সংবাদ সম্মেলনে অভিযোগ : খুলনা জেলার ২১১ জন আউটসোর্সিং কর্মচারীকে চাকরীহারা করার ষড়যন্ত্র

খুলনা ব্যুরো: বিগত দেড় বছর আউটসোর্সিংয়ের চাকরী করে আজ চাকরীহারা হচ্ছেন খুলনার ২১১জন আউটসোর্সিং কর্মচারী। নতুন ঠিকাদারের আওতায় চাকরী করতে গেলে তাদেরকে গুনতে হবে মোটা অংকের অর্থ।
এমনিতেই বিগত ছয়মাস ধরে বেতন না পেয়ে তাদেরকে ধার দেনা করে চলতে হচ্ছে। এর মধ্যে আবার নতুন ঠিকাদারকে অর্থ দিয়ে চাকরী টিকিয়ে রাখতে হলে অনেকের পক্ষেই তা সম্ভব নয়।
এজন্য তারা প্রধানমন্ত্রী, স্বাস্থ্যমন্ত্রী, খুলনার মেয়র ও অন্যান্য জনপ্রতিনিধিদের হস্তক্ষেপ কামনা করেছেন। খুলনা জেনারেল হাসপাতালসহ সিভিল সার্জনের আওতাধীন বিভিন্ন স্বাস্থ্য প্রতিষ্ঠানে আউটসোর্সিংয়ে কর্মরত ২১১ জন কর্মচারীকে চাকরীহারা করার ষড়যন্ত্রের প্রতিবাদে অনুষ্ঠিত সংবাদ সম্মেলন থেকে এ অভিযোগ করা হয়।
আজ বুধবার বেলা সাড়ে ১১টায় খুলনা প্রেসক্লাবের হুমায়ুন কবির বালু মিলনায়তনে এ সংবাদ সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়। সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্য পাঠ করেন, আউটসোর্সিং কর্মচারী মো: হাসিবুল ইসলাম। লিখিত বক্তব্যে বলা হয়, ২০১৯ সালের মে মাস থেকে ২১১ জন কর্মচারী নিয়োগ পায়।
মেসার্স তাকবীর এন্টারপ্রাইজ নামের একটি ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমে তারা চাকরীতে যোগদান করলেও প্রায় ১৩ মাস পর এ বছরের জুলাই মাসে এসে তারা বেতন পান। কিন্তু এর পর থেকেই আবারো বেতন বন্ধ থাকে। এরই মধ্যে ঠিকাদার পরিবর্তনের গুঞ্জন শোনা যায়।
বর্তমান সিভিল সার্জন তাদেরকে জানিয়ে দেন যে, ‘তোমাদের চাকরী নেই’। কিন্তু ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠানের পক্ষ থেকে তাদেরকে স্ব স্ব কর্মস্থলে থেকে দায়িত্ব পালনের জন্য বলা হয়। এমনকি সিভিল সার্জন একদিকে তাদের চাকরী নেই বললেও তিনি নিজেও তাদের অর্থাৎ আউটসোর্সিং কর্মচারীদের সেবা নিয়ে থাকেন।
বিশেষ করে বৈশ্বিক মহামারী করোনাকালীন সময়ে তারাই জীবনের ঝুঁকি নিয়ে দায়িত্ব পালন করেন। অথচ সরকারি কর্মচারীরা নিয়মিত বেতন পেলেও তারা বেতন বঞ্চিত হয়ে আসছেন। তার পরেও প্রথম বারের মত আবারো তারা একসাথে বেতন পাবেন এই আশায় ধার-দেনা করে চলতে থাকেন।
কিন্তু দিন যতই যাচ্ছে ততোই তাদের চাকরীহারা হওয়ার আশংকা বাড়তে থাকে। এক পর্যায়ে গত কয়েকদিন আগে তারা জানতে পারেন যে, মেসার্স তাকবীর এন্টারপ্রাইজকে বাদ দিয়ে নতুন ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠান নিয়োগ দেয়া হয়েছে। সিভিল সার্জন নিজেও তাদেরকে একাধিকবার বলেছেন যে, যদি চাকরী করতে হয় তাহলে যেন নতুন ঠিকাদারের সাথে যোগাযোগ করেন।
কিন্তু নতুন ঠিকাদারের সাথে যোগাযোগ করতে গেলে তাদের কাছে দু’লাখ টাকা দাবি করা হয়। কিন্তু তাদের এতো টাকা দেয়ার সামর্থ নেই। তাছাড়া এক বছরের চুক্তিতে এতো বিপুল পরিমান টাকা দেয়ার অর্থই হয়না। তাই তাদের এই ২১১টি পরিবারে আজ চরম হতাশা বিরাজ করছে।
সংবাদ সম্মেলনে আরও উল্লেখ করা হয়, একই সময়ে খুলনা বিভাগীয় পরিচালক(স্বাস্থ্য) এর দপ্তরেও কিছু আউটসোর্সিং কর্মচারী নিয়োগ দেয়া হয়েছে। সেখানেও এ বছর নতুন করে টেন্ডার দিয়ে নতুন ঠিকাদার নিয়োগ দেয়া হয়েছে। কিন্তু কোন কর্মচারীকেই বাদ দেয়া হয়নি।
অর্থাৎ আউটসোর্সিং কর্মচারীরা একবার নিয়োগ পেলে ঠিকাদার পরিবর্তন হলেও কর্মচারীরা তাদের কর্মস্থলে থাকবে এটিই স্বাভাবিক নিয়ম। ঠিকাদার পাবেন নির্দিষ্ট হারে কমিশন। যেটি ঠিকাদারের বৈধ আয়। কিন্তু কর্মচারীদের আবারো নতুন করে অর্থ ব্যয় করার বিষয়টা অমানবিক।
এ অবস্থায় মানবিক দিক বিবেচনা করে বিগত ছয় মাসের বেতন প্রদান এবং নতুন করে তাদেরকে যেন চাকরীচ্যুত না করা হয় সেজন্য সংশ্লিষ্ট উর্ধতন মহলের সুদৃষ্টি কামনা করা হয়। সংবাদ সম্মেলনে খুলনা জেনারেল হাসপাতালসহ নয়টি উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে কর্মরত ২১১ জনের মধ্যে অধিকাংশ আউটসোর্সিং কর্মচারী উপস্থিত ছিলেন।
এর আগে সকাল থেকে আউটসোর্সিং করমচারীরা প্রেসক্লাবের সামনে মানব বন্ধন করে। পরে তারা সিভিল সারজন অফিস ঘেরাও করে।
সংবাদ প্রেরক বিটিসি নিউজ এর খুলনা ব্যুরো প্রধান এইচ এম আলাউদ্দিন এবং মাশরুর মুর্শেদ। #

Comments are closed, but trackbacks and pingbacks are open.