শিশুর অধিকার ও সুরক্ষায় পদক্ষেপ নিবে সরকার : আইনমন্ত্রী

বিশেষ প্রতিনিধি: আইনমন্ত্রী মন্ত্রী আনিসুল হক এমপি বলেছেন, শিশুর অধিকার ও সুরক্ষায় বিদ্যমান আইনে বাস্তবমুখী পরিবর্তনের পদক্ষেপ নিবে সরকার। শিশুর জন্য আলাদা অধিদফতরের প্রতিশ্রুতি দিলেন আইনমন্ত্রী।
শিশুর বয়স নিয়ে অসঙ্গতি দূর করে শিশুর সার্বজনীন সংজ্ঞা নির্ধারণের তাগিদ ওয়ার্ল্ড ভিশনের আজ বৃহস্পতিবার (১১ আগস্ট) রাজধানীর একটি হোটেলে শিশুর সুরক্ষায় বাংলাদেশে প্রচলিত আইনগুলো পর্যালোচনা ও বিশ্লেষণ ধর্মী অনুষ্ঠানে এই প্রতিশ্রুতি দেন তিনি।
ওয়ার্ল্ড ভিশনের পরিচালক টনি মাইকেলের পরিচালনায় অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন-আইন, বিচার ও সংসদ বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের মন্ত্রী আনিসুল হক এমপি। প্যানেল আলোচনায় অংশ নেন স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সভাপতি শামসুল হক টুকু এমপি, আইন ও বিচার বিভাগের সচিব মো. গোলাম সারোয়ার এবং গণস্বাক্ষরতা অভিযানের নির্বাহী পরিচালক রাশেদা কে চৌধুরী।
অনুষ্ঠানে আইনমন্ত্রী বলেন, কোভিডের কারণে শিশুদের জন্য আলাদা অধিদফতর প্রতিষ্ঠার প্রক্রিয়া কিছুটা ব্যাহত হয়েছে। তবে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয় ও অর্থমন্ত্রনালয়ের সঙ্গে সমন্বয় করে যত দ্রুত সম্ভব শিশুদের জন্য আলাদা অধিদফতর করা হবে। এছাড়া শিশুদের সুরক্ষা ও উন্নয়নের জন্য বিদ্যমান আইনে শিশুদের বয়স সংক্রান্ত যা যা পরিবর্তন প্রয়োজন, সরকার তার বাস্তবমুখী পদক্ষেপ গ্রহণ করবে।
শামসুল হক টুকু এমপি বলেন, সরকার, বেসরকারি প্রতিষ্ঠান, এনজিওসহ সকলের ঐক্যবদ্ধ প্রচেষ্টা ছাড়া শিশু অধিকার সুরক্ষা করা সম্ভব নয়। শিশু সুরক্ষার জন্য শিশুদেরকে রাজনৈতিক ও ধর্মীয়ভাবে অপব্যবহার বন্ধ করতে হবে। শিশু অধিকারবিষয়ক সংসদীয় ককাস সংশ্লিষ্ট সকল মন্ত্রণালয় ও সংসদ সদস্যদের সঙ্গে আলোচনা করে যুগোপযোগী আইন প্রণয়ন করবে।
অনুষ্ঠানে বলা হয় শিশুরা দেশের সবচাইতে মূল্যবান সম্পদ, তাদের হাত ধরেই আসবে সমষ্টিগত উন্নয়ন। শিশুর উন্নয়ন ও শিশু সুরক্ষায় সরকারের ঐকান্তিক ইচ্ছা ও উদ্যোগের পরও শিশুর সুরক্ষা ও নিরাপত্তা সম্পূর্ণভাবে নিশ্চিত করা এখনও সম্ভব হয়নি। এক্ষেত্রের রয়েছে কিছু আইনগত বাধা। তবে শিশুর পরিপূর্ণ সুরক্ষায় শুধু আইন পর্যাপ্ত নয়, আইন বাস্তবায়নে প্রয়োজন সচেতন জনগোষ্ঠী।
সংসদ সদস্য ও আইনজীবী ব্যারিস্টার শামীম হায়দার পাটোয়ারীর নেতৃত্বে ওয়ার্ল্ড ভিশন সম্প্রতি শিশুর সুরক্ষায় বাংলাদেশে প্রচলিত আইনগুলো পর্যালোচনা ও বিশ্লেষণ করেছে। সেই অভিজ্ঞতা থেকে শিশুদের সর্বোত্তম কল্যাণে ওয়ার্ল্ড ভিশন অনুষ্ঠানে সরকারকে বিবেচনা করার অনুরোধ জানিয়ে বেশ কিছু সুপারিশ প্রস্তাব করে। যার মধ্যে শিশুর বয়স নিয়ে বিভ্রান্তি ও অসঙ্গতি দূর করে শিশুর সার্বজনীন সংজ্ঞা নির্ধারণ করা, বাল্যবিয়ে নিরোধ আইন ২০১৭ এর বিশেষ ধারার অধীন বিয়ের জন্য শিশুর সর্বনিম্ন বয়স নির্ধারণ করা, অপ্রাপ্ত বয়সী শিশু বাল্যবিয়ের শিকার হলে তাকে আটকাদেশ বা অর্থদণ্ড না দেওয়া, বিয়ের ক্ষেত্রে নারী ও পুরুষের জন্য পৃথক বয়স নির্ধারণ না করা, বাল্যবিয়ে প্রতিরোধে মনিটরিং ব্যবস্থা শক্তিশালী করা এবং বাজেট বরাদ্দ বৃদ্ধির জন্য কার্যকরী ব্যবস্থা গ্রহণ করা, শিশু আইন ২০১৩ এর আলোকে অনতিবিলম্বে বিধিমালা প্রণয়ন করা,বাংলাদেশের প্রতিটি জেলায় শিশুবান্ধব আদালত প্রতিষ্ঠা করা এবং বিচারকদের এই বিষয়ে প্রশিক্ষণ প্রদান করা, শিশুশ্রমিক নিয়োগকারীদের জন্য শাস্তির মেয়াদ ও অর্থদন্ড বৃদ্ধি করা, শিশু আইন ২০১৩ এ শারীরিক শাস্তির পাশাপাশি শিশুর মানসিক শাস্তির বিষয়টিকে গুরুত্বের সঙ্গে অন্তর্ভুক্ত করা, প্রশাসন ও আইনের সঙ্গে জড়িত ব্যক্তিদের শিশুর অধিকার ও সুরক্ষার সঙ্গে সম্পৃক্ত আইনসমূহ সম্পর্কে পর্যাপ্ত ধারণা দেওয়া, টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রায় শিশুশ্রম সংক্রান্ত লক্ষ্য অর্জনের জন্য অধিকতর গুরুত্ব আরোপ করা এবং প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা, বাল্যবিবাহ বন্ধে সরকারের জাতীয় কর্মপরিকল্পনার কার্যকর বাস্তবায়ন নিশ্চিত করা শিশু অধিকার ও সুরক্ষা নিশ্চিতকরণ এবং পরিপূর্ণ বিকাশের লক্ষ্যে শিশুর জন্য আলাদা অধিদফতর প্রতিষ্ঠা করা উল্লেখযোগ্য।
সংবাদ প্রেরক বিটিসি নিউজ এর বিশেষ প্রতিনিধি মোঃ লোকমান হোসেন পলা। #

Comments are closed, but trackbacks and pingbacks are open.