শিক্ষাঙ্গনে ফিরে আসুক আস্থা, বিশ্বাস ও শ্রদ্ধার অপার্থিব সন্নিবেশ

প্রতীকী ছবি
লেখক: ড. মুহাম্মদ আব্দুল মুমীত: বর্তমানে শিক্ষাঙ্গনে ত্রিভুজ সমস্যা দৃশ্যমান। শিক্ষক, শিক্ষার্থী ও অভিভাবক যেন এখন তিন মেরুর বাসিন্দা। অথচ শিক্ষালয়ের অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ এই তিন শ্রেণির অংশীজনের মিথস্ক্রিয়ার মাধ্যমেই জন্ম নেয় রাষ্ট্রনায়ক হতে শুরু করে সমাজের সকল প্রর্যায়ের প্রতিনিধিত্বকারী জনগোষ্ঠী।
সমস্যার মধ্যে দিয়েই পৃথিবীর সৃষ্টি, সমস্যা থাকতেই পারে; যা পূর্বেও ছিল এখনো থাকবে, এটাই স্বাভাবিক। কিন্তু যুগ যুগ ধরে মানুুষের শঙ্কা মূলত সমস্যার বিস্তার ও এর ধরন নিয়ে; যা বারংবার প্রকম্পিত করেছে বিশ্ববাসীকে।
দীর্ঘ দিন থেকেই আমাদের শিক্ষালয়ে শিক্ষক, শিক্ষার্থী ও অভিভাবকদের মাঝে এক ধরনের অবিশ্বাস, অশ্রদ্ধা ও আস্থাহীনতার পরিস্ফুটন প্রকাশ পেতে থাকে। সাম্প্রতিক সময়ে এই অবস্থা যে কতটা ভয়াবহতার দিকে তীব্র গতিতে ধাবিত হচ্ছে তার একটি চমৎকার দৃষ্টান্ত আমরা দেখতে পাই- “শিক্ষা কেন পিছিয়ে, শিক্ষক কেন মার খান” শিরোনামে বিখ্যাত কথাসাহিত্যিক ও শিক্ষাবিদ সৈয়দ মনজুরুল ইসলামের লেখাটিতে।
উদ্ভূত বেশ কিছু ঘটনা আমাদেরকে রীতিমত ভাবিয়ে তুলেছে এবং সংশয়ের কালো মেঘ কূন্ডলী পাকিয়ে ছেয়ে ফেলেছে আমাদের দায়িত্ব ও কর্তব্যবোধকে। প্রচ্ছন্ন সংকটের কুৎসিত লাগাম এখনই টেনে ধরতে না পারলে আলোর দিকে অগ্রসর হওয়া যে বেশ কঠিন হবে, তা এখন সুস্পষ্ট। শিক্ষা নামের আলোর যে মশাল, তার প্রভা যেন কিছুটা ঝিমিয়ে পড়তে শুরু করেছে! জাতি হিসেবে এটা আমাদের জন্য নিশ্চয় সুখকর বার্তা নয়। শিক্ষাঙ্গন মূলত শিক্ষক ও শিক্ষার্থীদের বিচরণক্ষেত্র হলেও পরোক্ষভাবে তার সাথে জড়িয়ে থাকে অভিভাবকদের অদৃশ্য কিন্তু দুর্লভ অংশীদারিত্ব।
বিশেষকরে গ্রামাঞ্চলে তো বটেই, শহরাঞ্চলেও বিভিন্ন পর্যায়ের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে অভিভাবকের ভূমিকা অপরিসীম। মানসম্মত শিক্ষার জন্য অবশ্যয় এই তিনটি অংশীজনের মধ্যে থাকতে হবে নিবিড় নির্লোভ সম্পর্ক, দায়িত্ব ও কর্তব্যবোধ এবং ইতিবাচক দৃষ্টিভঙ্গি। আমরা অবলীলায় স্বীকার করি, শিক্ষক-শিক্ষার্থীর মাঝে বিরাজমান বন্ধনহীন পবিত্র সম্পর্কের উপর ভিত্তি করেই নির্মিত হয় শিক্ষার্থীর স্বপ্নের ইমারত, যার পূর্ণতাদানে সহায়ক ভূমিকা পালন করে থাকেন অভিভাবকরা। সেই অর্থে একজন শিক্ষার্থীর সুশিক্ষা সুনিশ্চিত করতে, আলোকিত মানুষ গড়তে অবশ্যয় এই তিনের সুদৃঢ় অংশদারিত্ব এবং অব্যাহত অনুপ্রেরণার সন্নিবেশ অপরিহার্য।
