সরকার খালেদা জিয়াকে বন্দি রেখে মৃত্যুর দিকে ঠেলে দিচ্ছে : মির্জা ফখরুল

ঢাকা প্রতিনিধি: বসুন্ধরায় এভারকেয়ার হাসপাতালে চিকিৎসাধীন খালেদা জিয়ার অবস্থা ‘সংকটজনক’ জানিয়ে দ্রুত তাকে বিদেশে পাঠানোর আবারো জোর দাবি জানিয়েছেন বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর।
আজ শুক্রবার (২২ সেপ্টেম্বর) বিকালে রাজধানীর উত্তরায় ঢাকা মহানগর উত্তর বিএনপির সমাবেশে বিএনপির মহাসচিব প্রধান অতিথির বক্তব্যে এই দাবি জানান।
বিকাল ৩টার পর পবিত্র কোরআন তেলাওয়াতের মধ্যে দিয়ে এ সমাবেশ শুরু হয়। সমাবেশের জন্য ট্রাকের ওপর অস্থায়ী মঞ্চ তৈরি করা হয়। অবৈধ সরকারের পদত্যাগ, সংসদ বিলুপ্ত, নির্দলীয় নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে নির্বাচন, বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়ার মুক্তি এবং যুগপৎ ধারায় একদফা দাবিতে এ সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়।নেতা-কর্মীরা খালেদা জিয়ার মুক্তির দাবিতে মুহুর্র মুহুর্র শ্লোগান দেয়।
তিনি বলেন, ‘‘আজকে যখন তার (খালেদা জিয়া) জীবন-মরণ সমস্যা… তখন তাকে আটকিয়ে রাখা হয়েছে। বেগম খালেদা জিয়া শুধু একজন বন্দি নন, এদেশের গণতান্ত্রিক আন্দোলনের এক নম্বর নেত্রী…..। একবার নয় তিন বার প্রধান মন্ত্রী হয়েছেন, দুইবার বিরোধী দলীয় নেত্রী। এখনো কারাগারে থেকেও এই অসুস্থবস্থায় এই ফ্যাসিস্ট সরকারের বিরুদ্ধে লড়াই করে যাচ্ছেন। এই নেত্রী আজ তারা বন্দি রেখে মৃত্যুর দিকে ঠেলে দিচ্ছে।
আমরা খুব পরিস্কার করে বলতে চাই, দেশনেত্রীর যদি সুচিকিৎসা না হয়, তাকে যদি বিদেশে পাঠানো না হয় চিকিতসার জন্য আরো অবনতির দিকে যেতে পারে।
কারাবন্দিদের চিকিৎসার জন্য বিদেশে পাঠানোর নজির আছে উল্লেখ করে মির্জা ফখরুল বলেন, ‘‘ সব বন্দিকে চিকিৎসা দিতে হবে এবং চিকিৎসার জন্য যদি প্রয়োজন হয় তাকে বিদেশেও পাঠাতে হবে।বার বার তার (খালেদা জিয়া) পরিবার থেকে, তার ডাক্তাররা এবং আমাদের দলের পক্ষ থেকে বলেছি যে, মানবিক কারণে তাকে চিকিৎসার স্বার্থে বিদেশে উন্নত চিকিতসা কেন্দ্রে পাঠানো হোক।”
এরকম অনেক নজির আছে। আসম আবদুর রব সাহেবকে পাঠানো হয়েছিলো… জিয়াউর রহমান তাকে জার্মানি পাঠিয়েছিলেন কারাগার থেকে। আজকে যিনি জোর করে ক্ষমতা দখল করে আছেন শেখ হাসিনাকে তাকেও কেয়ারটেকার সরকারের সময়ে চিকিৎসার জন্য আমেরিকায় পাঠানো হয়েছিলো। আমরা সেই কথা ভুলে যাইনি।”এভারকেয়ার হাসপাতালে চিকিৎসাধীন খালেদা জিয়ার অবস্থা খারাপ হলে শুক্রবার সকালে তাকে ক্রিটিক্যাল কেয়ার ইউনিটে স্থানান্তর করা হয়।
৭৮ বছর বয়েসী খালেদা জিয়া কিডনি, ফুসফুস, হৃদরোগ, লিভার জটিলতায় ভোগছে। এভারকেয়ার হাসপাতালের বিশেষজ্ঞ চিকি]সক অধ্যাপক শাহাবুদ্দিন তালুকদারের নেতৃত্বে ১৯ সদস্যের একটি মেডিকেল বোর্ড তাকে নিবিড় পর্যবেক্ষনে রেখে চিকিতসা দিচ্ছেন।
