শীতকালের সার্বিক স্বাস্থ্য পরামর্শ নিয়ে বিটিসি নিউজের বিশেষ আয়েজন ‘ বিটিসি হেল্থ’।

নিজস্ব প্রতিবেদকউত্তরবঙ্গে শীতের প্রভাব পড়তে শুরু করেছে। শীতে অনেকে অসাবধানতাবশত নানারকম রোগাক্রান্ত হয়ে পড়ে।শীতকালে সমস্যা, করণীয়,বর্জনীয় এসবকিছু নিয়ে বিটিসি নিউজ এর বিশেষ আয়োজন ‘বিটিসি হেল্থ’।
বিটিসি নিউজ এর সাথে এ পর্বে কথা বলেছেন রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের মেডিসিন বিশেষজ্ঞ ও রাজশাহী ডায়াবেটিস এসোসিয়েশন জেনারেল হাসপাতালের কনসালটেন্ট  ডাঃ মোহাঃ আমিনুল ইসলাম (কটন)।
সাক্ষাতকার নিয়েছেন বিটিসি নিউজ এর নিজস্ব প্রতিনিধি মোঃ আমানুল্লাহ আমান।

বিটিসি : কেমন আছেন? 
* জ্বী,আলহামদুলিল্লাহ ভাল আছি।

বিটিসি :শীত জাগান দিচ্ছে।বিশেষভাবে উত্তরাঞ্চলে শীতের প্রকোপ একটু বেশি হয়। শীতের পূর্বপ্রস্তুতি কি কি নেয়া যেতে পারে?
* সুন্দর প্রশ্ন করেছেন।আবহাওয়ার ঋতুচক্রের কারনে আমাদের দেশে নিয়মিত শীত আসে।শীতকে তো ঠেকানো যাবেনা। শীতের পূর্বপ্রস্তুতিমূলক- শীতে যেসব রোগ বাড়ে যেমন- মধ্যবয়সী মানুষদের কথা বলি,যাদের অ্যাজমা,শ্বাসকষ্টের সমস্যা আছে তারা আগে থেকেই প্রতিরোধমূলক ওষুধপাতি নিবেন। শীশু ও বৃদ্ধদেরও শীতে কঠিন সংক্রমণ হতে পারে।এজন্য সকাল,সন্ধ্যায় বাইরে বের হলে মোটা কাপড় শরীরে দিয়ে বের হবেন। আর যাদের হৃদরোগ বা ফুসফুসের দীর্ঘমেয়াদী অসুখ আছে তারা বিষয়গুলো ভালভাবে মেনে চলবেন।

 

বিটিসি: শীতকালে কি কি সমস্যা হতে পারে?
*শীতল আবহাওয়া নাক,মুখ,কান দিয়ে প্রবেশ করে করে প্রথমেই ফুসফুসে সংক্রমণ বেশি হয়। এজন্য নিউমোনিয়া, অ্যাজমা বেড়ে যেতে পারে, ধুমপানজনিত বঙ্কাইটিস বেড়ে যেতে পারে।সাথে সাথে আরও কিছু বিষয় আছে, আমরা শীতে রাস্তার ধারে,ফুটপাতে নানারকম মৌসুমি খাবার খেয়ে থাকি।সেগুলো অপরিচ্ছন্নতা ও অস্বাস্থ্যকর হলে পেটে ইনফেকশন, ডায়রিয়া দেখা দিতে পারে।

বিটিসি: স্যর! এগুলো ছাড়াও আর্থাইটিস, হাইপোথার্মিয়া,ইনফ্লুয়েঞ্জার মতো রোগ হতে পারে। সেক্ষেত্রে করণীয় কি?
*জি,আপনি ঠিক বলেছে। আলাদাভাবে বলি, বাসায় বৃদ্ধ মানুষ অসুস্থ হয়ে পড়ে আছে  কিছু বলতেও পারছেনা। এরপর শিশুদের হাইপোথার্মিয়া হওয়ার সম্ভাবনা থাকে।কোনো লক্ষণ ছাড়াই শিশু মারা যেতে পারে। তাই মোটা কাপড়ে জড়িয়ে শরীর ও থাকার ঘর গরম রাখতে হবে।এছাড়া,শীতে আর্থাইটিস বেড়ে যায়।বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকের পরামর্শ নিতে হবে।স্থানীয় কবিরাজি বা ঝাড়ফুঁকে না গিয়ে চিকিৎসকের স্বরনাপন্ন হতে হবে।

বিটিসি: হাইপোথার্মিয়া। হঠাৎ তাপমাত্রা কমে যাওয়ায় আক্রান্ত হয়ে মৃত্যু হতে পারে।সেক্ষেত্রে গ্রামাঞ্চলের জনসাধারণ বিশেষভাবে কি প্রস্তুতি নিতে পারে?
*গ্রামাঞ্চলে হাইপোথার্মিয়া প্রতিরোধে বিশেষ উপদেশ হলো- শীতে মোটা কাপড়,চাদর,মাফলার জড়িয়ে থাকতে হবে। আমাদের দেশে সস্তা শীতবস্ত্র পাওয়া যায়।দুই বা ততোধিক শীতবস্ত্র জড়িতে ঠান্ডা নিবারণ করবে। আগুন জ্বালিয়ে হাত পোহানো, চুলোর ওপর দাড়িয়ে থাকা এগুলো বিপদজনক। কাপড়ে আগুন ধরে যায়,আগুন জ্বালিয়ে অনেকে ঘুমিয়ে পড়ে, অগ্নিদগ্ধ হয়ে মারা যায়।নানারকম দুর্ঘটনা ঘটে।

