শিবগঞ্জ থানার এস.আই তৌহিদুলের নির্মম নির্যাতন ॥ বিচার চাইলেন অতিষ্ট স্ত্রী শাহনাজ

চাঁপাইনবাবগঞ্জ প্রতিনিধি: মানুষ নির্যাতনের হাত থেকে বাঁচতে সাহায্য চায় পুলিশের কাছে। আর এই পুলিশের একজন এস.আই যখন নিজেই নির্যাতনকারী হয় তখন তো আর কথায় নেই। অবশ্য সকল পুলিশ সদস্য এক নয়।

অমানুষরুপী পুলিশ সদস্যের জন্য পুলিশের ভাবমূর্তি নষ্ট হচ্ছে। কথায় বলে “রক্ষক যখন ভক্ষক” তখন আর কি?।

এসব বিষয়ে অবশ্যই তদন্ত করে কঠোর ব্যবস্থা নেয়া প্রয়োজন বলে মনে করছেন সচেতন মহল। অন্যথায় পুলিশের নিরপেক্ষতা, জবাবদিহিতা নিয়েও নানা প্রশ্ন দেখা দেবে।

এমনই এক ঘটনার দৃষ্ঠান্ত চাঁপাইনবাবগঞ্জ জেলার শিবগঞ্জ থানায় কর্মরত এস.আই তৌহিদুল ইসলাম।

তিনি বাগমারা উপজেলার মৃত সাহেব আলীর ছেলে। প্রায় ৬ বছর আগে ১০ লাখ টাকা যৌতুক নিয়ে বিয়ে করেন একই উপজেলার আপন খালাতো বোন শাহনাজ পারভিন কে। বিয়ের কিছু দিন পর থেকেই সংসারে কলহ সৃষ্টি হয়। মানষিক ও শারিরিক নির্যাতন শুরু হয় স্ত্রী শাহনাজ পারভিন এর উপর।

নির্যাতনের ধারাবাহিতকায় শাহনাজ পারভিন ২৬ মার্চ সন্ধ্যা ৬টা ১৬ মিনিটে নিজস্ব ফেসবুক আইডিতে তার তিনটি ছবি পোষ্ট করে তাতে ক্যাপশন লিখেন, “আর কত, আমিও মানুষ, আজ ১৪ দিন থেকে সইতে ছিলাম। এর আগেও চুপ ছিলাম, এবারও চুপ থাকতে চেয়েছিলাম, কিন্তু আর না। কারন কুকুর কোন দিন ভাল হয়না। পুলিশের চাকুরি করে। বে আইনি কাজ করে। আর সইতে পারবোনা। ওর বোনের বা ভাই বা ওকে কেউ এমন করলে কি করতো?”

এরপর স্বামী এস.আই তৌহিদুল ইসলামের নির্যাতনের বিচার চেয়ে চাঁপাইনবাবগঞ্জের গনমাধ্যম কর্মীদের স্মরণাপন্ন হয়ে সহযোগিতা চান নির্যাতিতা শাহনাজ পারভিন।

শাহনাজ পারভিন গতকাল শুক্রবার দুপুরে সাংবাদিকদের কাছে অভিযোগ করে বলেন, আমাকে দেখতে এসেই বিয়ে করেন খালাতো ভাই তৌহিদুল ইসলাম। এর কিছু দিন পর যৌতুক হিসেবে ১০ লাখ টাকা দাবি করে আমাদের কাছে। আমার সুখের সংসার টেকাতে সে সময় তাকে নগদ ১০ লাখ টাকা দেয়া হয়। এর পর বগুড়ায় চাকুরির সুবাদে সেখানে গিয়ে আদম দিঘির চাপাপুর গ্রামের রিমা নামের এক নারীকে বিয়ে করেন তৌহিদুল ইসলাম। সে বিয়ে আমাকে মেনে নিতে চাপ প্রয়োগ শুরু করে। আমি তার দ্বিতীয় বিয়ে না মানায় প্রায়ই আমার উপর নির্যাতন চালানো হয়। তারপরেও সাড়ে তিন বছরের একটি বাচ্চা থাকায় নিরবে তার নির্যাতন সহ্য করে গেছি।