আমরা যারা মাঠ পর্যায়ে কাজ করি, আমাদের সবারই এই তিন অংশীজনকে খুব কাছে থেকে পর্যবেক্ষণ করার বাস্তব অভিজ্ঞতা রয়েছে। উদাহরণ টেনে লেখাটিকে দীর্ঘায়িত করে পাঠকের মন:সংযোগের বিঘœ ঘটাতে চাই না। শিক্ষকদের সবারই অভিযোগ প্রায় একই; অভিভাবক অসচেতন, শিক্ষার্থীরা কথা শুনে না, কারণ হিসেবে তাদের যুক্তি যেন ঐ একটাই ‘বেত’।
আমরা যখন অভিভাবকদের সাথে কথা বলি, তাঁরা খুব শক্তকরেই অবলীলায় বলে ফেলেন, শিক্ষকেরা আর আগের মতো মনোযোগ দিয়ে শিক্ষার্থীদের পড়ায় না, শিক্ষকেরা এখন শিক্ষকতা ছাড়াও নানান পেশার সাথে জড়িয়ে পড়েছে এবং প্রাইভেটের ব্যাপারে তাঁরা প্রচ্ছন্নভাবে শিক্ষার্থীদের প্রলুদ্ধ করেন ইত্যাদি। শিক্ষার্থীদের বিবরণ অত্যন্ত মর্মষ্পর্শী ও বেদনাদায়ক।
অনেক শিক্ষার্থীর বক্তব্যে অভিভাবক ও শিক্ষক উভয়েরই অবহেলার চিত্র ফুটে ওঠে নির্দয়ভাবে। তাদের মতে বাবা-মা এতবেশি ব্যস্ত থাকেন যে, তাদের দিকে সময় দেবার ফুসরত পান না এবং শিক্ষকেরা ক্লাশের চেয়ে প্রাইভেটেই বেশি আন্তরিকতা দেখান। পুরো প্রক্রিয়াটি যেন সৈয়দ মুজতবা আলীর ‘বই কেনা’ প্রবন্ধে প্রকাশক ও ক্রেতার মাঝের সুনিপণ বক্তব্যেরই প্রতিফলন বৈকি! এর সমাধান কোথায়? খুব সহজ! সমাধান নিজের কাছেই।
সাধক লালন ফকিরের ভাষায়: “বহু তর্কে দিন বয়ে যায়, বিশ্বাসে ধন নিকটে রয়”। মানুষের সকল প্রকার আচরনিক বিচ্যুতি মূলত অবিশ্বাস থেকেই জন্ম নেয়। সমাজের সকল অনাচার, অশ্রদ্ধা ও আস্থাহীনতার মূলেই রয়েছে বিশ্ব সের অভাব। বিশ্বাস মানুষের অনেক বড় শক্তি, অনেক বড় সম্পদ, যা অজেয়কে আয়ত্তে আনে নিমিষেই। বিশ্বাস না থাকলে পরিবার, সংসার, সমাজিক বন্ধন সবকিছু ভেঙ্গে চুরমার হতে বাধ্য; আর এর আলামত হলো: দায়িত্ব ও কর্তব্যে অবহেলা এবং নিজের অপ্রাপ্তি ও অন্যের প্রাপ্তিটাকে বড় করে দেখতে শুরু করা।
বিখ্যাত দার্শনিক জালাল উদ্দিন রুমি তাঁর মসনবী শরীফে খরগোস ও সিংহের গল্পের মাধ্যমে মানব মনের এক অভিনব চরিত্র চমৎকারভাবে ব্যাখ্যা করতে সক্ষম হয়েছেন। খরগোস যখন সিংহকে কুয়োর কাছে নিয়ে গিয়ে বলল, মহারাজ আপনার শক্র অন্য সিংহটি এ কুয়োর মধ্যেই লুকিয়ে আছে; সিংহ কুয়োর মধ্যে তাকাতেই রাগে গর্জন করে উঠল এবং ঝাপিয়ে পড়ল। দার্শনিক রুমির পর্যবেক্ষণ হলো: “মানুষ অন্যের মাঝে যে দোষগুলো দেখে থাকে তা মূলত তার নিজেরই”। অর্থাৎ সিংহ কুয়োর মধ্যে তার নিজের চেহারাটিই দেখেছিল।
মানুষ যদি তার নিজের অসংগতিগুলো চিহ্নিত করতে সক্ষম হয়; তাহলে সমাধান তো তার নিজের কাছেই, প্রয়োজন শুধু ইচ্ছা শক্তির দৃঢ়তা। এক্ষেত্রে বড়–চন্ডীদাসের বিখ্যাত উক্তটি স্মরণ করতে চাই, “সবার উপরে মানুষ সত্য, তাহার উপরে নাই”। এতো কিছুর পরেও বৈচিত্র্য মানব মনের প্রকৃতি নিয়ে সংশয় ও উৎকণ্ঠা থেকেই যায়!
