শেখ হাসিনা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসা বঞ্চিত মানুষের ক্ষোভ – রয়েছে জনবল সংকট

টাঙ্গাইল প্রতিনিধি: টাঙ্গাইল শেখ হাসিনা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে মিলছে না কাঙ্ক্ষিত চিকিৎসা সেবা। আধুনিক যন্ত্রপাতি সরবরাহ করা হলেও শুধু জনবল সংকটে চালু করা যাচ্ছেনা হাসপাতালটির পুরো কার্যক্রম। এত দিনেও পূর্ণাঙ্গ কার্যক্রম চালু না হওয়ায় জন্য হাসপাতালের পরিচালক মোহাম্মদ আলী খানের গাফিলতিকে দায়ি করছেন লোকজন। এছাড়া তার পরিচালক পদে থাকা নিয়ে বৈধতার প্রশ্ন উঠেছে।
জানা গেছে- অধ্যাপক ডাক্তার মোহাম্মদ আলী খান টাঙ্গাইল মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতালের প্রকল্প পরিচালক ছিলেন । পরে বদলি হয়ে বগুড়া মোহাম্মদ আলী কলেজ ও হাসপাতাল অধ্যক্ষ হিসেবে যোগদান করেন। এরপর পাবনা মেডিকেল কলেজের অধ্যক্ষ পদে যোগদান করেন। তিনি টাংগাইল থাকাকালে হাসপাতালে যন্ত্রপাতি ক্রয়ে দুর্নীতি অভিযোগে তার বিরুদ্ধে বিভিন্ন মাধ্যমে সংবাদ প্রকাশিত হয়।
পরে পাবনা থেকে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের পরিচালক সি এম ই পদে যোগ দেন তিনি। সেখান থেকে তার স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের ডিজি অফিসে পরিচালক পদে পদায়ন হয়। চাকরির সে বয়স শেষ হলে এখান থেকে অবসরে যান। এরপর দুই বছরের জন্য চুক্তিভিত্তিক নিয়োগ পান তিনি। তার চাকরি স্বাস্থ্য বিভাগে ন্যস্ত করে টাঙ্গাইল শেখ হাসিনা মেডিকেল কলেজে বায়ো কেমিস্ট্রি বিভাগের অধ্যাপক হিসেবে পদায়ন করা হয়। এছাড়া তাকে শেখ হাসিনা মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতালে পরিচালক পদে অতিরিক্ত দায়িত্ব দেওয়া হয়।
২০২২ সালের ১৭ জুলাই স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের উপপরিচালক ডাক্তার জাফরুল হোসেন কে টাঙ্গাইল শেখ হাসিনা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের পরিচালক পদে বদলি করা হয়। রহস্যজনক কারণে ৩ আগস্ট তার বদলির আদেশ স্থগিত করে স্বাস্থ্য অধিদপ্তর এক প্রজ্ঞাপন জারি করে। নিয়ম অনুযায়ী তখন থেকেই শেখ হাসিনা মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতালের পরিচালক পদ শুন্য থাকার কথা । কিন্তু পরিচালক পদে অতিরিক্ত দায়িত্ব পালন করতে থাকেন তিনি।
এর মধ্যে গত বছরের ২২ নভেম্বর রাজশাহী ইনস্টিটিউট অফ হেলথ টেকনোলজির অধ্যক্ষ ফারহানা হককে শেখ হাসিনা মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতালের পরিচালক পদে বদলি করা হয়। প্রজ্ঞাপনের আদেশ অমান্য করে তিনিও পরিচালক পদে যোগদান করতে সম্মত হননি। আগের পদে ফিরে যান তিনি। এখন প্রশ্ন হচ্ছে মোহাম্মদ আলীর পরিচালক পদে থাকার বৈধতা নিয়ে। নিয়ম অনুযায়ী তার শেখ হাসিনা মেডিকেল কলেজের বায়ো কেমিস্ট্রি বিভাগে ফিরে যাওয়ার কথা। কিন্তু নিয়মের ব্যত্যয় ঘটিয়ে পরিচালক পদে থেকে অফিস করছেন তিনি। অফিস ফাইলে স্বাক্ষর করছেন। রুটিন মাফিক কাজকর্ম চালাচ্ছেন। গত ৩০ জানুয়ারি সংবাদপত্রে নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি দিয়ে তৃতীয় শ্রেণীর ১৭ জনকে বিভিন্ন পদে নিয়োগ দিয়েছেন। এ নিয়োগের বৈধতা নিয়েও প্রশ্ন উঠেছে।