বিটিসি : শীতকালে করণীয় কি কি?
* শীতকালে করণীয় হলো- শীতের পোশাক ছাড়া বাইরে না যাওয়া।বাইরে শখের বসে যেগুলো খাবার খায়- সেগুলো গরম কিনা,পরিচ্ছন্ন কিনা, মশা-মাছি তথা জীবাণুমুক্ত কিনা সেগুলো খেয়াল রাখতে হবে। আর যারা আগে থেকে অসুস্থ যেমন অ্যাজমা বা শ্বাসতন্ত্রের রুগীরা নিয়মিত ওষুধ সেবন করবেন।
তাছাড়া, শীতে ঘরে কিছু ওষুধপাতি রাখতেই পারেন। যেগুলো চিকিৎসকের পরামর্শ ছাড়া খাওয়া যায়। যেমন অ্যান্টিস্ট্যামিন,এলার্জিজনিত সমস্যায় মন্টিলুকাস্ট এগুলো সংগ্রহে রাখতে পারেন।

বিটিসি : এসময়ে বিশেষভাবে শিশু ও বৃদ্ধদের করণীয় কি কি?
*জি। তাদের শরীরে তাপ সংরক্ষণ ক্ষমতা কম থাকে।ফলে তারা হঠাৎ রোগাক্রান্ত হতে পারে।তাই তাদের শরীর ও ঘর গরম রাখতে হবে।

বিটিসি: তবুও অসাবধানতাবশত শীতে অনেকে অসুস্থ হয়ে যায়।সেক্ষেত্রে প্রতিকারমূলক কি কি ব্যবস্থা নেয়া যেতে পারে?
*অবশ্যই প্রতিকারমূলক ব্যবস্থা নিতে হবে। আপনারা নিশ্চয় জানেন, স্বাস্থ্য অধিদপ্তর থেকে প্রতিকারমূলক বিভিন্নরকম সেবা দেয়া হয়।ওষুধ মজুদ করা,শ্বাসতন্ত্রের নেবুলাইজার,অক্সিজেন ইত্যাদি দেয়া হয়।যেকোনো সমস্যায় পড়লে বিশেষভাবে মা’য়েদেরকে বলব তাদের ছোট শিশু আছে।শীতজনিত সমস্যায় পড়লে নিকটবর্তী ইউনিয়ন স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স বা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে যোগাযোগ করবেন। সেখানে ডাক্তার এমনকি  প্যারামেডিকরা স্বাস্থ্য  সেবা দিতে পারেন। শীতে যেকোনো সমস্যা হলে আপনাদেরকে সেখানে যেতে হবে এবং সেবা নিতে হবে।

বিটিসি: একটা বিষয়, শীতকালে ত্বকের সমস্যা হয়।ঠোঁট ও চামড়া ফেটে যায়। ত্বক সুরক্ষিত রাখতে কি ব্যবহার করা যেতে পারে?
*জ্বী।ভালই বলেছেন। শীতে এ নিয়ে মিডিয়াতেও বেশ প্রচারপ্রচারনা আছে।শীতে শুষ্কতা থাকায় ত্বক ফেটে যায়। ত্বক সুরক্ষিত রাখতে- ভেসলিন, গ্লিসারিন এজাতীয় কেমিকেল গোসলের পর ব্যবহার করতে পারেন।

বিটিসি : সর্বশেষ প্রশ্ন, গ্রামাঞ্চলে অনেক পরিবারে শীতকে আতঙ্ক মনে করা হয়! শীত আসলে  আহামরি কি এমন আসল! এরকম মনে করে। এটাকে আপনি কিভাবে দেখেন?
অগ্রযাত্রা: না, শীত নিয়ে আতঙ্কিত হওয়ার কিছু নাই।এটা তো আমাদের শহর-গ্রাম সকলের কাছে আনন্দের। স্কুলে পরীক্ষা শেষ হয়ে যায়;ছুটি থাকে।বাচ্চাকাচ্চারা মজা করে ;মামার বাড়ি, নানার বাড়ি বেড়াতে যায়।কেউবা শ্বশুর বাড়ি যায়।পিঠাপুলির চমৎকার উৎসব চলতে থাকে।এগুলো ভালই।
তবে আমি যেগুলো স্বাস্থ্য বার্তা দিলাম, বিভিন্ন চিকিৎসকরা দেন এগুলো মেনে চললেই শীত নিয়ে অতি আতঙ্কের কিছু নেয়।
আর যারা সমাজের সম্পদশালী,বিত্তবান আছেন তাদের উদ্দেশ্যে বলব, আপনার প্রতিবেশী যে শীতবস্ত্রের অভাবে কষ্ট পাচ্ছে তার পাশে দাঁড়ান।বিভিন্ন সংস্থা,সংগঠন দাঁড়াচ্ছে। আসুন! সবাই মিলে শীতকে উপভোগ করি।

বিটিসি : অসংখ্য ধন্যবাদ!
*আপনাকে ও বিটিসি নিউজকে অসংখ্য ধন্যবাদ ও শুভকামনা!!

ডাঃ মোঃ আমিনুল ইসলাম (কটন)
এম.বি.বি.এস, এম.সি.পি.এস (মেডিসিন)
এফ.সি.পি.এস (মেডিসিন)।
(মেডিসিন বিশেষজ্ঞ)
রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল।
কনসালটেন্ট, রাজশাহী ডায়াবেটিস এসোসিয়েশন জেনারেল হাসপাতাল।
মেডিপ্যাথ ডায়াগনস্টিক কমপ্লেক্স, রাজশাহী।

সাক্ষাতকার গ্রহনে-
সাংবাদিক মোঃ আমানুল্লাহ আমান
নিজস্ব প্রতিনিধি
বিটিসি নিউজ।#

Comments are closed, but trackbacks and pingbacks are open.