সংশয়ের কিছুটা যৌক্তিকতা খুঁজে পাওয়া যায় আধুনিক রাষ্ট্রবিজ্ঞানের জনক নিকোলার ম্যাকিয়াভেলীর ‘দ্য প্রিন্স’ গ্রন্থে; যেখানে তিনি রহস্যময় মানুষ সম্পর্কে বিস্ময়কর অনুভূতি ব্যক্ত করেছেন: “মানুষ অকৃতজ্ঞ, অবাধ্য, অসৎ এবং শঠ; বিপদে আতঙ্কিত এবং লাভের প্রত্যাশী। প্রেমের বাধ্যকতা এই ঘৃণ্য প্রাণীরা সুযোগ পেলেই ভেঙ্গে ফেলে, কিন্তু শাস্তির ভয় তাদেরকে শৃঙ্খলায় বেধে রাখে”। অর্থাৎ জীবনে সুপথে পরিচালিত হওয়ার জন্য নিয়ম-শৃঙ্খলা ও শাসনের গুরুত্বই উক্তিটিতে প্রচ্ছন্নভাবে ফুটে উঠেছে। শাসন মানেই আমরা এখন শিক্ষাঙ্গন বুঝতে শুরু করেছি।
সমস্যাটা এখানেই! শাসন থাকতেই হবে; শুধু শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে কেন? শাসন থাকতে হবে পরিবারে, থাকতে হবে সমাজে, থাকতে হবে রাষ্ট্রে। কিন্তু শাসন মানেই কি কেবল ‘প্রহার’ আর ‘বেত’? এইখানেই আমাদেরকে যথেষ্ট মনোযোগ দিয়ে চিন্তার দ্বার প্রসারিত করতে হবে। শুধু শাসন করেই কি সব আয়ত্বে আনা যায়? প্রাচীন চীনের প্রখ্যাত দার্শনিক এবং চিন্তাবিদ কনফুসিয়াস এ সম্পর্কিত এক অভিনব ব্যাখ্যা প্রদান করেছেন। তাঁর মতে: “ মানুষের মাঝে যদি নৈতিক চরিত্রের উন্নতি না ঘটে, শুধুমাত্র আইন দিয়ে মানুষকে সংযত রাখা সম্ভব নয়”। অর্থাৎ শুধু শাসন করেই মানুষকে দিয়ে সবসময় ভালো কিছুর প্রত্যাশা সমীচীন নয়। শাসনের মাঝে থাকতে হবে নিখাদ ভালোবাসা ও নিবিড় পরিচর্যা।
অন্যত্র নিকোলার ম্যাকিয়াভেলী উল্লেখ করেছেন: “মানুষ প্রধানত দু’টি তাড়নায় পরিচালিত হয়: ভালোবাসা অথবা ভয়”। উদ্ভূত পরিস্থিতি হতে সমাধানের জন্য আমাদের সামনে দুটি পথ খোলা; একটি হলো ভালোবাসা আর অন্যটি শাসন বা ভয়। সন্তান তথা শিক্ষার্থীদের মাঝে এ’দুয়ের সন্নিবেশ ঘটাতে সক্ষম হলেই শিক্ষালয় তথা সমাজের সকল স্তরে প্রবাহিত হবে ভক্তি, শ্রদ্ধা ও আস্থার সুশীতল বাতাস; যার জন্য নিরলসভাবে কাজ করে যেতে হবে শিক্ষক ও অভিভাবকদেরকে তাঁদের মহত্ব ও নিজস্বতার কোমল পরশ বুলিয়ে। মনে রাখতে হবে শিক্ষার্থী তো শিক্ষার্থী হয়ে জন্ম নেয় না। জন্ম লগ্নে সে তো ছিল অসহায় কাদা মাটির মতো এক শিশু।