এ বিষয়ে মোহাম্মদ আলী বিটিসি নিউজকে বলেন- পরিচালক পদে অতিরিক্ত দায়িত্ব দেওয়ার পর দায়িত্ব প্রত্যাহারের আর কোন চিঠি পাইনি ।ফের পরিচালক পদে অতিরিক্ত দায়িত্ব পালনে স্বাস্থ্য অধিদপ্তর থেকে কোন চিঠি পেয়েছেন কি-না? -এমন প্রশ্নের জবাবে কিছু জানেন না বলে দাবি করেন তিনি। তার দাবি, নিয়ম অনুযায়ী দায়িত্ব পালন করছেন তিনি।
রাজশাহী ইনস্টিটিউট অফ হেলথ টেকনোলজির অধ্যক্ষ ফারহানা হক এখনো কাগজে-কলমে শেখ হাসিনা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পরিচালক পদে রয়েছেন। স্বাস্থ্য অধিদপ্তর থেকে তার পদ প্রত্যাহার, স্থগিত বা বদলির কোন প্রজ্ঞাপন জারি করা হয়নি।
এ ব্যাপারে ফারহানা হকের ভাষ্য-ভুল করে তাকে শেখ হাসিনা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পরিচালক পদে পদায়ন করা হয়। সেখানে একজন দায়িত্বে রয়েছেন। এ ব্যাপারে অধিদপ্তরে চিঠি দিয়েছেন তিনি। বিষয়টি দ্রুতই সমাধান হবে।
টাঙ্গাইল শেখ হাসিনা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে দীর্ঘদিন ধরে জনবল সংকট রয়েছে ।অথচ সংকট সমাধানে তেমন কোন উদ্যোগ নেওয়া হয়নি বলে অভিযোগ উঠেছে পরিচালকের বিরুদ্ধে। শুধু ১০ তলায় মেডিসিন বিভাগ চালু করা হয়েছে। পরিচালকের ব্যর্থতায় মেডিকেল কলেজ হাসপাতালকে কেন্দ্র করে চার পাশে প্রায় শতাধিক ক্লিনিক গড়ে উঠেছে। এই ঘটনায় ক্লিনিককে কেন্দ্র করে একটি দালাল চক্রের সৃষ্টি হয়েছে।
কয়েকদিন আগে সড়ক দুর্ঘটনায় আহত ভাইকে নিয়ে হাসপাতালে আসেন বাঘিলের বাসিন্দা আনোয়ার হোসেন। তার অভিযোগ এত বড় ভবন নির্মাণ হলেও কোন চিকিৎসা নেই ।তার ভাইকে ঢাকা পঙ্গু হাসপাতালে নিতে হচ্ছে।
খাদিজা নামের এক নারী শরীরের জ্বর ও পেটে ব্যথা নিয়ে হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন। তিনি বলেন -সব ওষুধ কিনে খাচ্ছি। তাহলে সরকারি হাসপাতাল কেন? অনেক পরীক্ষা -নিরীক্ষা বাইরে থেকে করতে হয়েছে। মেডিকেল কলেজ হয়ে আমাদের কোন লাভ হয়নি।
তবে গাফিলতির অভিযোগ অস্বীকার করেছেন হাসপাতালটির পরিচালক মোহাম্মদ আলী। তার দাবি, শুধু ১০ তলায় মেডিসিন বিভাগ চালু করা হয়েছে। খুব দ্রুতই কয়েকটি বিভাগ চালু হবে। তিনি বিটিসি নিউজকে বলেন- ইকো মেশিন, সিটি স্ক্যান, এম আর আই, মেমোগ্রাফি,প্যাথলজি, ডার্মাটোলজি, কার্ডিওলজি বিভাগ বন্ধ রয়েছে। নেই শীতাতপ নিয়ন্ত্রিত আইসিইউ ব্যবস্থা। চালু করা হয়নি ব্লাড ব্যাংক। শুধু ইসিজি, এক্সরে ও আলট্রাসনোগ্রাম শুরু করা হয়েছে। নেই কেন্দ্রীয় অক্সিজেন ডিপো। হাসপাতালে অত্যাধুনিক কয়েকটি অপারেশন থিয়েটার থাকলেও এখানে অস্ত্রোপচার করা হয় না। এনেসথেসিয়া বিভাগের জুনিয়র কনসালটেন্টের পদগুলোও ফাঁকা। নার্স সংকটও প্রকট। ১৬৫ জন নার্সের মধ্যে রয়েছেন ৩০ জন।
সংবাদ প্রেরক বিটিসি নিউজ এর টাঙ্গাইল প্রতিনিধি লুৎফর রহমান উজ্জল। #

Comments are closed, but trackbacks and pingbacks are open.