শুষ্ক মৌসুমে বিবর্ণ ‘প্রমত্তা পদ্মা’ নদীপাড়ের জীবন, জীবিকাও পরিবেশকে হুমকিতে

নিজস্ব প্রতিবেদক: এক সময়ের প্রমত্তা পদ্মা নদীরউত্তাল ভাব এখন আর নেই। কালের বিবর্তনে বিবর্ণ হয়ে পড়েছে দেশের অন্যতম প্রধান এ নদী। উজানে পানির প্রবাহ কমে যাওয়ায় এখন শুষ্ক মৌসুমে রাজশাহী মহানগরীর পাশ দিয়ে বয়ে যাওয়া পদ্মার বিশাল অংশ বালুচরে পরিণত হয়েছে।
এ পরিবর্তন পদ্মার সঙ্গে মিশে থাকা নদীপাড়ের মানুষের জীবন, জীবিকা আর পরিবেশকে হুমকিতে ফেলেছে। যে নদীতে এক সময় পাল তোলা নৌকা চলতো সে নদীতে এখন নৌকা চলে সীমিত সংখ্যায়। যন্ত্রচালিত বাহনে বিশাল চর পারি দিয়ে নদীর তীরে এসে যাত্রীদের নৌকায় চড়তে হয়।
নদীর পানি কমে যাওয়ায় মাছের আকাল দেখা দেওয়ায় নদীপাড়ের মৎস্যজীবীরা এখন কর্মহীন। অনেকেই পেশা বদলাচ্ছেন। ভারতের ফারাক্কায় বাঁধের কারণে উজানের পানির চাপ কমে যাওয়ায় গত কয়েক দশক ধরেই ধীরে ধীরে ছোট হচ্ছে এই প্রমত্তা নদীর আয়তন।
এ বছর শুষ্ক মৌসুমে হঠাৎ করে পদ্মায় পানির প্রবাহ কমে যাওয়ায় সংকট আরও বেড়েছে। চর জেগে ওঠায় গত একযুগ ধরে নৌ-যান চলাচল ও মাছের উৎপাদন চরমভাবে ব্যহত হচ্ছে। ফলে এসব নদ-নদীকে আকড়ে ধরে বেঁচে থাকা ও জীবিকা নির্বাহ করা লাখো মানুষকে পড়তে হচ্ছে বিপদে। নদীপাড়ের মাঝি-মাল্লা, জেলে ও মৎস্যজীবীদের তাই দাবি, ফের খনন করে ফিরিয়ে আনা হোক এ অঞ্চলের ঐতিহ্য, সচল করা হোক তাদের জীবন ও জীবিকা।
প্রকৃতিবাদীদেরও দাবি, নদ-নদী রক্ষায় সরকারকে মেগা পরিকল্পনা করে প্রতি বছর ড্রেজিংয়ের ব্যবস্থা করতে হবে। দেশ ও মানুষকে বাঁচাতে নদীশাসন অতি জরুরি এবং নদী বাঁচলে বাংলাদেশ বাঁচবে বলেও মনে করেন তারা। ফারাক্কা চুক্তি অনুযায়ী প্রতি বছরের মত এবারো ১ জানুয়ারি থেকে শুরু হয়েছে শুকনো মৌসুম। চুক্তি মোতাবেক এই শুস্ক মৌসুমের ৩১ মে পর্যন্ত উভয় দেশ দশদিন ওয়ারী ভিত্তিতে গঙ্গার পানি ভাগাভাগি করে নেবার কথা। কিন্তু বাস্তবতা হলো চুক্তির ২৩ বছরে বাংলাদেশ চুক্তি মোতাবেক পানি কখনো পায়নি। এবার চুক্তি মোতাবেক শুকনো মৌসুম শুরু হবার পর হঠাৎ করে যৌথ নদী কমিশন শোরগোল তুলে জানান দিলে পদ্মায় বিগত বছর গুলোর তুলনায় প্রচুর পানি এসেছে। কিন্তু বাস্তবে গিয়ে পদ্মায় সে পানি দেখা যায়নি। গঙ্গা পানি বন্টন চুক্তি অনুযায়ী, ফারাক্কা পয়েন্টে গঙ্গায় ৭০ হাজার কিউসেক পানি থাকলে দুই দেশের মধ্যে অর্ধেক করে বন্টন হবে।
সেখানে ৭০ থেকে ৭৫ হাজার কিউসেক পানি থাকলে বাংলাদেশ ৩৫ হাজার কিউসেক এবং অবশিষ্ট পানি পাবে ভারত। আর ৭৫ হাজার কিউসেকের বেশি পানি থাকলে ভারত পাবে ৪০ হাজার কিউসেক এবংঅবশিষ্ট পানি আসবে বাংলাদেশে। তবে শর্ত আছে যে, দুই দেশই শুষ্ক মৌসুমের ১১ মার্চ থেকে ১০মে পর্যন্ত ১০ দিন পর পর ১০ দিন গ্যারান্টি যুক্তভাবে ৩৫ হাজারকিউসেক করে পানি পাবে। পানি উন্নয়ন বোর্ডের হিসাবে বাংলাদেশ এভাবেই পানি পেয়ে আসছে। কিন্তু এ নিয়ে রয়েছে নানা আলোচনা-সমালোচনা। কেননা, গ্রীষ্মের শুরুতেই শুকিয়ে যায় এক সময়ের খর স্রোতা পদ্মা। ধু-ধু বালুচরে পরিণত হয় বিস্তির্ণ এলাকা।
এ অবস্থায় পদ্মার প্রবেশ দ্বার রাজশাহী এবং এর আশপাশের এলাকার মানুষের জীবন-জীবিকা ও পরিবেশের ওপর পড়ে বিরূপ প্রভাব। বিশেষ করে বরেন্দ্র অঞ্চলের কৃষিতে প্রভাব পড়ে সবচেয়ে বেশি।
বিশিষ্ট নদী গবেষক মাহবুব সিদ্দিকী বিটিসি নিউজকে বলেন, ভারত আর্ন্তজাতিক নিয়মের তোয়াক্কা না করে উৎস্য ও উজানে গঙ্গার উপর অসংখ্য প্রকল্প নির্মাণ করে পানি সরিয়ে নিচ্ছে। যার ফলে ফারাক্কা পয়েন্টে যথেষ্ট পানি পৌঁছাতে পারছে না। এসব প্রাণঘাতি প্রকল্প অপসারণ করা ছাড়া গঙ্গা-পদ্মায় স্বাভাবিক প্রবাহ ফিরিয়ে আনার অন্য কোন বিকল্প নেই।
রাজশাহীর পরিবেশবিদ ও নদী বাঁচাও আন্দোলনের আহবায়ক অ্যাডভোকেট এনামুল হক বিটিসি নিউজকে বলেন, ভারত আর্ন্তজাতিক আইনরীতিনীতি এবং মানবাধিকার লঙ্ঘন করে গঙ্গাসহ অভিন্ন নদী গুলোরপানি এক তরফা ভাবে সরিয়ে নিচ্ছে। এভাবে বাংলাদেশকে ঠেলে দিয়েছে ভয়াবহ বিপর্যয়ের মুখে।
সংবাদ প্রেরক বিটিসি নিউজ এর নিজস্ব প্রতিনিধি মো.মাসুদ রানা রাব্বানী / রাজশাহী। #

Comments are closed, but trackbacks and pingbacks are open.