এই অবুঝ শিশুটি ধীরে ধীরে অভিভাবকের হাত বদলিয়ে সন্তান হতে শিক্ষার্থীতে পরিণত হয়। সুতরাং শুরুতেই অভিভাবক যদি তার আচারনিক ও নৈতিক শিক্ষার বিষয়টি নিশ্চিত করতে পারেন, তাহলে শিক্ষকের পক্ষে পরবর্তী পর্যায়গুলো পার করানো অনেক সহজ হবে। তাই শিক্ষক ও অভিভাবককে শুরুতেই এগিয়ে আসতে হবে, খুঁজতে হবে দুর্বল জায়গাগুলো এবং একই সাথে তা মেরামতেও দেখাতে হবে আন্তরিকতার সন্নিবেশ।
সৃষ্টির আদিকাল থেকেই বিভিন্ন সময় পৃথিবী বিভিন্ন সমস্যার সম্মুখীন হয়েছে; সেখান থেকে উত্তরণের জন্য সে সময়ের মানুষেরা বিভিন্নভাবে প্রচেষ্টা চালিয়ে সফলও হয়েছেন, ফলশ্রুতিতে গড়ে উঠেছে নানান সভ্যতা।
বর্তমান সভ্যতার সবচেয়ে বড় সমস্যা হলো অর্থ ও বিত্তের সীমাহীন লালসা। মানুষের পারিবারিক জীবন, সামাজিক জীবন থেকে জীবনের সকল স্তরেই যেন সফলতার একমাত্র মাপকাঠি এখন অর্থ। অর্থ আর বিত্তই যেন এখন মানুষের একমাত্র সম্মান ও ক্ষমতার কেন্দ্রবিন্দুতে পরিণত হয়েছে; যেটি সভ্যতার জন্য কখনো সুখকর হয় না। অর্থ, বিত্ত, ক্ষমতা ও প্রতিপত্তির অবশ্যয় প্রয়োজন আছে, কিন্তু এর অন্ধত্বের অসারত্ব নয়। মানব মনের হীনতা যেন শিক্ষা, জ্ঞান ও মনুষ্যত্ব নিয়ে ঠাট্রা-বিদ্রুপ করার সাহস না দেখায়, এ নিশ্চয়তাটুকু থাকা চাই। যদি এসব হীনতা আমাদেরকে ঘনকালো মেঘের মতো ছেয়ে ফেলে, তাহলে সেই বাতাস আামাদের শিক্ষাঙ্গনকেও প্রভবিত করবে প্রবলভাবে। বর্তমান পরিস্থিতি যেন সেই ভগ্নদশার অশনিসংকেতই স্মারণ করিয়ে দেয় বারংবার!
শিক্ষা যেন এখন সনদ অর্জন ও পছন্দের কর্ম লাভের মাধ্যমে অর্থ উপার্জনের মূখ্য শিকারে পরিণত হয়েছে। এক অদৃশ্য মায়ার জালে সবাই যেন আজ বন্দি হয়ে পড়েছে। অভিভাবক, শিক্ষক ও শিক্ষার্থীরা আজ একই স্বপ্ন পূরণে ব্যস্ত; যে করেই হোক সোনার হরিণটা আমার চাই, চাই-ই। তৈরি হচ্ছে অসুস্থ প্রতিযোগিতা, ভুলুণ্ঠিত হচ্ছে প্রত্যেকের যথাযথ সম্মান ও শ্রদ্ধার শেষ আশ্রয়টুকুও। সংগত কারণেই প্রাইভেট কোচিং সেন্টারগুলোর কদর এত বৃদ্ধি পাচ্ছে বন্যার পানির মতো।
শিক্ষাঙ্গন যেন আজ অর্থ উপার্জনের হাতিয়ার তৈরির কারখানায় পরিণত হয়েছে। শিক্ষার যে আসল উদ্দেশ্য সেখান থেকে আমাদের সকলেরই বিচ্যুতি ঘটেছে। শিক্ষক, শিক্ষার্থী ও অভিভাবক কেউই এর বাইরে নয়। নীতি ও নৈতিকতার বিষয়টি আমরা ভুলতে বসেছি; অথচ শিক্ষার মূল লক্ষ্য ও উদ্দেশ্যই হলো অন্ধকার দূর করে আলোর সন্ধান লাভ। তাইতো শিক্ষার অবক্ষয় হতে উত্তরণের জন্য কনফুসিয়াস বিশ্বাস করতেন: “শিক্ষার মূল ভিত্তি হচ্ছে নীতিজ্ঞান”। কিন্তু অপ্রিয় হলেও সত্য, অর্থ ও