প্রধানমন্ত্রীর উদ্দেশে বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেছেন, এখনো সময় আছে, আপনি (প্রধানমন্ত্রী) দয়া করে পদত্যাগ করেন। দেশের মানুষকে রেহাই দিন। অনেক নির্যাতন, নিপীড়ন, হত্যা, খুন ও গুম হয়েছে। এটা আর আমরা দেখতে চাই না। মানুষের মুক্তির জন্য, ভোটের অধিকার ফিরিয়ে দেয়ার জন্য আপনি দয়া করে পদত্যাগ করেন, সংসদ বিলুপ্ত করেন এবং একটি নির্দলীয় নিরপেক্ষ সরকারের হাতে ক্ষমতায় হস্তান্তর করেন। নতুন নিরপেক্ষ নির্বাচন কমিশন গঠন করেন। তারা নির্বাচন করবেন।
নেতাকর্মীদের উদ্দেশে মির্জা ফখরুল বলেন, আমাদের হারানোর কিছু নাই। আমরা পথে নেমেছি। এই আন্দোলনকে আরো তীব্র করতে হবে। আর এদেশে অবশ্যই শেখ হাসিনাকে পদত্যাগ করতে হবে। নিরপেক্ষ সরকারের হাতে ক্ষমতা হস্তান্তর করতে হবে, নিরপেক্ষ ইসি গঠন করতে হবে এবং মানুষকে তার ভোটের অধিকার ফিরিয়ে দিতে হবে।
তিনি আরো বলেন, এখানে সব তরুণ আর যুবকদের মুখ। আমি অত্যন্ত আশাবাদী হচ্ছি। আমরা এই সরকারকে আর দেখতে চাই না। এটা সরকার বলে না। এটা জবরদখলকারী শাসকগোষ্ঠী। তারা জনবিচ্ছিন্ন। তাদের সঙ্গে কোন মানুষ নেই। সেকারণে তারা বেপরোয়া হয়ে উঠেছে। আন্দোলন, আন্দোলন, আন্দোলনের মধ্যে দিয়েই এদেরকে পরাজিত করতে হবে। আর একটি নিরপেক্ষ সরকার ও ইসির মধ্যে দিয়ে নির্বাচনের মাধ্যমে নতুন সরকার গঠন করতে হবে।
বাংলাদেশে ইউরোপীয় ইউনিয়ন একটি টিম পাঠিয়েছিলো উল্লেখ করে বিএনপি মহাসচিব বলেন, এই টিমের সদস্যরা তাদের দেশে গিয়ে তারা বলেছেন- বাংলাদেশে নির্বাচনের কোন পরিবেশ নাই। অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচন হতে পারে না। এই কথাগুলো বিশ্বের সবাই বিশ্বাস করেন এবং তারা সবাই বলেছেন। এমনকি জাতীয় পার্টিও (এরশাদ) বলেছে, এখানে সুষ্ঠু নির্বাচন হবে না।
ঢাকা উত্তর বিএনপির ভারপ্রাপ্ত আহ্বায়ক অধ্যাপক ফরহাদ হালিম ডোনারের সভাপতিত্বে ও সদস্য সচিব আমিনুল হকের সঞ্চালনায় সমাবেশে বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান আবদুল আউয়াল মিন্টু, চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা আতাউর রহমান ঢালী, চেয়ারপারসনের বিশেষ সহকারী শামসুর রহমান শিমুল বিশ্বাস, গাজীপুর জেলা বিএনপির সভাপতি ফজলুল হক মিলন, ছাত্রবিষয়ক সম্পাদক রকিবুল ইসলাম বকুল, বিএনপি নেতা তাবিথ আউয়াল, কৃষকদলের সভাপতি হাসান জাফির তুহিন , যুব দলের মামুন হাসান, তাঁতী দলের আবুল কালাম আজাদ প্রমূখ বক্তব্য রাখেন বক্তব্য রাখেন। সমাবেশকে ঘিরে এই সময় বিভিন্ন সড়কে ব্যাপক আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর উপস্থিতি লক্ষ্য করা যায়।
সংবাদ প্রেরক বিটিসি নিউজ এর ঢাকা প্রতিনিধি মো: মাসুদ রানা খন্দকার। #

Comments are closed, but trackbacks and pingbacks are open.