ঢাকা প্রতিনিধি: বাংলাদেশ বিনিয়োগ উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের (বিডা) নির্বাহী চেয়ারম্যান আশিক চৌধুরী বলেছেন, আগামী তিন বছরের মধ্যে চট্টগ্রাম বন্দরের অদূরে লালদিয়া কনটেইনার টার্মিনাল (এলসিটি) নির্মাণ সম্পন্ন হলে বৈদেশিক বিনিয়োগ বৃদ্ধি ও কনটেইনার হ্যান্ডলিং সক্ষমতা বাড়ানোর মাধ্যমে বিভিন্ন সুবিধা লাভ করবে বাংলাদেশ।
বুধবার (১২ নভেম্বর) বিকেল ৩টায় ফরেন সার্ভিস একাডেমিতে আয়োজিত প্রেস ব্রিফিংয়ে তিনি সুবিধা সম্পর্কিত বিস্তারিত তথ্য উপাত্ত উপস্থাপন করেন।
এলসিটি নির্মিত হলে বাংলাদেশ যে সুবিধাগুলো লাভ করবে তা নিম্নরূপ
১. বৃহৎ বৈদেশিক বিনিয়োগ (এফডিআই)
চুক্তি আওতায় ডেনমার্ক ভিত্তিক মায়ের্সক গ্রুপের মালিকানাধীন প্রতিষ্ঠান এপিএম টার্মিনালস পুরো মেয়াদকালে ৮০০ মিলিয়ন মার্কিন ডলারেরও বেশি বিনিয়োগ করবে, যা বাংলাদেশে এককভাবে সর্ববৃহৎ ইউরোপীয় ইক্যুইটি বিনিয়োগ হবে। এমন একটি বিশ্বমানের বিনিয়োগকারীর আগমন দেশের অন্যান্য খাতেও আকৃষ্ট করবে এফডিআই।
২. কনটেইনার হ্যান্ডলিং সক্ষমতা বৃদ্ধি
এলসিটি চালু হলে বন্দরটির কনটেইনার হ্যান্ডলিং সক্ষমতা বছরে আট লক্ষাধিক টিইইউ বাড়বে, যা বর্তমান সক্ষমতার তুলনায় প্রায় ৪৪ শতাংশ বেশি। টার্মিনালটি ২০৩০ সালের মধ্যে চালু হওয়ার প্রত্যাশা করা হচ্ছে।
৩. সরকার ও সিপিএ’র আয় বৃদ্ধি
প্রকল্পটি রাজস্ব ভাগাভাগি ভিত্তিতে পরিচালিত হবে, যার মাধ্যমে সিপিএ প্রতি কনটেইনারে নির্দিষ্ট ডলার-নির্ভর রাজস্ব পাবে। একই সঙ্গে কর, শুল্ক এবং সামুদ্রিক আনুষঙ্গিক সেবার মাধ্যমে সরকারের আয়ও বাড়বে।
৪. কর্মসংস্থান
এ প্রকল্পের নির্মাণ ও পরিচালনা পর্যায়ে ৫০০ থেকে ৭০০ জন সরাসরি কর্মসংস্থান এবং ট্রাকিং, স্টোরেজ, লজিস্টিকস ও স্থানীয় এসএমই খাতে কয়েক হাজার পরোক্ষ কর্মসংস্থান সৃষ্টি হবে।
৫. আন্তর্জাতিক মানের নিরাপত্তা ও কার্যপদ্ধতি
এপিএম টার্মিনালস বিশ্বমানের হেলথ, সেফটি, সিকিউরিটি ও এনভায়রনমেন্ট (এইচএসএসই) নীতিমালা প্রয়োগ করবে, যা দুর্ঘটনার হার কমিয়ে কর্মীদের কল্যাণ নিশ্চিত করবে।
৬. আধুনিক প্রযুক্তি স্থানান্তর
এপিএম উন্নত ডিজিটাল টার্মিনাল অপারেটিং সিস্টেম, এলইএএন পদ্ধতি ও ফ্লো প্রসেস ফ্রেমওয়ার্ক বাংলাদেশের বন্দর অবকাঠামোকে আধুনিক করবে এবং স্থানীয় প্রকৌশলী ও প্রযুক্তিবিদদের দক্ষতা বৃদ্ধি করবে।
৭. ব্যবসায়িক ব্যয় হ্রাস ও দ্রুত সরবরাহ
দ্রুত জাহাজ টার্ন-আরাউন্ড টাইম এবং কম কনটেইনার ডুয়েল টাইমের মাধ্যমে রপ্তানিকারকরা— বিশেষ করে পোশাক, কৃষি প্রক্রিয়াজাতকরণ ও হালকা প্রকৌশল খাতের উদ্যোক্তারা— সময়মতো পণ্য সরবরাহ করতে সক্ষম হবেন, যা আন্তর্জাতিক প্রতিযোগিতায় বাংলাদেশের অবস্থান আরও শক্তিশালী করবে।
৮. কর্মীদের দক্ষতা উন্নয়ন
এপিএম টার্মিনালসের নিজস্ব প্রশিক্ষণ কর্মসূচির মাধ্যমে বাংলাদেশের প্রকৌশলী, প্রযুক্তিবিদ ও ব্যবস্থাপকরা আন্তর্জাতিক মানের প্রশিক্ষণ পাবেন, যা দেশের সামগ্রিক লজিস্টিক খাতের দক্ষতা বাড়াবে।
৯. অভ্যন্তরীণ অর্থনৈতিক প্রবাহ বৃদ্ধি
বন্দরটির বার্ষিক ৮ লক্ষাধিক টিইইউ মালবাহী সক্ষমতা ঢাকা-চট্টগ্রাম ও অন্যান্য অর্থনৈতিক করিডোরে নতুন ইনল্যান্ড কনটেইনার ডিপো, কোল্ড চেইন ও শিল্পাঞ্চল স্থাপনে উৎসাহ দেবে।
১০. সবুজ ও জলবায়ু-সহনশীল বন্দর অবকাঠামো
জ্বালানি দক্ষ প্রযুক্তি ব্যবহার এবং জলবায়ু অভিযোজন উদ্যোগের মাধ্যমে বন্দরটির কার্বন নির্গমন কমবে, যা বাংলাদেশের প্যারিস চুক্তি (এনডিসি) লক্ষ্যমাত্রা পূরণে সহায়ক হবে।
১১. বাংলাদেশের পিপিপি খাতের জন্য দৃষ্টান্ত স্থাপন
একটি বৈশ্বিক মানের দীর্ঘমেয়াদি কনসেশন চুক্তি বাংলাদেশের পিপিপি সক্ষমতা ও বিশ্বাসযোগ্যতা বাড়াবে, যা ভবিষ্যতে বিদ্যুৎ, পরিবহন ও সামাজিক অবকাঠামো খাতে নতুন বৈদেশিক বিনিয়োগ আকৃষ্ট করবে। এটি শুধু একটি অবকাঠামো বিনিয়োগ নয়, বরং বাংলাদেশের লজিস্টিকস খাতকে ‘ফিউচার-রেডি’ করে তুলবে, যা রপ্তানি, কর্মসংস্থান ও বৈদেশিক বিনিয়োগের ক্ষেত্রে নতুন যুগের সূচনা করবে।
সংবাদ প্রেরক বিটিসি নিউজ এর ঢাকা প্রতিনিধি মো. আকরাম হোসেন। #

















