লালপুরে গোসাইজীর আশ্রমে ২দিন ব্যাপি নবান্ন উৎসব শুরু

লালপুর (নাটোর) প্রতিনিধি: নাটোরের লালপুর উপজেলার গোসাঁইজীর আশ্রমে দুই দিন ব্যাপী নবান্ন উৎসব শুরু হয়েছে। প্রতি বছরের ন্যায় এবারও ২ দিন আগে থেকেই গোসাইজীর ভক্তরা উপজেলার দুড়দুড়িয়া ইউনিয়নের রামকৃষ্ণপুর গ্রামে অবস্থানরত গোসাইজীর আশ্রমে আগমন শুরু করেন।
আজ বুধবার (১৬ ডিসেম্বর) প্রথম দিন দুপুরে আশ্রম কমিটির সভাপতি শ্রী রঞ্জন কুমারের সভাপত্বিতে প্রধান অতিথী হিসেবে উপস্থিত ছিলেন, লালপুর উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি আফতাব হোসেন ঝুলফু। বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন লালপুর উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান ও উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারন সম্পাদক ইসাহাক আলী, দুড়দুড়িয়া ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও ইউপি চেয়ারম্যান আব্দুল হান্নান সরকার।
এছাড়াও উপস্থিত ছিলেন লালপুর উপজেলা পরিষদের মহিলা ভাইস চেয়ারম্যান পারভীন আক্তার বানু, লালপুর উপজেলা আওয়ামীলীগের সহ-সভাপতি আনিছুর রহমান, লালপুর উপজেলা হিন্দু বৌদ্ধ খ্রিস্টান ঐক্য পরিষদের সভাপতি পরিমল কুমার কুন্ডু, সাধারন সম্পাদক প্রদীপ কুমার প্রমুখ।
গোসাঁইজীর আশ্রমে ভক্ত ও সেবাইতদের সাথে কথা বলে জানা গেছে,বিশ্ব ব্যাপি প্রানঘাতী করোনা ভাইরাসের প্রভাবে এবার সকাল থেকেই আশ্রমে ভক্তদের ভীড় একটু কম। আশ্রমটি পরিদর্শন করে দেখা গেছে নারী-পুরুষ নির্বিশেষে ভক্তরা আশ্রমে পৌঁছেই শ্রী শ্রী ফকির চাঁদ বৈষ্ণব গোসাইজী ও তার শিষ্য সাধু বৃন্দের সমাধীতে ভক্তি শ্রদ্ধা জানাচ্ছে এবং ভক্তরা আশ্রমের উন্নয়নে সাধ্যমত দানও করছেন।
নি:সন্তান বন্ধ্যা মহিলারা আশ্রমের অক্ষয় তলা নামক স্থানে বটগাছের নিচে স্মান/গোসল করে ভেজা কাপড়ে বসে আঁচল বিছিয়ে সন্তান লাভের জন্য ভীক্ষা মাংছেন। কথিত আছে, যদি গাছের ফল বা পাতা আঁচলের ওপর পড়ে তাহলে নি:সন্তান নারী সন্তান লাভ করবে।
আশ্রম প্রাঙ্গনে দুপুরে সারিবদ্ধভাবে বসে গোসাইজীর ভক্তরা কলার পাতায় করে খিচুড়ি,পাঁচ তরকারী ও পায়েস ভক্ষণ করেন। আশ্রমের প্রধান সেবাইত সাধক শ্রী পরমানান্দ সাধু জানান,বাংলা ১২১৭ সালে লালপুর উপজেলা সদর থেকে আট কিলো মিটার দক্ষিণ-পশ্চিমে দুড়দুড়িয়ার রামকৃষ্ণপুর গ্রামের গহীন অরণ্যে একটি বটগাছের নিচে আস্তানা স্থাপন করেন ফকির চাঁদ বৈষ্ণব।
