সাহাবি আবু ওয়াক্কাস গড়েছিলেন লালমনিরহাটের ‘হারানো মসজিদ’

 

লালমনিরহাট প্রতিনিধি: বাংলাদেশে ইসলাম প্রচারের প্রাচীনতম নিদর্শণ ৬৯ হিজরীতে সাহাবা আমলে তৈরি হারানো মসজিদ। রংপুর-কুড়িগ্রাম জাতীয় মহাসড়কের প্রায় ১ কিলোমিটার দক্ষিণ পার্শ্বে লালমনিরহাট জেলার লালমনিরহাট সদর উপজেলার পঞ্চগ্রাম ইউনিয়নের রামদাস মৌজায় ওই মসজিদটি অবস্থিত।
জানা গেছে, লালমনিরহাট জেলার সদর উপজেলার পঞ্চগ্রাম ইউনয়নের ওই রামদাস মৌজায় ওই স্থানটি বহুদিন ধরে ছিল পতিত জঙ্গল। হিংস্র জীব-জন্তু, সাপ-বিচ্ছুর ভয়ে কেউ ওই স্থানে যেতে সাহস পেতো না। পরবর্তী সময়ে জঙ্গল পরিস্কার করতে যেয়ে বেরিয়ে আসে প্রাচীন কালের তৈরি ইট, যার মধ্যে ফুল অংকিত ছিল। এমনিভাবে মাটি ও ইট সরাতে গিয়ে একটি পূর্ণ মসজিদের ভিত বেরিয়ে আসে। এসময় একটি শিলালিপি পাওয়া যায়, যার মধ্যে স্পষ্ট অক্ষারে আরবিতে লেখা ছিল ‘লা-ইলাহা-ইল্লাল্লাহু মুহাম্মদুর রাসুলুল্লাহ’ হিজরি সন ৬৯। তখনই স্থানীয় লোকজন বুঝতে পারেন যে, এটি-একটি প্রচীন মসজিদের ধ্বংসাবশেষ। পরে সেখানে একটি মসজিদ নির্মাণ করা হয়। যা বর্তমানে ‘সাহাবায়ে কেরাম মসজিদ’ নামে নামকরণ করা হয়।
পাকা রাস্তা হয়ে মাইক্রোবাস, বাস কিংবা রিক্সা নিয়ে হারানো মসজিদে যাতায়াত করা যায়। বর্তমানে ঐতিহাসিক এই মসজিদটি পুনরায় সংস্কার করা হয়েছে। করা হয়েছে সৌন্দর্য্যবর্ধন।
প্রাচীন এই মসজিদটি দেখার জন্য প্রতিদিন দূরদুরান্ত থেকে ছুটে আসেন দর্শনার্থীরা। তারা মসজিদে এসে নামাজ পড়েন, দোয়া খায়ের করেন ও মানত করেন। মসজিদকে ঘিরে তৈরি হয়েছে হাফেজিয়া মাদ্রাসা। তৈরি হয়েছে দোকানপাট।
হারানো মসজিদের ইমাম-হাফেজ মাওলানা মোঃ জাকারিয়া বলেন, প্রাচীন এই মসজিদের নিদর্শন হিসেবে এখনো বেশ কিছু ইট রয়েছে। যা দর্শনার্থীদের জন্য বর্তমান মসজিদ ঘরে সাজিয়ে রাখা হয়েছে। রয়েছে প্রাচীন কারুকাজে তৈরি ইমাম সাহেবের মেহরাব। মসজিদের ভেতরে এখনো রয়েছে প্রাচীনকালে এই মসজিদে প্রবেশের গলি। যা কাচ দিয়ে ঢেকে সংরক্ষণ করে রাখা হয়েছে।
প্রত্নতাত্ত্বিকদের দাবি, প্রাচীন মেসোপটেমীয় সভ্যতার দজলা ও ফোরাতের মতো ব্রহ্মপুত্র-তিস্তা অববাহিকাকে পৃথিবীর প্রাচীনতম অববাহিকাগুলোর একটি গণ্য করা হয়। রোমান ও জার্মান ইতিহাসবিদদের লেখায় আরব ও রোমান বণিকদের ব্রহ্মপুত্র অববাহিকাকে বাণিজ্যিক পথ হিসেবে ব্যবহারের কথা লিপিবদ্ধ আছে। ব্রহ্মপুত্র-তিস্তা অববাহিকাকে পৃথিবীর সবচেয়ে পুরনো আন্তর্জাতিক বাণিজ্যের নৌপথ হিসেবে ব্যবহৃত হতো।
ধারণা করা হয়, খ্রিস্টপূর্ব সময় থেকে ব্রহ্মপুত্র ও তিস্তার পার ধরে সিকিম হয়ে চীনের মধ্য দিয়ে আরব ও রোমান বণিকদের যাতায়াত ছিলো। এই হারানো মসজিদ হতে পারে সাহাবি আবু ওয়াক্কাস (রা.) নির্মাণ করেছেন।বর্তমানে একটি কমপ্লেক্সসহ ঐতিহাসিক প্রচীন এই মসজিদটি আরো সুন্দর করে তৈরির পরিকল্পনা করছে একটি দাতা সংস্থা। এটি হলে প্রাচীন হারানো মসজিদ হবে মুসলমানদের জন্য একটি দর্শনীয় স্থান।
সংবাদ প্রেরক বিটিসি নিউজ এর লালমনিরহাট প্রতিনিধি হাসানুজ্জামান হাসান। #

Comments are closed, but trackbacks and pingbacks are open.