লকডাউন কেড়ে নিলো নাটোরের ড্রাগন ফলচাষিদের মুখের হাসি!


নাটোর প্রতিনিধি: ড্রাগন ফলের রাজধানী খ্যাত উত্তরের সীমান্তবর্তি নাটোর জেলায় উৎপাদিত সুমিষ্ট ড্রাগন বর্তমানে দেশের গন্ডি পেরিয়ে বাইরের দেশগুলোতেও রপ্তানি হচ্ছে। তাই ভরা মৌসুমে এই ড্রাগনকে নিয়ে জেলার শতাধিক ড্রাগন চাষী প্রতিদিনই স্বপ্ন দেখেন। কিন্তু মহামারি করোনা ভাইরাস গত বছরের ন্যায় চলতি বছরেও ড্রাগনচাষিদের স্বপ্ন ভেঙ্গে তছনছ করে দিয়েছে। বর্তমানে করোনা ভাইরাস প্রতিরোধে সরকারের জারি করা লকডাউনে বাগানের ড্রাগন বিক্রি না হওয়ায় মাথায় হাত উঠেছে ড্রাগন চাষীদের।
চাষীরা জানান,ড্রাগন ফল সংগ্রহের এই ভরা মৌসুমে শহর এলাকায় কঠোর বিধিনিষেধ আরোপ করা এবং পরিবহন সংকটের কারণে বেচাকেনা ও দাম দুটোই ব্যাপকভাবে কমেছে। ৫০০ টাকা কেজির ড্রাগন ফল এখন মাত্র ১০০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হচ্ছে। যে কারণে নাটোরের ড্রাগন ফলচাষিরা বড় লোকসানের মুখে পড়েছেন। সব মিলিয়ে লোকসানের পরিমাণ প্রায় ২৬ কোটি টাকা হতে পারে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে।
নাটোর জেলা কৃষি সম্প্রসারণ কার্যালয় জানান, চলতি বছরে এই জেলার ৩০০ বিঘা (৪০ হেক্টর) জমিতে ড্রাগন ফলের চাষ হয়েছে। এতে ৬৪০ মেট্রিক টন ফল উৎপাদন হওয়ার কথা। ৫০০ টাকা কেজি দরে হিসাব করলে ওই ড্রাগন ফলের দাম দাঁড়ায় ৩২ কোটি টাকা। অথচ ফলচাষিরা এখন বিভিন্ন আড়তে মাত্র ১০০ টাকা কেজি দরে ড্রাগন বিক্রি করতে বাধ্য হচ্ছেন। ১০০ টাকা কেজি দরে বিক্রি করলেই ক্রেতা মিলছে না। এই দরে সব ফল বিক্রি হলে তাতে চাষিদের ক্ষতি হবে ২৫ কোটি ৬০ লাখ টাকার মতো। ফলে পুরোনো ফলচাষিদের পাশাপাশি নতুনরাও পুঁজি হারানোর আশাংকা রয়েছে।
নাটোর জেলায় জুন মাসের মাঝামাঝি সময়ে বাগান থেকে ড্রাগন ফল সংগ্রহ শুরুকরেন চাষীরা। কিন্তু এঈ সময়টাতেই দেশে কঠোর লকডাউন বা বিধিনিষেধ বলবৎ হয়। লকডাউনের কারণে শহরগুলোয় ফলের দোকানে বিক্রি কমে গেছে। বিধিনিষেধের কারণে রাজধানীর সঙ্গে নাটোর ও রাজশাহীর সরাসরি বাস ও ট্রেন চলাচল বন্ধ রয়েছে। এ কারণে দেশের কোথাও ড্রাগন ফল পাঠানো যাচ্ছে না। আবার সব চাষীর পক্ষে ট্রাক ভাড়া করে ড্রাগন পাঠানোও কঠিন হয়ে দাঁড়িয়েছে
নাটোরের সবচেয়ে বড় ড্রাগনচাষি গোলাম নবী চলতি বছর নাটোর সদর উপজেলার মাঝদিঘা গ্রামে ৩০ বিঘা জমিতে ড্রাগনের চাষ করেছেন। যেখানে রয়েছে প্রায় ১৪ হাজার ড্রাগন গাছ। গোলাম নবী জানান, আমাদের উৎপাদিত ফল ঢাকা, চট্টগ্রামসহ দেশের বড় বড় শহরেরর আড়তগুলোতে বিক্রি করে থাকেন। কিন্তু চলাচলে বিধিনিষেধ থাকায় ভরা মৌসুমে শহরের আড়তদারেরা ড্রাগন ফল নিতে চাচ্ছেন না। তাঁদের দাবি, তাঁরা খুচরা ক্রেতা পাচ্ছেন না।
গোলাম নবী আরও বিটিসি নিউজকে বলেন, বিক্রি করতে না পারলে কয়েক দিনের মধ্যেই ড্রাগন ফল পচে কিংবা শুকিয়ে যায়। তা ছাড়া নাটোরে ড্রাগন সংরক্ষণের মতো কোনো কোল্ডস্টোরেজ বা হিমাগার নেই। ফলে আড়তদারেরা যে দর বলছেন তাতেই ফল বিক্রি করতে বাধ্য হচ্ছে। অনেক সময় প্রতি কেজি ড্রাগন ১০০ টাকারও কম দরে বিক্রি করতে হচ্ছে। অথচ প্রতি কেজি ড্রাগন উৎপাদনে খরচ ২০০ টাকারও বেশি।
আহম্মদপুর এলাকার ড্রাগন ফলচাষি মো. সেলিম রেজা জানান, তিনি ১৫ বছর ধরে ড্রাগন ফলের আবাদ করছেন। কিন্তু ফল বিক্রি নিয়ে এবারের মতো কখনো এত মুশকিলে পড়েননি। ঢাকার সঙ্গে সরাসরি বাস-ট্রেন বন্ধ থাকায় ব্যবসায়ীরা ঠিকমত ফল পাঠাতে পারছেন না। এতে দাম অস্বাভাবিক কমে গেছে। ৫০০ টাকা কেজির ফল এখন ১০০ টাকা বা তারও কম দরে বিক্রি করতে হচ্ছে। তিনি বলেন, ড্রাগন পাকা শুরু করলে গাছে রাখা যায় না। পচে নষ্ট হয়ে যায়।
সেলিম রেজা আরও বিটিসি নিউজকে বলেন, এ অবস্থায় সরকার ড্রাগন ফলচাষিদের ভর্তুকি না দিলে অপ্রচলিত ও দামি এই ফলের আবাদ ছেড়ে দিতে বাধ্য হবেন। তখন আগের মতো বিদেশ থেকে এই ফল আমদানি করতে হবে।
জেলা কৃষি সম্প্রসারণ কার্যালয়ের উপ-পরিচালক সুব্রত কুমার বিটিসি নিউজকে বলেন, ড্রাগন অপ্রচলিত ও দামি ফল হওয়ায় এর অধিকাংশ ক্রেতা শহরের। বিধিনিষেধের কঠোরতাও মূলত শহরকেন্দ্রিক। ফলে ড্রাগনচাষিরা চরম ক্ষতির মুখে পড়েছেন। তাই বিষয়টি সরকারের উচ্চপর্যায়ে লিখিতভাবে জানানো হবে।
সংবাদ প্রেরক বিটিসি নিউজ এর নাটোর প্রতিনিধি খান মামুন। #

Comments are closed, but trackbacks and pingbacks are open.