তিনি আরও বলেন, সম্প্রতি দ্বিতীয় বউ রিমাকে ঘরে তোলার জন্য আমাকে চাপ দিতে থাকে। এনিয়ে আমি প্রতিবাদ করায় গত ১৪দিন আগে মেরে আমার বাম পা ভেঙে দেয়। এছাড়াও শরীরে বিভিন্নস্থানে আঘাত করে। পরে আমি কোন রকমে শিবগঞ্জ থানার গেটের বাসা হতে বের হয়ে একা শিবগঞ্জ হাসপাতালে গিয়ে চিকিৎসা করায়। দিন দিন আমার স্বাস্থ্যের অবস্থা অবনতি হওয়া গত বৃহস্পতিবার বাবার বাড়ী বাগমারায় চলে আসি।

তিনি জানান, বিষয়টি শিবগঞ্জ থানার ওসি শামসুল আলম, তদন্ত আতিকুল ইসলাম ও এস.আই আনামকে জানালেও তারা কোন ব্যবস্থা গ্রহন করেনি।

এবিষয়ে জানতে চাইলে শিবগঞ্জ থানার এসআই ও শাহনাজ পারভিন এর স্বামী তৌহিদুল ইসলাম বিটিসি নিউজ এর প্রতিবেদককে বলেন, আমি স্ত্রী শাহনাজ পারভিন কে নির্যাতন করিনি। সিড়ি হতে পড়ে তার পা ভেঙে গেছে। এছাড়া তিনি দ্বিতীয় বিয়ের কথা অস্বীকার করে বলেন, শাহনাজের মাথায় সমস্যা আছে। শরীরে আঘাতের চিহ্ন’র কথা জানতে চাইলে তিনি বলেন, ওগুলো ইনজেকশনের দাগ। এলার্জি থাকায় শরীরের বিভিন্নস্থানে দাগ পড়ে গেছে। এছাড়াও তিনি সংবাদিকদের মাধ্যমে সমঝোতার প্রস্তাব দেন।

এবিষয়ে শিবগঞ্জ থানার ওসি (তদন্ত) মো. আতিকুল ইসলাম বিটিসি নিউজ এর প্রতিবেদককে জানান, প্রায় বছর খানেক হয়েছে এস.আই তৌহিদুল ইসলামের শিবগঞ্জ থানায় যোগদান করা। এর আগে সে বগুড়ায় চাকুরী করতো। এস.আই তৌহিদুল ইসলামের স্ত্রী শাহনাজ পারভিন তাঁকে নির্যাতন বা পারিবারিক কলহের বিষয়ে কিছুই জানাইনি।

এব্যাপারে আজ শনিবার দুপুরে শিবগঞ্জ থানার ওসি শামসুল আলম শাহ বিটিসি নিউজ এর প্রতিবেদককে জানান, থানার এস.আই তৌহিদুল ইসলামের স্ত্রীর উপর নির্যাতন বা কলহ বিষয়ে তাঁর স্ত্রী কোন কিছুই জানাই নি। মৌখিক বা লিখিত কোনভাবেই জানানো হয়নি। এছাড়া থানায় ৪০টি পরিবারের কোথায় কি হলো, সেটা খোঁজ রাখা আমার পক্ষে সম্ভব নয়। প্রতিদিন সকালে উঠে পারিবারিক ঝাঁমেলা বা সকল পরিবারের সমস্যা জানাও আমার পক্ষে জানার সময় নেই। আমাকে না জানিয়েও আমার বিরুদ্ধে মিথ্যা তথ্য দিচ্ছেন এস.আই তৌহিদুল ইসলামের স্ত্রী।

সংবাদ প্রেরক বিটিসি নিউজ এর চাঁপাইনবাবগঞ্জ প্রতিনিধি মো: আশরাফুল ইসলাম রঞ্জু। #

Comments are closed, but trackbacks and pingbacks are open.