ক্ষমতার কাছে আজ নীতিজ্ঞান পরাভূত, ভূলুণ্ঠিত! এই জায়গাটি যদি আমরা সমৃদ্ধ করতে পারি তাহলে শিক্ষক, অভিভাবকসহ সমাজের সবার শ্রদ্ধা ও সম্মানের অবস্থান সুপ্রতিষ্ঠিত হবে এবং যার মাধ্যমে মূলোৎপাটন করা সম্ভব হবে শিক্ষাঙ্গনের বিশৃঙ্খলার, বৈরিতার। কেননা কোন একটি মোহের মাধ্যমে শিক্ষাকে আবদ্ধ করা উচিত নয়; শিক্ষা হতে হবে সর্বজনীন ও উন্মুক্ত।
২.৫ অদৃশ্য কারণে শিক্ষাপ্রশাসনের বিষয়টি অস্পষ্ট রাখা হয়েছে; বর্ণিত পরিস্থিতে তাঁদের ভূমিকার ক্ষেত্রটিকেও সংকুচিত করার কোন সুযোগ নেই। শিক্ষা পরিবার একটি দেহের মতো; শরীরের কোন স্থানের সামান্য অবনমন যেভাবে সমস্ত দেহকে আন্দোলিত করে, ঠিক একইভাবে শিক্ষার সমান্য বিচ্যুতি বা অর্জন যেন শিক্ষা পরিবারের সবাইকে অনুরণিত করতে পারে সে অভিপ্রায় অবশ্যয় থাকতে হবে।
আমরা লড়াকু জাতি, আমাদের অর্জনের শেষ নেই; কোন কিছুতেই আমরা থেমে থাকতে পারি না। অদম্য এই আমরা, স্বপ্ন দেখি ২০৪১ সালের মধ্যে উন্নত বাংলাদেশে উন্নীত হওয়ার। মিলেনিয়াম ডেভেলপমেন্ট গোল (এমডিজি) অর্জনের মাধ্যমে নিম্ন মধ্যম আয়ের দেশ হতে মধ্যম আয়ের দেশে পদার্পণ করে, টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা (এসডিজি) অর্জনের সক্ষমতার জানান দিয়ে ‘পদ্মা সেতুর’ মতো বিষ্ময়কর স্বপ্ন পূরণের সাফল্যে জাতি যখন উচ্ছ¡াসিত, প্রশংসিত এমন সন্ধিক্ষণে শিক্ষাঙ্গন নিয়ে আমাদের পিছিয়ে থাকার কোন সুযোগ নেই।
সকলের সম্মিলিত প্রয়াসের মাধ্যমে শিক্ষাঙ্গনের শৃঙ্খলা, জবাবদিহিতা, আস্থা ও বিশ্বাস আবশ্যয় ফিরিয়ে আনা সম্ভব। এর জন্য থাকতে হবে আন্তরিকতা, ভালোবাসা ও ভয়ের সন্নিবেশ, যার মিথষ্ক্রিয়ায় নির্মিত হবে এক মির্মল নির্লোভ অপার্থিব বিশ্বাস ও অস্থার দুর্ভেদ্য প্রাচীর।
উপমহাদেশের বিখ্যাত শিকারি জিম কারবেট এঁর মতো বাঘ ও শিকারির মাঝে যে অদৃশ্য সংবেদন ও হৃদস্পন্দনের অনুভূতি সাধারণ মানুষের পক্ষে যেমন অনুধাবন করা অসম্ভব ও অপ্রকাশিত, একইভাবে আমরাও চাই- আমাদের শিক্ষক, শিক্ষার্থী ও অভিভাবকের মাঝের সেই স্বর্গীয় মধুর সুসস্পর্ক এমন এক পর্যায়ে উন্নীত হোক, যা প্রত্যাশিত, কিন্তু তা যেন আমাদের কাছে অপ্রকাশিত-ই থাকে নিরন্তর।।
লেখক: ড. মুহাম্মদ আব্দুল মুমীত, শিক্ষা কর্মী, মাউশি, শিক্ষা মন্ত্রণালয়। #

Comments are closed, but trackbacks and pingbacks are open.