এখানেই সাধু ধ্যান-তপস্যা ও বৈষ্ণব ধর্ম প্রচার আরম্ভ করেন। প্রতি বছর দোল পূর্ণিমা, গঙ্গা স্নান ও নবান্ন উৎসব উপলক্ষে দেশ-বিদেশের হাজার হাজার ভক্ত সাধক সমবেত হন। সাধু ফকির চাঁদ বৈষ্ণবের মৃত্যুর পর নওপাড়ার জমিদার তারকেস্বর বাবু তাঁর (সাধুর) স্মরণে সমাধিটি পাকা করে দেন।
এ ছাড়াও ভক্তদের সুবিধার্থে ৬৮ বিঘা জমি ও সান বাঁধানো বিশাল দুটি পুকুর দান করেন। আশ্রম চত্ত্বরে দালান কোঠা নির্মানেও তিনি সহযোগিতা করেন। আশ্রমটির প্রবেশ পথে রয়েছে ময়ূর,বাঘ ও বিভিন্ন প্রাণির মূর্তি এবং লতা-পাতা কারুকার্য খচিত সুবিশাল ফটক।
প্রধান দ্বার প্রান্তে ডান পাশে রয়েছে ভক্ত সাধু ও সাধু মাতাদের আবাসন। বাম পাশে রয়েছে ৬ জন সাধুর সমাধি মন্দির। একটু সামনেই রয়েছে শ্রী ফকির চাঁদ বৈষ্ণবের চার কোনা প্রধান সমাধি স্তম্ভ। বর্গাকৃতির ৪০ ফুট সমাধি সৌধের রয়েছে আরেকটি ৩০ ফুট গৃহ। এর একটি দরজা ছাড়া কোন জানালা পর্যন্ত নেই।
মূল মন্দিরে শুধুমাত্র প্রধান সেবাইত প্রবেশ করেন। কাথিত আছে, মন্দিরের মধ্যে সাধু ফকির চাঁদ স্বশরীরে প্রবেশ করে ঐশ্বরিকভাবে স্বর্গ লাভ করেন। তাঁর শবদেহ দেখা যায় নি। পরিধেয় বস্ত্রাদি সংরক্ষণ করে সমাধি স্তম্ভ নির্মিত হয়েছে। গম্বুজ আকৃতির সমাধির উপরিভাগ গ্রিল দিয়ে ঘেরা রয়েছে।
ঘরের দেয়াল ও দরজায় বিভিন্ন প্রাণি, গাছ, লতা-পাতা খচিত কারুকার্য শোভা পাচ্ছে। সমাধির মাত্র পাঁচ গজ দূরে রয়েছে বিশাল আকৃতির এক কুয়ার একটি সিঁড়ি পথ রয়েছে পাশের রান্না ঘরের সাথে সংযুক্ত। এই সিঁড়ি পথে সাধুগণ স্নানে যেতেন এবং রান্নাসহ পানিয় জল সংগ্রহ করতেন। বর্তমানে কুয়ার পানি ব্যবহার অযোগ্য অবস্থায় রয়েছে। আশ্রম চত্ত্বরে রয়েছে ১৪১ জন ভক্ত সাধুর সমাধি।
স্থানীয় সুত্রে জানাযায়, লালপুর উপজেলার দুড়দুড়িয়া ইউনিয়নের পানসিপাড়া- রামকৃষ্ণপুর গ্রামে(৩২৫ বছর পূর্বে) শ্রী শ্রী ফকির চাঁদ বৈষ্ণব গোসাইজীর আশ্রম স্থাপিত হয়। আশ্রমটি ৩২ বিঘা জমির উপর অবস্থিত।
প্রতিষ্ঠালগ্ন থেকে দুই দিনব্যাপী নবান্ন উৎসব অনুষ্ঠিত হয়ে আসছে। এ অনুষ্ঠান উপলক্ষে দেশের বিভিন্ন অঞ্চল থেকে হাজার হাজার ভক্ত বৃন্দের আগমন ঘটে। দুই শতাব্দির স্মৃতিবাহী ফকির চাঁদ গোসাই আশ্রম দেশ-বিদেশ থেকে আসা দর্শনার্থীদের কোলাহলে মুখরিত আশ্রমটি পর্যটন কেন্দ্র হিসেবে গড়ে উঠেছে।
সংবাদ প্রেরক বিটিসি নিউজ এর লালপুর (নাটোরপ্রতিনিধি নাহিদ হাসান। #

Comments are closed, but trackbacks and pingbacks are open.