাঁচা ছোলা, আদা কুচি, লেবুর খোসাসহ একসঙ্গে মিশিয়ে খাওয়া ভালো। দুই গ্লাস পানি পান করবেন। পাশাপাশি কম চিনিযুক্ত শরবত খাবেন। চাল, ডাল ও মৌসুমি সবজি মিশিয়ে একটি খাবার তৈরি করুন। সেটি পাতলা খিচুড়িজাতীয় হতে পারে। ইফতারির পর গরম-গরম সেগুলো খেয়ে নিন। এ থেকে প্রোটিন, শর্করা, সামান্য চর্বি, খনিজ লবণ, ভিটামিন ও খাদ্য আঁশ পাওয়া সম্ভব হবে।

ইফতারির পর কিছু বিরতি দিয়ে আবার পানি পান করবেন। এরপর এক কাপ গ্রিন টি অথবা লিকার চা (দুধ, চিনি ছাড়া) পান করতে পারেন।
রাতের খাবারে ভাতের সঙ্গে মাছ অথবা মুরগির কম ঝাল দেওয়া তরকারি, ডাল অথবা ডালজাতীয় খাবার এবং মৌসুমি সবজি দিয়ে নিরামিষ অথবা ভাজি খেয়ে নিন। দই অথবা দুধ খেতে পারেন খাওয়ার পরে বা ঘুমানোর আগে। #

Comments are closed, but trackbacks and pingbacks are open.